রাত পোহালেই ঈদ, প্রস্তুত ভাসমান ঈদগাহ মাঠ

গত ঈদুল ফিতরেও নৌকায় ঈদের নামাজ আদায় করেছিল চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার তিন গ্রামের মানুষ। তবে এবার দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হয়েছে তাদের। এ বছর ভাসমান ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করবেন উল্লাপাড়ার বড়পাঙ্গাসী ইউনিয়নের নরসিংহপাড়া, শুকলাই ও শুকলহাট গ্রামের মুসল্লিরা।

২০১৮ সালে এটি পরিপূর্ণভাবে নির্মিত না হলেও স্থানীয় ৩ গ্রামের মানুষ প্রথমবারের দ্বিতল পাকা ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করবেন। এবছরই পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিপূর্ণভাবে ভাসমান ঈদগাহ মাঠের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।

ফলে চারদিকে বিস্তৃত পানির উপরে নান্দনিক ওই দ্বিতল ঈদগাহ মাঠটি এবার এ অঞ্চলের মানুষের কাছে আরো চমক সৃষ্টি করেছে। আগামী কাল সোমবার (১২ আগস্ট) নরসিংহপাড়া, শুকলহাট ও শুকলাই গ্রামের মানুষ ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করবেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,নরসিংহপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট লেখক,কলামিষ্ট ও সাংবাদিক মোস্তফা জাহাঙ্গীর ২০১২ সালে চলনবিল বেষ্টিত এই স্থানে দ্বিতল ঈদগাহ মাঠ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন।প্রাথমিক ভাবে একটি হিসাব খুলে স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতায় সেখানে আরসিসি কলামের উপরে ঈদগাহ মাঠ তৈরির বিষয়টি অবহিত করা হয়। এ উদ্যোগে অনেক সহৃদয়বান ও দানশীল ব্যক্তিরা তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।

বছর দেড়কের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ টাকা সংগৃহিত হয় ব্যতিক্রমি ঈদগাহ মাঠ নির্মাণের জন্য। মোস্তফা জাহাঙ্গীর জানান,চলনবিলের এই অংশে প্রতিবছর জুন মাস থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বর্ষার পানিতে ভাসমান থাকে। এ অবস্থায় বর্ষা মৌসুমে ঈদের নামাজ পড়া নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় । এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আমরা দ্বিতল ঈদগাহ মাঠ নির্মাণ করার উদ্দ্যোগ নেই।

মাত্র ১৩ শতক জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত ঈদগাহ মাঠে উল্লিখিত ৩টি গ্রামের মানুষ ঈদের বর্ষা মৌসুমে ঈদগাহ মাঠের পানির উপর সাড়ি সাড়ি নৌকা বেঁধে তৈরি করা নৌকার ঈদগাহ মাঠে নামাজ পড়তেন । এ দৃশ্য তখন স্থানীয় বহু লোকজন নৌকা নিয়ে এসে উপভোগ করতেন। পরে গ্রামের লোকজনের সুবিধার্থে এখানে দ্বিতল ঈদগাহ মাঠ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

২০১৫ সালে ঈদগাহ মাঠের সাথে আরো ৯ শতক জায়গা ক্রয় করা হয়। এরপর ১০০ বর্গফুট আয়তনের এই নয়া দ্বিতল ঈদগাহ মাঠ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূল গেট সহ ১০ ফুট উচ্চতার মোট ৪৪টি আরসিসি কলামে উপর ছাদ ঢালাই দিয়ে ঈদগাহ মাঠ তৈরি করা হয় ।

এ কাজে দেশ ও দেশের বাইরের হৃদয়বান ব্যক্তিদের সাহায্য সহযোগিতায় চলতি বছরের জুন মাসে প্রায় ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এই দ্বিতল ব্যতিক্রমি ঈদগাহ মাঠ নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হয়। তিনি আরো জানান,তাদের এই মহতি উদ্যোগে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন এলাকার বাসিন্দা ঈদগাহ মাঠ কমিটির সভাপতি মোঃ আফজাল হোসেন, সম্পাদক আজিজুল হক, সদস্য আব্দুর রশিদসহ তিন গ্রামের মানুষ।

রোববার (১১ আগস্ট) পাঙ্গাসী ইউনিয়নের নবনির্মিত এই নান্দনিক দ্বিতল ঈদগাহ মাঠের ছবি তুলতে গেলে কথা হয় আফজাল হোসেন, আজিজুল হক,আব্দুর রশিদ ও বকুল হোসেনের সঙ্গে। তারা জানান,উল্লিখিত ৩ গ্রামের মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করতে এখানে অনেক কষ্ট করতেন।

অত্র এলাকার মানুষ এখন বর্ষার দিনেও নৌকা নিয়ে এসে নির্বিঘ্নে এই পাকা ঈদগাহ মাঠে নামাজ আদায় করতে পারবেন। তিন গ্রামের লোকজন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকেরাও এখানে আনন্দের সাথে নামাজ পড়তে আসবেন।

তাছাড়া এই দ্বিতল ঈদগাহ মাঠে মৃত ব্যক্তির জানাজা ও ইসলামী জালছার আয়োজন মতো বড় আয়োজন করা যাবে। চলনবিলের বুকে নির্মিত এই ব্যতিক্রমী দ্বিতল ঈদগাহ মাঠটিকে নজর কারছেন দর্শনার্থীদের।

বার্তা বাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর