নিশ্চয়ই তিনি বেহেশত থেকে দেখেন, তার দেশের মানুষ আজকে ক্ষুধায় কাতর হয় না

মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে জাতির পিতা রক্ত দিয়েছেন। তার রক্ত ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। তিনি কষ্ট করে গেছেন। তার সেই মহান ত্যাগ কখনো বৃথা যেতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শোকের মাসের কর্মসূচি পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রক্তদান কর্মসূচি ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে লন্ডন থেকে মোবাইল ফোনে তিনি এ কথা বলেন।

শোকাবহ আগস্টের শুরুতে কথা লন্ডন থেকে মুঠোফোনে কথা বলতে গিয়ে একসময় বিভিন্ন স্মৃতি চারণ ও পিতার স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকারের কথা বলত বলতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। কথা বলতে গিয়ে ওই পাশ থেকে কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে ওঠে। এসময় এক শোকাবহ আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয় উপস্থিত নেতাকর্মীদের মাঝে।

অনুষ্ঠানে রক্তদান কর্মসূচিতে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি অনুষ্ঠানস্থল থেকে লন্ডনে চিকিৎসার জন্য অবস্থান করা প্রদানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মোবাইলে সংযুক্ত করেন।

সে সময় উপস্থিতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী কৃষকলীগের মাধ্যমে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করার পটভূমি তুলে ধরে বলেন, আজকে আমরা জাতির পিতার উদ্দেশে আমাদের পরিবেশকে রক্ষা, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আসা এবং মানুষের জীবনে উন্নত করবার জন্যই আমরা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা রক্ত দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছিলেন—প্রয়োজনে জীবনে রক্ত দেবো, তিনি ঠিকই রক্ত দিয়ে গেছেন। তার রক্ত ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। আমরা প্রতিবছর ১৫ আগস্ট উপলক্ষে রক্তদান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি।

রক্ত মানুষের জীবন বাঁচাতে সহযোগিতা করে। রক্ত দিলে পরে কিন্তু রক্ত কমে না, রক্ত কিন্তু বাড়ে। আর একজন মুমূর্ষু রোগীর জীবন রক্ষা পাওয়ার জন্য একটু ত্যাগ স্বীকার যেকোন মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা মানবতার জন্য দরকার।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ইদানিং আমাদের দেশে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গুর প্রভাব। ডেঙ্গুর প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে আমি কতকগুলো নির্দেশনা দিয়েছি।

আমি মনে করি, আমাদের পার্টির প্রত্যেকটি মানুষ যেটা মেনে নিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে এই মশার বংশবিস্তার যাতে হতে না পারে তার জন্য যথাযথভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখা, পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা, নিজের ঘর বাড়ি সুরক্ষিত করা হয়—এ ব্যাপারে সকলকে আহ্বান জানান তিনি।

আমাদের দেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য, জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বে অন্যতম অবস্থান। আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের শ্রমিক অর্থনীতি অত্যন্ত শক্তিশালী।

আমরা সবচেয়ে বৃহৎ বাজেট দিয়েছি। আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে যাচ্ছি। আমরা সবদিকেই বেশ এগিয়েছি। তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছি। সবার পড়ালেখার সুযোগ করে দিচ্ছি, উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। আমরা পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি—বলেন শেখ হাসিনা।

কাজেই বাংলাদেশ সার্বিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আমার কেবল একটা কথাই মনে হয়। যেমনভাবে একটি ভাল কাজ হয়। দেশের মানুষ ভাল থাকে। আমার মনে হয়, বাবার আত্মা শান্তি পায়।

তখন আমি চিন্তা করি নিশ্চয়ই তিনি বেহেশত থেকে দেখেন, তার দেশের মানুষ আজকে ক্ষুধায় কাতর হয় না।কষ্ট পান না। একথা চিন্তা করে তার আদর্শকে ধারণ করেই জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে দেশের মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। আমি দেশের মানুষেরও দোয়া চাই।

আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আত্মমানবতার সেবা করা, মানুষের জন্য আত্মত্যাগ করা, এটা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য। এর থেকে যে তৃপ্তি পাওয়া যায়, আনন্দ পাওয়া যায়, সেটা ভোগে পাওয়া যায় না, ত্যাগেই পাওয়া যায়।

মহৎ অর্জনের জন্য মহৎ ত্যাগের প্রয়োজন হয় এটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন। তিনি রক্ত দিয়েছেন। তার রক্ত ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে, বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। তিনি জাতির জন্য সারাজীবন কষ্ট করে গেছেন। তার সেই মহান ত্যাগ কখনো বৃথা যেতে পারে না।

কাজেই দেশকে আমরা গড়ে তুলবো। আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করব। দারিদ্রের হার আমরা কমিয়েছি, আরও কমাব। এই দেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্বের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।

এছাড়া প্রত্যেক নাগরিককে তিনটি করে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন—দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বৃক্ষরোপণ করা দরকার। আমি প্রত্যেককে তিনটি করে গাছ লাগানোর আহ্বান জানাচ্ছি। এতে একটি পরিবারের আয়ের উৎস ও তৈরি হয়। জলোচ্ছ্বাস, দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে উপকূলে সবুজ বেষ্টনী একান্ত দরকার।

এছাড়া লন্ডনে ৩ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ‘কৃষকের কণ্ঠ’ শীর্ষক একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

এরপরই রক্তদান কর্মসূচি শুরু করার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ডেঙ্গু রোগীদের রক্ত সরবরাহের লক্ষে ২০০ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করা হবে বলে জানান আয়োজক সংগঠনের নেতারা।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক ড. হাছান মাহমুদ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুর নাহার লাইলীসহ কৃষক লীগের নেতারা।

কৃষক লীগের সভাপতি মেতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্ব করেন এবং সভা পরিচালনা করেন যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সমীর চন্দ দে।

বার্তা বাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর