গোটা কাশ্মীর যেন একটা ‘কবর’

প্রায় সাত দশক পর মোদি সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করেছেন।এতে চরম ক্ষতি হয়েছে জম্ম ও কাশ্মীরের।এ রায় ঘোষণায় ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা যখন আনন্দে ভাসছেন তখন অন্ধকারে নিজ্জিত গোটা ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীর। ইন্টারনেট ও টেলিফোনসহ সকল যখন ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় জানা না যাচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের প্রতিক্রিয়া। তারা যে রাস্তায় বেরিয়ে মোদি সরকারের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করবে তারও কোনো উপায় নেই।

কেননা সোমবার সংসদে এ ঘোষণা দেয়ার আগেই মোদি সরকার জম্মু ও কশ্মীরে ১৪৪ ধারা জারি করে লোকজনকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই উপত্যকার রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, অফিস আদালত, ব্যাঙ্ক, পেট্রল পাম্প জনশূন্য। অবশ্য সড়ক জুড়ে যানবাহন ও পথচারীরা না থাকলেও খাকি পোশাকের লোকজন বন্দুক হাতে সতর্কতার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে। সেনাদের সঙ্গে দু একটা কুকুরও নজরে এসেছে, তবে কোনো মানুষ চোখে পড়েনি।

ভারত শাসিত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের বিবিসি সংবাদদাতা আমির পীরজাদা সোমবার দিল্লির প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, ‘রাজ্যের অন্যান্য অংশে কী হচ্ছে তা কেউ জানে না- আমরা কারও সঙ্গে কথাও বলতে পারছি না। মানুষ ভীষণ চিন্তিত – তারাও জানে না আসলে এখন কী হচ্ছে এবং কী হতে যাচ্ছে।’

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে রাজ্যের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট সেবা ও মোবাইল সংযোগও। শোনা যায়, জম্মু-কাশ্মীরে নাকি কোনো চিঠি পর্যন্ত পাঠানো যাচ্ছে না, কাশ্মীরি জনতার প্রতি এতটাই সদয় মোদি সরকার!

রোববার রাতেই গৃহবন্দি করা হয়েছিলো সেখানকার প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের। সোমবার গ্রেফতার করা হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ও মেহবুবা মুফতিকে।

রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, মেহবুবাকে রাখা হয়েছে শ্রীনগরের বাইরে একটি গেস্ট হাউসে। ওমর ও মেহবুবা ছাড়াও গ্রেফতার হয়েছেন কাশ্মীর পিপিলস কন্ফারেন্স নেতা সাজ্জাদ লোন ও ইমরান আনসারি। কেবল তারাই নন, গৃহবন্দি রয়েছেন রাজ্যের বেশিরভাগ নেতাই। কংগ্রেস নেতা উসমান মজিদ, প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া অনন্তনাগের সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামিকে রবিবার রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। হুরিয়ত নেতাদের বাড়িতে বাড়িতেও কড়া নজরদারি।তাই ৩৭০ ধারা বিলোপ নিয়ে তাদের কোনও মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না।

সোমবার ভোর থেকেই উপত্যকায় মোবাইল, ইন্টারনেট, কেবল টিভির সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। ফলে রাজ্য ভাগ, রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের খবর গোটা ভারতবাসী জেনে গেলেও কাশ্মীরের মানুষের জেনেছেন অনেক পরে। কিন্তু এরপরও তাদের কোনো খবর বা প্রতিক্রিয়া জানতে পারছেন ভারতের মেইনস্ট্রিম সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা।

এ নিয়ে ভারতের এক সংবাদ মাধ্যম আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘বিজেপির সদস্যরা রাজ্যসভায় গলা উঁচিয়ে বলছেন, কাশ্মীরকে এত দিনে সত্যি সত্যি ‘হিন্দুস্তান’-এর অন্তর্ভুক্ত করা হল। কিন্তু কেমন আছেন কাশ্মীরের বাসিন্দারা, এখনও তার কোনো খবরই পাওয়া গেল না!’

কেবল ভারত নয়, কাশ্মীর এখন গোটা বিশ্বের কাছ থেকেই বিচ্ছিন্ন। গোটা উপত্যকা জুড়ে এখন কেবল কবরের নিস্তব্ধতা।

সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ঘোষণার পর অতিরিক্ত সেনাও মোতায়েন করা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা কখন ঠিক হবে, সেবিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়নি।

বার্তাবাজার/এএস

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর