মশা নিধনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও কাজ করার নির্দেশ

প্রতিনিয়তই বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এডিস মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেক মানুষ।

এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তবে মশা নিধন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়, এটি সিটি কর্পোরেশনের কাজ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি

অবশ্য এবিষয়ে উল্টো নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, দিনের পর দিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে মহামারি আকার ধারণ করছে। অবস্থা যেরকম যাচ্ছে এটা কেবল সিটি কর্পোরেশনের ওপর ছেড়ে দিলে হবে না। বিষয়টা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও দেখতে হবে।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি তারিক-উল-হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব কথা বলেন।

সিটি কর্পোরেশন মশা নিধনে কেন কার্যকরী ওষুধ ছিটাতে পারছে না সে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। ওষুধ কার্যকারী কিনা সে পরীক্ষা আগে কেন করা হয়নি সে প্রশ্ন তুলে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আদালত।

হাইকোর্ট বলেছেন, গত বছর ওষুধ ছিটানোর পর ঘরেও তার ঝাঁজ পেতাম। এবার গন্ধও পাওয়া যায় না। মানুষের ধারণা, এবারের ওষুধে কাজ হচ্ছে না।

আদালত বলেন, দিনের পর দিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে এটি মহামারি আকার ধারণ করছে। অথচ জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ওষুধ আমদানি করা হচ্ছে না।

এদিকে ডেঙ্গু ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ায় আদালতের ক্ষোভের মুখে মশার ওষুধ বদলে ফেলার কথা বলেছেন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা।

তবে তার আগ পর্যন্ত বর্তমান ওষুধই ব্যবহার হবে মাত্রা বাড়িয়ে। একই সঙ্গে মশা নির্মূলে আগামী চারদিন সমন্বিত অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার কথাও বলেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোমিনুর রহমান এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শরীফ আহমেদ।

এদিকে ওষুধের মাত্রা বাড়িয়ে যৌথ অভিযানে কার্যকর ফল পাওয়া যাবে জানিয়ে দুই কর্মকর্তার আইনজীবীরা সময়ের আরজি জানিয়েছেন। আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অগ্রগতি জানাতে বলে আগামী মঙ্গলবার পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রেখেছেন।

আদালতে ঢাকা উত্তর সিটির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু ও দক্ষিণ সিটির পক্ষে আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।

শুনানিতে আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে বলেন, এ বছর অ্যালার্মিং সিচ্যুয়েশন কেন হল? এ ক্ষেত্রে কী সমস্যা, তা কি চিহ্নিত করেছেন?

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, চিন্তা করতে হবে। নিঃসন্দেহে বিষয়টি সবার হেলথ কনসার্ন। এ বিষয়ে কর্পোরেশনই বলুক, সেটাই ভালো হয়।

এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, আমার এই সিটি কর্পোরেশনে এক কোটির বেশি লোক। আর ১০টি জোনে ৭৫টি ওয়ার্ডে মশক নিধন কার্যক্রমে জনবল মাত্র ৪২৯।

তখন আদালত বলেন, এ বছর ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব এত কেন? তিনি বলেন, এটা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। ক্লাইমেট সেনসেটিভ ডিজিজ। আর এ বছর আমাদের দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত, সর্বোচ্চ আর্দ্রতা ও সর্বোচ্চ উষ্ণতা ছিল।

‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমনটা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এর ভয়াবহ প্রভাব চলছে। সব দেশেই তো ডেঙ্গু আছে। এ সময় তিনি কয়েকটি দেশের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা তুলে ধরেন।’

আদালত বলেন, ওষুধ কার্যকর হচ্ছে না কেন? গত বছর ওষুধ ছিটালে ঘরেও তার ঝাঁজ পেতাম। এবার গন্ধও পাওয়া যায় না। জনগণের ধারণা, এবারের ওষুধে কাজ হচ্ছে না।

তখন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, আমরা যখনই ওষুধ আনি তখনই সরকারি দুটি ল্যাবে টেস্ট করে পজেটিভ সার্টিফিকেট পেলেই ব্যবহার করি। অর্থাৎ ল্যাব পরীক্ষায় সন্তোষজনক বললে ব্যবহার করি।

তখন আদালত বলেন, যখন দেখলেন ওষুধ কাজ করছে না তখন অন্য জায়গায় দ্রুত টেস্ট করবেন না? এ সব কী আমাদের বলে দিতে হবে? হোয়াট ইজ দ্য প্রবলেম?

‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশের স্বাস্থ্য দেখবে। এগুলো আমরা দেখতে চাই না। অবস্থা যেরকম যাচ্ছে এটা কেবল সিটি কর্পোরেশনের ওপর ছেড়ে দিলে হবে না। বিষয়টা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দেখতে হবে।’

বার্তাবাজার/আরএইচ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর