মালিঙ্গার বিদায়ী ম্যাচে টাইগারদের হার

লাগামহীন বোলিং আর ফিল্ডিং, ক্যাচিংয়ে বেহাল দশা। বাংলাদেশ যেন সেই আগের বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। লাসিথ মালিঙ্গার বিদায়ী ওয়ানডেতে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমেছে শ্রীলঙ্কা।

তৃতীয় ওভারেই ওপেনার আভিশকা ফার্নান্দোর উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। তিন বছর পর দলে ফেরা শফিউল ইসলামই প্রথম আঘাত হানেন। ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ ওয়ানডে খেলা শফিউল ইসলামকে দিয়েই ইনিংসের শুরুটা করেন দেশের ইতিহাসের ১৪তম ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

তার আস্থার প্রতিদান দিতে সময় নেননি ডানহাতি এই পেসার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে জোরালো আপিল করেও পাননি লেগ বিফোর উইকেট। তবে পঞ্চম বলে অফস্ট্যাম্পের খানিক বাইরে করা বলে স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচে পরিণত করেন আভিশকাকে।

আউট হওয়ার আগে ১৩ বল থেকে ৭ রান করেন ডানহাতি এ ওপেনার। তবে ১০ রানে ১ উইকেট হারানোর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় উইকেটে দিমুথ করুনারত্নে আর কুশল পেরেরা গড়েন ৯৭ রানের জুটি। মারমুখী এই জুটিটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

১৫তম ওভারের শেষ বলে মিরাজকে সুইপ করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে মোস্তাফিজুর রহমানের সহজ ক্যাচ হন লঙ্কান অধিনায়ক করুনারত্নে। ৩৭ বলে ৪ বাউন্ডারিতে তিনি তখন ৩৬ রানে।

বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রণহীন বোলিং আর দৃষ্টিকটু ফিল্ডিংয়ে তৃতীয় উইকেটে আরেকটি বড় জুটি গড়ে ফেলেন কুশল পেরেরা আর কুশল মেন্ডিস। সৌম্য সরকারের করা ২৭তম ওভারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মেন্ডিসকে যেভাবে জীবন দিয়েছেন, সেটা পাড়া মহল্লার ক্রিকেটেও সচরাচর দেখা যায় না।

২৮ রানে থাকা মেন্ডিস সৌম্যর বলটি তুলে দিয়েছিলেন লং অনে। দৌড়ে এসে সেটি হাতেই পান মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু তালুতে নিয়েও ক্যাচটি ধরে রাখতে পারেননি। সেঞ্চুরি তুলে নেন কুশল পেরেরা। ২৮তম ওভারে মোসাদ্দেক হোসেনের প্রথম তিনটি বল ডট নেয়ার পর মিডউইকেট এলাকা দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়েই উদযাপনে মাতেন লঙ্কান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।

তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে তার লাগে মাত্র ৮২ বল।সেঞ্চুরি করে বেশিক্ষণ মাঠে থাকতে পারেন নাই কুশল পেরেরা। দলীয় ২০৭ রানের মাথায় ব্যাক্তিগত ১১১ রান করে সৌম্যের বলে মাঠ ছাড়েন এই বামহাতি মারকুটে ব্যাটসম্যান।

পেরেরার বিদায়ের পর একই পথে হাঁটেন কুশল মেন্ডিস। দলীয় ২১২ রানের মাথায় ব্যাক্তিগত ৪৩ রান করে রুবেলের বলে মাঠ ছাড়েন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তারপর দলের হাল ধরেন ম্যাথিইউস এবং থিরিমান্নে। এই দুই ব্যাটসমান কিছুটা সময় শাষন করতে থাকে বাংলাদেশের বোলারদের। শেষ পর্যন্ত তাদের থামান মুস্তাফিজ।

দলীয় ২৭২ রানের মাথায় ব্যাক্তিগত ২৫ রান করে মুস্তাফিজের বলে সাজঘরে ফিরে যান থিরিমান্নে ।থিরিমান্নের বিদায়ের পর মাঠে আসেন মারকুটে ব্যাটসম্যান থিসারা পেরেরা। যদিও এই মারকুটে ব্যাটসম্যান কিছুই করতে পারেননি। তাকে দ্রুত ফিরিয়ে দেন শফিউল। দলীয় ২৭৬ রানের মাথায় ব্যাক্তিগত ২ রান করে শফিউলের বলে আউট হয়ে ফিরে যান থিসারা।

শেষ পর্যন্ত ম্যাথিউসের ব্যাটে ভর করে লঙ্কানরা সংগ্রহ করে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩১৪ রান। যার ফলে বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ৩১৫ রান। ম্যাথিউস আউট হন ৪৮ রান করে। বাংলাদেশের পক্ষ্যে শফিউল নেন ৩ উইকেট, মুস্তাফিজ নেন ২ উইকেট। মেহেদী,রুবেল,সৌম্যে নেন ১ উইকেট করে।

৩১৫ রানের টার্গেটে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই তামিমের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে টাইগাররা। দলীয় ১ রানের মাথায় ব্যাক্তিগত ০ রান করে মালিঙ্গার বলে বোল্ড আউট হয়ে ফিরে যান তামিম ।

তামিমের বিদায়ের পর মাঠে আসেন মোহাম্মদ মিঠুন । সৌম্যেকে সাথে নিয়ে দেখেশুনেই খেলছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।কিন্তু হটাৎ খেই হারিয়ে ফেলেন মিঠুন- সৌম্যে।দলীয় ৩০ রানের মাথায় আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন এই দুই ব্যাটসম্যান। সৌম্যে ১৫ এবং মিঠুন ১০ রান নিয়ে মাঠ ছাড়েন এই দুই ব্যাটসম্যান।

মিঠুন- সৌম্যের আউটের পর মাঠে আসেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ । মুশফিককে সাথে নিয়ে অনেকটা সাবধানী শুরু করেন রিয়াদ। কিন্তু সাবধানী শুরুর পরও বেশীক্ষন টিকে থাকতে পারেননি রিয়াদ। দলীয় ৩৯ রানের মাথায় ব্যাক্তিগত ৩ রান করে লাহিরু কুমারার বলে আউট হয়ে ফিরে যান রিয়াদ।

রিয়াদের বিদায়ে বড় ধরণের চাপে পড়ে টাইগাররা।তবে সেই চাপ সামলিয়ে সাব্বিরকে সাথে নিয়ে দারুণভাবে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিক। ৪২ বলে সাব্বির তার অর্ধশতক পূর্ণ করেন। মাঠে নেমে শুরু থেকেই লঙ্কান বোলারদের উপর চওড়া হন সাব্বির। অর্ধশতক পূরণ করেই আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যান সাব্বির। দলীয় ১৫০ রানের মাথায় ব্যাক্তিগত ৬০ রান করে সিলভার বলে আউট হয়ে ফিরে যান সাব্বির ।

সাব্বিরের বিদায়ে মাঠে আসেন মোসাদ্দেক। শুরুথেকেই দেখে শুনে খেলছিলেন মোসাদ্দেক। কিন্তু মুশফিকের সাথে ভুলবুজাবুজিতে রান আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন মোসাদ্দেক।দলীয় ১৮২ রানের মাথায় ব্যাক্তিগত ১২ রান করে রান আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন মোসাদ্দেক ।

মোসাদ্দেকের বিদায়ের পর একই পথে হাঁটেন মিরাজ। দলীয় ১৮৭ রানের মাথায় ব্যাক্তিগত ২ রান করে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যান মিরাজ। সবার আসা যাওয়ার মিছিলে একই লড়াই চালিয়ে যান মুশফিক। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন মুশফিক । দলীয় ২০০ রানের মাথায় ব্যাক্তিগত ৬৭ রান করে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যান এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

মুশফিকের বিদায়ের পর বাংলাদেশের হার ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। তারপর ২ রান করে বিদায় নেন শফিউল। শেষে এসে ঝড় তুলেন মুস্তাফিজ। ফিজ করেন ১৪ বলে ১৮ রান । ৬ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন রুবেল ।

শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ৪১৪ ওভারে ১০ উইকেটে ২২৩ রান ।যার ফলে শ্রীলংকা জয়লাভ করে ৯১ রানে। শ্রীলংকার পক্ষ্যে মালিঙ্গা এবং নুয়ান প্রদীপ ভাগাভাগি করে নেন ৩টি উইকেট করে,লাহিরু কুমারা নেন ১ উইকেট, সিলভা নেন ২ উইকেট ।

বার্তা বাজার/কেএ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর