অবহেলিত বেদে পল্লী ও হিজড়া সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে ডিআইজি হাবিবুর রহমান

বিপ্লবী হিসেবে সারা বিশ্বে মার্কস-এঙ্গেলস, লেনিন, চে-গুয়েভারা প্রমুখের কথা আমরা সকলেই জানি। এদের ধ্যান-ধারণা পাঠ্যপুস্তকে বহুল পঠিত এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডে বিশ্বের অনেক দেশে বাস্তবেও প্রয়োগ হচ্ছে। কিন্তু আজ এমন একজন মানুষের কথা বলতে যাচ্ছি, যিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও নীরবে একটি পশ্চাদপদ এবং অনগ্রসর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভিতরে বাস্তবে কাজ করে তাদের সকলের চিন্তা-ভাবনায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি হলেন সদ্য পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (প্রশাসন) থেকে গত ২২ মে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি পদে যোগদান কর ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ জনাব হাবিবুর রহমান, বিপিএম(বার), পিপিএম।

গোপালগঞ্জের সদর থানার চন্দ্র দীঘলিয়া গ্রামে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা এই মানুষটির। স্কুল ও কলেজ জীবন শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন। ছাত্রজীবনেই ইচ্ছা ছিলো সৎভাবে দেশের উন্নয়নে সম্পৃক্ত থাকবেন। এই লক্ষ্য এবং আশা নিয়ে ১৭তম বিসিএস এ সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে এএসপি পদে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন।

এরপর সাফল্যের সাথে নিজ পদে থেকে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে অতিরিক্ত ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (সংস্থাপন) পদে থেকে ২৪ জুন, ২০১৮ ইং তারিখে ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ এবং গত ২২ মে, ২০১৯ তারিখে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি পদে উন্নীত হন।

২০১৪ সালে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার পদে যোগ দেবার পরেই সাভার বেদে পল্লীর মানুষদের দুঃখ-দুর্দশা দেখে এই অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য কিছু করার কথা ভাবেন। এই সময়ে বেদে পল্লী মাদকের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিগণিত ছিলো। এ কথা তৎকালীন পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমানের গোচরীভূত হয়। এই বেদে পল্লীতে মাদক সেবন ও বিক্রীর কথা জেনে এটা বন্ধ করার পাশাপাশি এদেরকে পুনর্বাসনেরও ব্যবস্থা কিভাবে করা যায় ভাবেন তিনি। এই মাদক নির্মূল করার জন্য তিনি নিজের ইচ্ছায় সাভার মডেল থানায় মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ডেকে আনেন একদিন।

এরপর এখানে বসেই খোলাখুলি এক আলোচনা সভা করেন বেদে পল্লীর তৎকালীন মাদকসেবী এবং বিক্রেতাদেরকে নিয়ে। বেদে পল্লীর ৩০ জন মাতব্বরও ছিলেন ঐ আলোচনা সভায়। আলোচনা করে যারা মাদকের ব্যবসা এবং সেবন করেন তাদেরকে শাস্তির ব্যবস্থা না করে হাবিবুর রহমান এদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। তার মনে প্রশ্ন জাগে, এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যেখানে অভাব-হতাশা সর্বক্ষণ লেগে আছে, তারা কেন মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকবে? এদের মূল সমস্যাটা কোথায়?

তখন আগত বেদে পল্লীর যুবকেরা তাকে জানায়, এই পল্লীর মানুষ শিক্ষা-দীক্ষায় অনগ্রসর, এখানে নেই ভালোভাবে বসবাস করার মতো স্থান, শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় স্কুলের ব্যবস্থাও নাই, কর্মসংস্থানেরও নেই তেমন কোনো ব্যবস্থা। টাকা আয়ের জন্যই তাই এই পল্লীর পুরুষ এবং ক্ষেত্র বিশেষে নারীরাও বিভিন্ন দিকে ‘ডাইভার্ট’ হয়ে মাদক সহ অপরাধ সংশ্লিষ্ট কাজে বাধ্য হয়ে জড়িয়ে পড়ে। শেষে একটা পর্যায়ে নিজেরাও হতাশার গ্লানিতে ভুগে ভুগে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। মোটকথা, এই সমগ্র অনগ্রসর বেদে পল্লীটাই এক অন্ধকার জগতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে।

বেদে পল্লীর মেয়েরা তখন সাপের ঝুড়ি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতো, এরা বিভিন্ন ধরণের তুকতাক কর্মকান্ড তথা প্রতারণায় জড়িয়ে পড়তো- এই ব্যাপারটি তৎকালীন সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পুলিশ ঢাকা জেলা জনাব হাবিবুর রহমানের কাছে খুব কষ্টকর লাগায় তিনি জানালেন, এই পল্লীর মেয়েদেরকে আত্মকর্মসংস্থানের উপযোগী করে গড়ে তুলতে তিনি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। সেই অনুযায়ী বেদে পল্লীর ১০৫ জন মেয়েকে যুব উন্নয়ন একাডেমির মাধ্যমে সেলাইয়ের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেন নিজ উদ্যোগে! শুধু তাই না, প্রত্যেককে সেলাই মেশিনও প্রদান করেন তিনি।

কিন্তু এখানে একটা ব্যাপার ছিলো, সেটা হলো প্রশিক্ষণ নেবার পরে এবং সেলাই মেশিন পাবার পরেও যদি দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততার কারণে মেয়েরা মেশিনগুলি বিক্রী করে দেয়, কিংবা আয়ের পথ না হওয়ায় হতাশায় ভোগে, এজন্যই এই এলাকায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘উত্তরণ ফ্যাশন’ নামের প্রতিষ্ঠানটির! এটা একটা ফ্যাক্টরি। যেখানে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মেয়েরা কাজ করে এবং বিনিময়ে তারা পর্যাপ্ত অর্থও লাভ করে। বাইরে থেকে ‘সাব-কন্ট্রাক্টের’ কাজ নিয়ে আসা হয় এবং সেভাবেই এই ফ্যাক্টরিটি চালু থাকে। এভাবে কেবল প্রশিক্ষণ দিয়েই তিনি বসে থাকেন নাই; প্রশিক্ষিত মানব সম্পদের সুষ্ঠু প্রয়োগের জন্যও কাজ করেছিলেন। এর ফলে এক সময়ের প্রতারণা করায় ব্যস্ত বেদে পল্লীর মেয়েরা নিজেদের এলাকায় বসেই প্রতি মাসে ৮/১০ হাজার টাকা আয় করতে সক্ষম হয়েছে।

উত্তরণ ফ্যাশন তো তৈরী হলো। শুরু হলো উৎপাদনের কাজ। কিন্তু একটা সমস্যা দেখা দিলো, তৈরীকৃত পণ্য বিক্রী করা হবে কোথায়? অনেক ভাবলেন জনাব হাবিবুর রহমান। শেষে কয়েকটি ‘আউটলেট’ তথা ‘শো-রুম’ করে দিলেন ‘উত্তরণ’ নাম দিয়ে। আশুলিয়ার জামগড়ায় ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনেই একটি, আর দু’টি সাভার সিটি সেন্টারের সামনে। আর উত্তরণ ফ্যাশন নামের ফ্যাক্টরিটি সাভার বেদে পল্লী এলাকায় অমরপুরে স্থাপন করা হয়েছে। একটি পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীকে তিনি নিজের চিন্তা ভাবনার ইতিবাচক দিকের সাথে সমন্বয় করে একদম ‘আপগ্রেড’ একটি জনগোষ্ঠীতে রুপান্তরে সক্ষম হয়েছেন। এটা কি বিপ্লব নয়?

পাশাপাশি বেদে পল্লীর বেকার যুবকদেরকে নিয়েও ভেবেছেন তিনি। তিনি চিন্তা করলেন, মেয়েদের তো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলো, এখন যদি যুবকদের জন্য কিছু না করা যায়, তবে এদের কারণে একসময় এই মেয়েরাও আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। আর বেকার থাকাবস্থায় ছেলেরা বখাটে হয়ে যাচ্ছিলো, বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজেও জড়াচ্ছিলো নিজেদেরকে। তাই ওদের জন্যও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা না গেলে, সম্পূর্ব পল্লীর চেহারাটা পাল্টানো যাবে না।

যুবকদের ভিতরে লেখাপড়া একেবারে কম করেছে এমন (আন্ডার-ম্যাট্রিক) যুবকদের ভিতরে ৩৬ জন কে তিনি ‘ড্রাইভিং’ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তাদের ‘ড্রাইভিং লাইসেন্সের”ও ব্যবস্থা করেন। শুধু তাই নয়, স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এদেরকে বিভিন্ন জায়গায় চাকুরির ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন।

আর যারা এসএসসি পাস করেছে, এমন ১০/১২ জনকে তিনি পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকুরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। পুলিশ হেডকোয়ার্টারে কম্পিউটার অপারেটর পদেও কয়েকজনকে চাকুরি দিয়েছেন। ‘একমি কোম্পানি’তে ফার্মাসিস্ট হিসেবেও বেদে পল্লীর একজনের চাকুরির ব্যবস্থা করেছেন। এভাবে যার যেমন যোগ্যতা সেই অনুযায়ী তাদের সর্বোত্তম নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি সর্বোচ্চ করেছেন। মোটকথা, বেদে পল্লীর কেউ তাঁর কাছে গেলে তিনি যে কোনো একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেই দেন।

 

৪০/৫০ জন যুবককে তিনি ‘গার্মেন্টস জবের’ জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকেও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এদের অনেকেই সাভার ইপিজেডে এখন ভালো ফ্যাক্টরিতে চাকুরি করছে। এসব কিছু শুধুমাত্র হাবিবুর রহমানের সদিচ্ছায় সম্ভবপর হয়েছে।

সাভার বেদে পল্লীতে এখন প্রায় ২০ হাজারের মতো মানুষ; কিন্তু সেখানে নেই শিক্ষা দানের মতো ভালো একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের কাজটিও বর্তমান ডি আই জি হাবিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় শুরু হয়েছে। এতে করে বর্তমানে বেদে পল্লীর মানুষ নিজের সন্তানদেরকে বিদ্যালয়মুখী করেছে। আগে যেটা তাদের চিন্তা-ভাবনায় ছিলো না। কারণ তখন ভাবতো, ‘লেখাপড়া করে কি হবে, আমাদের সন্তানেরা কি আর চাকুরি পাবে?’ হাবিবুর রহমানের প্রচেষ্টায় এসএসসি পাস করেই এখন বেদে পল্লীর ছেলেমেয়েরা যোগ্যতানুযায়ী সরকারি চাকুরি পাচ্ছে। একারণেই এই পল্লীর মানুষের চিন্তা-ভাবনায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। সমাজে বিপ্লব ঠিক এভাবেই ত্বরান্বিত হয়, যেভাবে একজন হাবিবুর রহমান বাস্তবে এই বেদে পল্লীর মানুষদের ভিতরে কাজের দ্বারা বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছেন। এখন এই পল্লীর প্রতিটি পরিবারের ছেলেমেয়েরা ৫ বছর বয়স হলেই স্কুলে যায়। বর্তমানে এটা এক প্রকার বাধ্যতামূলকই হয়েছে এই পল্লীতে।

শিক্ষা আলো। আর যেখানে শিক্ষার অভাব, স্বভাবতই সেখানে অন্ধকার গ্রাস করে। বেদে পল্লীতে বাল্য বিবাহের খুব প্রচলন ছিলো সেই আগে থেকেই। এক ভয়াবহ অবস্থার ভিতর দিয়ে এই পল্লীর বালিকারা বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্বেই বৈবাহিক জীবনে প্রবেশ করতে বাধ্য হতো। ১২/১৪ বছরের মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেতো। এই অব্যবস্থাকে কিভাবে রোধ করা যায় ভাবলেন তিনি। শেষে একটা ঘোষণা দিলেন যে, ১৮ বছরের পরে যে কন্যার বিয়ে দেয়া হবে, তাদেরকে ১ লক্ষ টাকা করে দেয়া হবে বিয়ের খরচ বাবদ! এমন অসাধারণ এবং বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের কারণে বেদে পল্লীতে বাল্য বিবাহ বলতে গেলে একেবারেই হ্রাস পেয়ে গেলো। তিনি নিজে থেকে তিনটি বিয়ে ধুমধাম করে সম্পন্ন করলেন যাদের বয়স ১৮ পার হয়েছিলো।

আরও একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। বেদে পল্লীতে থাকার কোনো নির্দিষ্ট জমি ছিলো না। নৌকায় কিংবা প্লাস্টিক তথা পলিথিনের তাবুতে বেদে পল্লীর মানুষ কোনোভাবে বসবাস করে আসছিলো। জনাব হাবিবুর রহমান, এ অবস্থা থেকে বসবাসের জন্য আরও একটু ভালো অবস্থায় বেদে পল্লীর মানূষদেরকে নিয়ে যেতে একটি গুচ্ছগ্রাম করে দিলেন! ৩.৫০ একর খাস জমি গুচ্ছগ্রামের নামে বেদে পল্লীর লোকদের জন্য একেবারে বন্দোবস্ত করে দিলেন। সরকারি বরাদ্দের জমিতে ঘর তুলে দেবার কাজও বর্তমানে চলছে। আর বেদে পল্লীর লোকেরা জানিয়েছে, এই গুচ্ছগ্রামের নাম তারা সকলে মিলে ‘হাবিব নগর’ দিতে বদ্ধপরিকর।

একটি ঈদগা মাঠেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি। আগে নামাজের জন্য কোনো জায়গা ছিলো না, তাই বেদে পল্লীর মুসলমানেরা যাতে সুন্দরভাবে ঈদের জামাত করতে পারে, সেই লক্ষ্যেই এই ময়দানটি নির্মাণ করে দিয়েছেন। অত্যন্ত মনোরম একটি ঈদ্গা মাঠের অধিকারি এখন সাভার বেদে পল্লীর মানুষ। উল্লেখ্য, বেদে পল্লীর মানুষেরা নিজেরা নিজেদের ভিতর থেকে অল্প অল্প করে টাকা সংগ্রহ করে একটা মসজিদের কাজ শুরু করেছিলো। কোনোরকম ভাবে নিচ তলার একটা ফ্লোরের কাজ সবাই মিলে সম্পন্ন করেছিলো। হাবিবুর রহমান সুন্দর একটি ডিজাইনের দ্বারা এই মসজিদটিকে দ্বিতল ভবনে রুপান্তরিত করে দিয়েছেন। এলাকাবাসী এই মসজিদের নামকরণ করেছে ‘হাবিবিয়া জামে মসজিদ’।

বেদে পল্লীর মহল্লার ভিতরে কিছু ছোট ছোট রাস্তা আছে, যেগুলি একেবারেই পায়ে হাঁটারও অনুপযোগী ছিলো, এমন প্রায় ১৪টা ছোট বড় রাস্তা করে দিয়েছেন তিনি। বেদে পল্লীর বয়স্কদের সকলের জন্য বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন।

‘উত্তরণ ফাউন্ডেশন’ নামের একটি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানও তিনি। এই ফাউন্ডেশনের দ্বারা অবহেলিত হিজড়া সম্প্রদায়কেও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করায় হাবিবুর রহমানের ভূমিকা এবং অবদান উল্লেখ না করলেই নয়। হিজড়া সম্প্রদায় বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা বৃত্তি সহ নানান অপরাধমূলক কাজে জড়িত হচ্ছে দেখে তিনি এদেরকে নিয়ে কিছু করার কথা ভাবলেন। শেষে এদের জন্য ৪টি ‘বিউটি পার্লার’ করে দিলেন উত্তরণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে। সেখানে হিজড়াদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করলেন। আশুলিয়ার পল্লী বিদ্যুত এলাকায় ১টি, সাভারের হেমায়েতপুরে ১টি এবং ঢাকার বাইরে নেত্রকোনায় এবং ব্রাম্মণবাড়িয়ায় ১টি করে- এই মোট ৪টি বিউটি পার্লার করে দিয়েছেন তিনি।

প্রতিটি পার্বণে যেমন পহেলা বৈশাখ এবং ঈদের সময়ে বেদে পল্লীর সবাইকে এবং হিজড়াদের সকলকে তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপহার দেন নিয়মিত। শীতের সময়ে সকলের জন্য কম্বলের ব্যবস্থাও করেন। হিজড়া সম্প্রদায়ের জন্য ঢাকার উত্তরাতে একটি পোষাক কারখানাও করে দিয়েছেন তিনি! একই সাথে ঐ কারখানার জন্য একটি ‘আউটলেটের’ ব্যবস্থাও করেছেন।

জনাব হাবিবুর রহমানের এই অসামান্য প্রয়াসের জন্যই আজ অবহেলিত হিজড়া সম্প্রদায় সমাজে স্বাভাবিক ভাবে কাজ করে ‘মানুষ’ হিসেবে পরিগণিত হবার কয়েক ধাপ পার করতে সক্ষম হয়েছে। একজন উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তার মানবতাবাদী ধ্যান-ধারণা এবং হৃদয়ের গহীন ডোরে লুক্কায়িত ভালোবাসার জন্যই এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।

বার্তাবাজার/এসআর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর