অসুস্থ হয়ে পড়েছে তুবা, মায়ের শোকে স্তব্ধ মাহির

যে মা নিজ হাতে খাইয়ে দিতো, ঘুম পাড়িয়ে দিতো, বই পড়িয়ে দিতো আজ ৭ দিন হয়ে গেলো সে নেই। তার এ শূন্যতা পূরন হওয়ার নয়। কারণ পৃথিবীতে মমতাময়ী মা একজনই হয়। তাইতো মাকে হারিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছে রাজধানীর বাড্ডায় গণপিটুনিতে নিহত তাসলিমা বেগম রেনুর শিশু সন্তান তাসফিক আল মাহির (১১)। শত মানুষের ভীড়েও চারিদিকে মাকেই খুঁজছে সে। মায়ের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে রেনুর অপর শিশু সন্তান তাসমীম মাহিরা তুবা (৪)। মায়ের কথা মনে পড়তেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে সে।

শুক্রবার সকালে রেনু হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকাস্থ রায়পুর উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে আয়োজিত এক মানববন্ধনে মাহিরকে দেখা যায় স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে। কারো সঙ্গে কোনো কথাই বলছে না। কেউ মায়ের কথা বলতেই মাথা নিচু করে কেঁদে উঠছে। কথা বলার শক্তিও যেন তার নেই। মানববন্ধন শেষে মাহির বলেন, সব সময় মায়ের কথা মনে পড়ে। মা সব সময় কলতো ভালো করে লেখাপড়া করতে। এখন সে কথাটা বেশি পড়ছে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে মাহির।

এসময় মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নিহত রেনুর বোন নাজমুন নাহার নাজমা, রেহানা আক্তার কুসুম, চাচাতো ভাই মীজানুর রহমান, ফুফাতো ভাই আবদুর রহমান, ভাগিনা নাসির উদ্দিন টিটু, অনিক ও শুভ এবং আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সাংসদ হারুনুর রশিদ, লক্ষ্মীপুর বার কাউন্সিলের সাবেক সাধারন সম্পাদক এডভোকেট মীজানুর রহমানসহ ২ শতাধিক লোক।

নিহত রেনুর বড় বোন নাজমুন নাহার নাজমা আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, মাহির ও তুবা সব সময় মায়ের কথা বলে। আমি কোথায় পাবো ওদের মাকে। আর পৃথিবীতে মাতো একজনই হয়। যার মমতা অন্য কারো মধ্যে খুজে পাওয়া যায়। আমরা চেষ্টা করছি ওদের শান্তনা দিয়ে রাখতে। কিন্তু মানতে চাইছে না। তুবা ইতিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মানুষের মধ্যে যেতে চাইছে না। এজন্য মায়ের বিচার চাইতে এখানে (মানববন্ধনে) এসেও সবার সঙ্গে দাড়াতে পারেনি মেয়েটা।

তিনি আরো বলেন, আদরের বোনটাকে এভাবে হারাতে হবে ভাবিনি। গুজব ছড়িয়ে একজন নারীকে এভাবে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে, এটি মেনে নেয়া যায় না। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছি। যেন আর কোনো মানুষ এভাবে গুজবের বলি না হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গুজবকে কেন্দ্র করে এ ধরণের মর্মান্তি ঘটনা কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ ঘটনায় দায়ী সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজের সন্তানের ভর্তির ব্যাপারে খোঁজ নিতে গেলে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে গণপিটুনিতে মারা যান রেনু। ওই ঘটনায় রাতেই বাড্ডা থানায় অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাগ্নে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে এক আসামি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

বার্তাবাজার/আরএইচ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর