দিনেদুপুরে উধাও বিআরটিসির দুটি বাস

রবিবার বেলা দেড়টা। রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচে বিআরটিসির আর্টিকুলেটেড বাসটি রেখে দুপুরের খাবার খেতে যান চালক। বাসটি রাখার সময় এর সামনে-পেছনে আরও দুটি বাস ছিল। খাওয়া শেষে চালক দেখেন তার রেখে যাওয়া বাসটি উধাও।

দিনে দুপুরে এমন ঘটনায় হতভম্ব হয়ে পড়েন সেখানে উপস্থিত সবাই। সাধারণত বাস চুরি যাওয়াই বিরল ঘটনা, সেখানে দিনদুপুরে সরকারি পরিবহন তাও আবার বিশালাকার আর্টিকুলেটেড বাস চুরি!

পুলিশি তৎপরতায় এক দিন পর সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে উদ্ধার হয় বাসটি। দিনদুপুরে রাজধানীর রাস্তায় পার্ক করা বিআরটিসির আর্টিকুলেটেড বাস চুরি যাওয়ার ঘটনা পুলিশকেও বিস্মিত করেছে। এর রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে তারা। তবে এখনো কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি তারা।

দক্ষ ও পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়া বিআরটিসির আর্টিকুলেটেড বাস রাজধানীর রাস্তায় চালানো অন্য কারো পক্ষে প্রায় অসম্ভব বলে জানান সংস্থাটির চালকরা। দক্ষ চালক ছাড়া কেউ দুটি বাসের সমান এই গাড়ি চুরি করতে পারার কথা না। অভ্যন্তরিন কোন্দলের জের ধরে এই চুরি সংঘটন ও এর সঙ্গে চালকদের কোনো চক্র জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ।

বিআরটিসির গাজীপুর ডিপোর অধীনে আর্টিকুলেটেড বাসগুলো কুড়িল বিশ^রোড় থেকে পূর্বাচল সড়কে চলাচল করে। যেখান থেকে বাসটি চুরি হয় সেখানে প্রায় সারা দিন বিআরটিসির দোতলা ও আর্টিকুলেটেড বাস দাঁড়ানো থাকে।

জানা যায়, সরকারি এই বাস ইজারাদারের মাধ্যমে রাস্তায় চলে। গাজীপুর ডিপোর এই বাসগুলোর বর্তমান ইজারাদার জিল্লুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। লাভজনক এই পথে বাসের ইজারা নিতে আরও পক্ষ সক্রিয়। পুলিশের একজন কর্মকর্তার ধারণা, বাস চুরির সঙ্গে এই ইজারার যোগসূত্র থাকতে পারে। তারা সেটি খতিয়ে দেখছেন।

ঘটনাস্থল কুড়িল ফ্লাইওভারে নিচে তিনটি বিআরটিসির বাস রাখা ছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের সিসিটিভি ক্যামেরায় বাসটি ঘটনাস্থল থেকে কুড়িল ফ্লাইওভার, বিমানবন্দর সড়ক হয়ে কালসী ফ্লাইওভার দিয়ে মাটিকাটার দিকে নামতে দেখা যায়।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘রবিবার কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে থেকে আর্টিকুলেটেড বাসটি খোয়া যাওয়ার পর বিআরটিসির চালক-শ্রমিকরা খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পুলিশকে জানান। সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায় বাসটি কালসী ফ্লাইওভারের মাটিকাটার দিকে নামে। পরে মিরপুর থেকে উদ্ধার করা হয় বাসটি।’

এটি গাড়িচোর চক্র বা গাড়ির যন্ত্র চুরির চক্রের কাজ নয় বলে মনে করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘এত বড় বাস চুরি করে নিয়ে বিক্রির সুযোগ নেই। বাসটি নিয়ে যাওয়ার পর প্রায় দেড় দিন পড়ে ছিল সেটি। কিন্তু কোনো যন্ত্রাংশ খোয়া যায়নি। কাজেই এটি যে সাধারণ কোনো চুরি নয় সেটি অনুমান করা যাচ্ছে।’

বিআরটিসির একটি সূত্র জানায়, ইজারাদারের সঙ্গে একটা পক্ষের বিরোধ এই বাস চুরির পেছনে কাজ করেছে। কোনো একটি পক্ষকে বিড়ম্বনায় ফেলতে এই চুরির ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

আরেকটা সূত্র বলছে, বিআরটিসির মধ্যে নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দ্বন্দ এবং গ্রুপিং রয়েছে। এর আগেও তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে দেখা গেছে। তাছাড়া ডিপোতেও বেশ কয়েকটা গ্রুপ আছে। গ্রুপিংয়ের কারণে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ফাঁসাতে বা নতুন কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এটা করতে পারে। বাসটি চুরি হলেও সেটি অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে।

ডিএমপির খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাসটি মিরপুরের কাফরুল এলাকায় পরিত্যক্ত ফেলে রেখে যায় চক্রটি। রাষ্ট্রীয় সম্পদ এই বাস কীভাবে চুরি হলো সেটা আমরা বের করার চেষ্টা করছি। চালক দাবি করছে, রাস্তার পাশে রেখে খেতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন বাসটি নেই।’

বাসটি চুরি করে নিয়ে যাওয়ার পেছনে সংশ্লিষ্ট দক্ষ ও পূর্ব-অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চালকদের সন্দেহ করছে পুলিশ। জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘বিআরটিসির আর্টিকুলেটেড বাস কোনো পাবলিক বা নরমাল চালক চালাতে পারে না। এই বাস চালানোয় যাদের অভিজ্ঞতা আছে তারা ছাড়া কেউ চালাতে পারবে না। এই ঘটনায় অনেকে জড়িত থাকতে পারে। প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে এই বাস যারা চালাত তাদের প্রাথমিকভাবে সন্দেহের তালিকায় রেখে কাজ করছি।’

বিআরটিএর কেউ জড়িত কি না জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘না, এখনো সেটা ভাবছি না। চালকদের মধ্যে কারা জড়িত তাদের ধরলে ভেতরের রহস্য উন্মোচিত হবে। এখানে অনেক গ্রুপিং আছে।’

সংঘবদ্ধ কোনো চক্রের জড়িত থাকার বিষয়টিও একেবারে সন্দেহের বাইরে রাখছেন না গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বাসটি উদ্ধারের পর আমরা চুরির কারণ উদঘাটনে কাজ করছি। এটা এখনো তদন্তধীন। সংঘবদ্ধ কোনো চক্র এটার সঙ্গে জড়িত কি না তা আসামিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।’

বার্তা বাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর