ধামইরহাটে ভূমিহীনদের বাড়ীঘর পুড়িয়ে দিয়েছে প্রভাবশালী মহল

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার চৌঘাট হঠাৎপাড়া গ্রামে প্রভাবশালী মোশারফ হোসেন মিস্টারের বিরুদ্ধে রাতের আধারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। ধামইরহাট সীমান্ত ‘বস্তাবর ক্যাম্প বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’ তাৎক্ষনিক সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছলে তারা পালিয়ে যায়।

বর্তমানে অসহায় পরিবারের লোকজন অনাহারে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নে রবিবার রাত দেড় টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মোশারফ হোসেন মিস্টার একই ইউনিয়নের বস্তাবর গ্রামের আক্তার হোসেনের ছেলে।

জানা গেছে, উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের চৌঘাট হঠাৎপাড়া গ্রামে পুকুর পাড়ে গত এক বছর থেকে খাস জমিতে ভূমিহীন ৩৫টি পরিবার বাঁশের চাটায় কাঁদামাটি ও টিনের ছাউনি দিয়ে ঘর করে বসবাস করে আসছেন। এরমধ্যে ৭টি পরিবার মুসলমান সম্প্রদায় ও বাকীগুলো আদিবাসী (ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী)। সেখানে প্রায় দেড়শতাধিক মানুষ বসবাস করত।

রোববার রাত ১টার দিকে প্রভাবশালী মোশারফ হোসেন মিস্টারের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র হাসুয়া, কুড়াল, তীর ধনুক ও লাঠিসোটা নিয়ে ৪০-৫০ জনের সঙ্ঘবদ্ধ দল হঠাৎপাড়ায় হামলা চালায়। ঘুমন্ত মানুষের উপর এলোপাতাড়ি হামলা চালিয়ে বাড়ি ভাঙচুর করে ও পেট্রোল ঢেলে অগ্নি সংযোগ করে। অসহায় মানুষদের পিটিয়ে জখম করে। এতে আদিবাসী শান্তি পাহানের হাত ভেঙ্গে যায় এবং তার ৫ বছরের ছেলে আকাশ মারাত্মক আহত হয়।

আগুনে ভূমিহীনদের বিছানা, বালিশ ও কাথা সহ আসবাবপত্র পুড়ে যায়। এছাড়া থালা-বাসন ও চাউল, নগদ টাকা লুটপাট করা হয়। আগুন লাগানোর পর ধোয়া ও হৈ চৈ বুঝতে পেরে ‘বস্তাবর ক্যাম্প বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’ টহলরত সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ঘটনার পর থেকে অসহায় পরিবারগুলো খোলা আকাশের অনাহারে বসবাস করছে। তাদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অনেক আগে থেকেই অবগত আছে। ভূমিহীনদের নিয়ে মোশারফ হোসেন মিস্টারের সাথে বৈঠকও হয়েছিল। কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি। উল্টো আপোষের নামে ভূমিহীনদের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

স্বামী পরিত্যাক্তা নাজমা বেগম বলেন, মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চলে। গত এক বছর থেকে ছোট দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখানে বাঁশের চাটায় ও টিনের বেড়া দিয়ে ঘর তৈরী করে বসবাস করে আসছি। হঠাৎ করে মধ্যরাতে আমার ঘরের দরজা ভেঙে ঘরের ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর করে ও আমাকে লাঠি দিয়ে মারপিট করে। পরে বাচ্চাদের নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে এসে দেখি আমার ঘর তারা আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।

এছাড়া ভুক্তভোগী বিধবা মনোয়ারা বেগম, সানাউল ইসলাম, আফিজ উদ্দিন, নূরুজ্জামান, শান্তি পাহান, অধিন পাহান, লগেন পাহান ও জীবনি সহ কয়েকজন বলেন, আমরা গত এক বছর থেকে পুকুর পাড়ে সরকারি জায়গায় বসবাস করে আসছি। কিন্তু প্রভাবশালী মোশারফ হোসেন মিস্টার ওই জায়গাটি নিজের বলে দাবী করে আমাদের প্রায় জায়গাটি ছেড়ে দেয়ার জন্য হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল।

সর্বশেষ রোববার রাতে মিস্টারসহ তার ৪০-৫০ জন লোক নিয়ে রাতের আধারে আমাদের উপর হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও মারপিট করে এবং পেট্রোল ঢেলে বাড়িঘর আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। বর্তমানে আমরা খোলা আকাশের নিচে অনাহারে বসবাস করছি। চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান আপোষের নামে আমাদের কাছ থেকে ৪০হাজার টাকা চেয়েছিলেন। আর টাকা না দিলে তিনি আমাদের পক্ষ হয়ে কাজ করবে না বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

এদিকে ওই জমির দাবীদার মোশারফ হোসেন মিস্টার বলেন, ওই জমিটি সরকারের কাছ থেকে পত্তন নেয়া। দির্ঘদিন জমিটি আমাদের দখলে ছিল। কিন্তু হটাৎ করে কতিপয় লোকজন অবৈধভাবে দখলের জন্য ছোট ছোট ঘর নির্মাণ করে। বিষয়টি নিয়ে চলতি মাসের ১০তারিখে ধামইরহাট থানায় একটি নিজ দখলীয় জায়গায় অবৈধ অনুপ্রবেশের একটি মামলা করা হয়।

বিবাদমান ওই জমিতে নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। যার স্মারক নং ১৬৯, তারিখ ২৬/০২/২০১৯ ইং। আদালতের আদেশ অমান্য করে তারা বসতবাড়ী নির্মাণ করেছে। তবে ওইসব বাড়ীঘরে তিনি বা তার কোন লোকজন আগুন দেয়নি এবং এর সাথে তাদের কোন সম্পৃক্তা নেই।

আলমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বলেন, বহু বছর থেকে ওই জায়গাটা মোশারফ হোসেন মিস্টারের দখলে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ভূমিহীনরা সেখানে বাড়ি করে বসবাস শুরু করে। আপোষের জন্য বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষকে বসা হয়েছিল। কিন্তু কোনপক্ষই ছাড় দিতে চাইনা। একারণে সেখানে কোন দূর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার তো আমার না। আর আপোষের নামে ভূমিহীনদের কাছে টাকা দাবী করার বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তীহিন।

ধামইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনা শোনার পরপরই পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তবে রাতের আধারে এভাবে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও মারপিট করাটা অমানবিক। এ বিষয়ে থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি। মামলা হলে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর