৪ বছর গর্তে থাকা কাদেরকে উদ্ধার করলো পুলিশ

এক সময় কৃষিকাজ করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেশ ভালোভাবেই চলছিলেন আব্দুল কাদের মোড়ল। এরপর হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেন। তার এমন আচরণে পরিবারের বাকি সদস্যরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তাকে নিয়ে। ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন কাদের।

এভাবেই দশ বছর ধরে মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে চলতে থাকে তার জীবন। বিভিন্ন ডাক্তার দেখিয়েও খুব বেশি সুফল মেলেনি। উশৃঙ্খল আচরণ আর অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ করে তুলতো পরিবারসহ এলাকাবাসীকে।

এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে পরিবারের লোকজন বাড়ির পাশে এক গর্তে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতো। গত ৪ বছর ধরে সেখানেই ঝড়, বৃষ্টি, রোদের মাঝে থাকতে হতো তাকে।

আব্দুল কাদেরের বয়স এখন ৬০ বছর। তিনি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের শাহজাতপুর গ্রামের শওকত আলী মোড়লের ছেলে। আব্দুল কাদের বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় চলে যেতে শুরু করে। হারিয়ে যেত মাঝে মধ্যে।

খোঁজাখুঁজি করে ফিরিয়ে আনা হতো তাকে। এরপর বাধ্য হয়েই পরিবারের সদস্যরা তাকে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে শুরু করে। কাদেরের স্ত্রী জুলেখা বেগম জানান, বাড়িতে গালিগালাজ ও ভাঙচুর করার কারণে বাড়ির পাশে বাগানে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল।

খুলনা ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন ডাক্তার দেখালেও সুস্থ হননি তিনি। দশ বছর আগে এমন ঘটনার শুরু হয়। এরপর ডাক্তার দেখালে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন কাদের। তবে স্থায়ী সুস্থ হননি।

তিনি আরও জানান, গত তিন বছর আগে পাগলামির মাত্রা বহুগুন বেড়ে যায়। বিভিন্ন মানুষকে মারধর করাসহ বিভিন্নস্থানে চলে যেতেন তিনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে ফিরিয়ে আনতে হতো। নিরুপায় হয়ে পায়ে শিকল দিয়ে রাখা শুরু করি।

বাড়িতে ভাঙচুর চালানো ও গালিগালাজ করায় বাড়ির পাশে বাগানে গর্তের মধ্যে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। শুক্রবার পুলিশ এসে নিয়ে গেছে। আব্দুল কাদেরের প্রতিবেশী খেশরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক জানান, খুব শান্ত স্বভাবের ছিল কাদের।

উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে। হঠাৎ পাগল হয়ে যাওয়ার কোনো সঠিক কারণ আজও জানা যায়নি। তবে কাদেরের পরিবারের বাকি সদস্যরা একটু অস্বাভাবিক ধরনের। দশ বছর আগে কাদের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেও তিন বছর আগে একেবারেই পাগল হয়ে যায়।

পরিবারটিও অসহায়। বিভিন্ন সময় চিকিৎসার জন্য তাকে আমি সহযোগিতা করেছি। তবে যথাযথ চিকিৎসা হয়তো আব্দুল কাদের পায়নি। সুচিকিৎসা পেলে এতদিনে হয়তো সুস্থ হয়ে যেত।

এদিকে, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে আব্দুল কাদেরকে শিকলবন্দি অবস্থা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাকে উদ্ধার করে তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এসব জানিয়ে তালা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী রাসেল বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে আব্দুল কাদের মস্তিষ্ক বিকৃত মানুষ। নিরুপায় হয়ে পরিবারের সদস্যরা তার পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতো।

আব্দুল কাদেরকে উদ্ধার করে তালা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।

বার্তা বাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর