প্রত্যাশার ন্যায়বিচারের ব্যত্যয় কাম্য নয়!

বর্তমান বিচার ব্যবস্থা এই উপমহাদেশে প্রায় দু’শ বছর আগে বৃটিশ শাসনের সৃষ্টি, যদিও বিচার ব্যবস্থার কিছু কিছু প্রাক-বৃটিশ আমলের মুসলিম এবং হিন্দু শাসন ব্যবস্থার তৈরী হয়েছিল। বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে বিচার ব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে বিকাশ লাভ করে।

এ বিকাশের প্রক্রিয়াটি আংশিক স্বদেশী ও আংশিক বিদেশী আইনগত ধারণা ও নীতিমালা ইন্দো-মোঘল ও বৃটিশ উভয় ব্যবস্থার সমন্বয়ে গঠিত মিশ্র আইনী ব্যবস্থা। ভারতীয় উপমহাদেশের বৃটিশ আমলের পূর্ববর্তী পাঁচশত বছরেরও বেশী মুসলিম ও হিন্দু শাসনের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। প্রত্যেকটি শাসনামলের নিজস্ব স্বতন্ত্র আইন ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল।

ন্যায় বিচার আধুনিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। ন্যায়নীতি ভঙ্গ হলে ও হবার সম্ভাবনা থাকে বিধায় ন্যায়নীতির সাথে দুটি পক্ষ নিবিড়ভাবে জড়িত থাকে। যখন কোন ঘটনায় নীতিটি ভঙ্গ হয়, তখন ঘটনার ক্ষেত্রে একপক্ষ অত্যাচারী ও অন্যপক্ষ অত্যাচারিত হিসেবে আবির্ভূত হয়।

স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করে।একটি দেশের স্বাধীনতার প্রতীক ন্যায় বিচার। একজন মানুষের ন্যায় বিচারের অধিকার তার সংবিধানিক অধিকার। আমরা যদি একটু পেছন ফিরে যাই তাহলে দেখব ব্রিটিশদের কাছ থেকে ভারত পাকিস্তান দুইটি রাষ্ট্র আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিল যার মুখ্য কারণ ছিল বিচার হীনতা ।

অনুরূপভাবে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম লাভ করেছিল ন্যায় বিচার না পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে। স্বাধীনতা অর্জনের পর আমরা প্রায় অর্ধ শতাব্দি পার করে ফেলেছি কিন্তু ন্যায় বিচার নামক শব্দটি এখনো সু প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। আমরা প্রায়ই ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হই, অনেক সময় আমরা ধরেই নিই, আমরা ন্যায়বিচার কখনোই পাবো না।

একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে একজন নাগরিক ন্যায় বিচার পাবে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যায় বিচার সু প্রতিষ্ঠিত করবে এটা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর রুটিন ওয়ার্ক কিন্তু বাস্তব ঠিক উল্টো। বিচারহীনতা আমাদের দেশের আলোচিত সমালোচিত একটি বাস্তবিক শব্দে পরিণত হয়েছে।

যদি প্রশ্ন করা হয় একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা কেন রাষ্ট্রের কাছ থেকে ন্যায় বিচারের জন্য আকুল ফরিয়াদ জানাচ্ছি? সোজা সাপটা উত্তর না পেলেও আমরা জাতি হিসেবে অনেক কিছুই উপলব্ধি করতে পারি!

এক সময় আমরা দেখতাম সমাজের মধ্যে কোন অন্যায় হলে সমাজের মানুষেরা বিচারের মাধ্যমে একটা সমাধানের পথ বের করতো কিন্তু এখন সামাজিক বিচার প্রায় জাদুঘরে সংরক্ষিত হয়ে গেছে। সামাজিক বিচার হয়ে দাঁড়িয়েছে এক ধরনের প্রহসন। স্বাধীন সভ্য জাতি হিসেবে আমাদের কখন কাম্য নয়।

প্রতি হিংসা, তীব্র মতবিরো্‌ধ প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ও দুর্নীতি পরায়ন মনোভাব রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি গ্রাম পাড়া মহল্লা গ্রাশ করে ফেলেছে।

বর্তমানে দেশে প্রায় ৩৫ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে মামলাজট। বিচারক স্বল্পতা, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও ব্যবস্থাপনা ত্রুটির কারণে সৃষ্টি হচ্ছে মামলাজট।

সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, উচ্চ আদালতে (আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট) বিচারাধীন মামলা পাঁচ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪টি। এর মধ্যে আপিল বিভাগে ২০,৪৪২টি এবং হাইকোর্টে পাঁচ লাখ ১৬ হাজার ৬৫২টি।

হাইকোর্টে বিচারপতি রয়েছেন ৯২ জন। ৩৫টি দ্বৈত ও ১৯টি একক বেঞ্চে ২০১৮ সালে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে বিভিন্ন শ্রেণির (ফৌজদারি, দেওয়ানি ও রিট) মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ১৬ হাজার ৩০৬টি। এ সময় বিচারাধীন মামলা ছিল ৫ লাখ ৩২ হাজার ৯৫৮টি। আর বিশেষ উদ্যোগের ফলে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

এদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল মানুষের অধিকার, ন্যায় বিচার ও ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠা করার জন্য। রক্ত দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতার মাধ্যমে আমরা পেয়েছিলাম লাল সবুজের একটি পতাকা, একটি সংবিধান, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা, তাই আমরা কখনো ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হতে চাই না ।

বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা করে।বাংলাদেশের সকল ক্ষেত্রে সকল পর্যায়ে ন্যায় বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হোক এবং অন্যায় অত্যাচারের অবসান হোক।

লেখক-কলামিষ্ট
E-mail:sabur2050@gmail.com

বার্তাবাজার/আরএইচ

* প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। বার্তা বাজার-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বার্তা বাজার কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর