খিলাফত হারালেও রয়ে গেছে আইএস হুমকি

যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা গোষ্ঠি সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস বা এসডিএফ দাবি করেছে যে, সিরিয়ার বাঘুস হারানোর মধ্য দিয়ে ইসলামিক স্টেট ‘আইএস’ এর পাঁচ বছরের খিলাফতের চূড়ান্ত অবসান হয়েছে। তবে অবস্থান হারালেও আইএসের স্থায়ী নিঃশেষ হওয়ার নিশ্চয়তা কতটা সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে। আপাতত হারলেও তাদের পুনর্গঠিত হওয়ার সুযোগ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যেও।
বাঘুস ছিলো আইএসে’র সর্বশেষ ঘাঁটি। ২০১৭ সালে পতন হয়েছিলো তাদের খিলাফতের কথিত রাজধানী রাকার। একসময় এ জঙ্গি সংগঠনটি প্রায় ৮৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো যেখানে বাস করতো প্রায় ৮০ লাখ মানুষ। তেল ছাড়া চাঁদা, ডাকাতি আর অপহরণ থেকে অর্থ আয় করতো তারা।

হোয়াইট হাউজ আগেই জানিয়েছে, তারা ৪০০ শান্তিরক্ষী সিরিয়ায় রাখবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। ইরাকে গোপনভাবে জিহাদিরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে এমন তথ্য এসেছে জাতিসংঘ মহাসচিবের দেয়া ফেব্রুয়ারির একটি প্রতিবেদনে।

প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সংগঠিত হচ্ছে আইএস জঙ্গিরা। মরুভূমি ও পার্বত্য এলাকাগুলোতে তারা কাজ করে যেখানে যাতায়াত ও হামলার পরিকল্পনা তাদের জন্য সহজ। আইএস নেটওয়ার্ক সিরিয়াতেও ইরাকের মতো করেই দেখা দিতে পারে।

ইউফ্রেতিস উপত্যকায় ইদলিব প্রদেশের উত্তর পশ্চিমে তাদের কিছুটা উপস্থিতি আছে। এমনকি রাজধানী দামেস্কের দক্ষিণে ও দক্ষিণ-পূর্ব সিরিয়াতেও।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা ভয়েস অব আমেরিকা তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জঙ্গিদের হাতে এখনো ভারী অস্ত্র আছে এবং তারা দেশজুড়ে হত্যাকাণ্ড ঘটাতে সক্ষম বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি জঙ্গিদের ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব আছে তাদের নেতাদের। তাদের মূল নেতা আবু বকর আল বাগদাদীর অবস্থান এখনো অজানা।

অপরাধ কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থ এখনো আয় হচ্ছে তাদের এবং পাশাপাশি পাচ্ছে নানা ডোনেশনও। বড় ধরনের পরাজয় হলেও জাতিসংঘ মহাসচিবের দেয়া তথ্য মতে আইএসের এখনো ১৪ থেকে ১৮ হাজার জঙ্গি আছে ইরাক ও সিরিয়ায়। এর মধ্যে বিদেশি আছে তিন হাজারের মতো। যদিও মার্কিন হিসেবে এ সংখ্যা ১৫ থেকে ২১ হাজার। যাদের অনেকেই কাজ করে স্লিপার সেল হিসেবে।

সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস বা এসডিএফ প্রায় এক হাজার বিদেশি আইএস যোদ্ধা আটক করেছে। আরো এক হাজার ইরাকে আটক আছে বলে জানা যায়।

যুক্তরাষ্ট্র এসব যোদ্ধার নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের কথা বললেও এসব যোদ্ধাদের দেশগুলো তাদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

২০১৭ সালের অক্টোবরেই প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার তাদের নিজ দেশে ফিরে গেছে। এছাড়াও আইএস এর সহযোগী জঙ্গি ছড়িয়ে আছে আফগানিস্তান, লিবিয়া, মিসর ও আফ্রিকার বিভিন্ন এলাকায়।

সুন্নি আরব জঙ্গিরা ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের পর আইএস গঠন করেছিলো এবং পরে এটিই বৃহৎ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়।

২০১১ সালে তারা সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দেয়। ফলে সেখানেই তারা বেশ বড় আশ্রয় পেয়ে যায় এবং অস্ত্র পাওয়ার ক্ষেত্রেও সুবিধাজনক অবস্থায় চলে যায়। আবার পরে ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার হলে সেটিও তাদের জন্য সহায়ক হয়ে দাঁড়ায়।

২০১৩ সালে তারা সিরিয়ায় ভূখণ্ড দখল শুরু করে এবং পরে পরের বছরই নানা জায়গায় খিলাফত ঘোষণা করে। ইরাক ও সিরিয়া থেকে আইএস বিতাড়ন ছিলো একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। সিরিয়ায় সরকারি বাহিনীকে এজন্য ইরান ও রাশিয়ার সহায়তা নিতে হয়েছে। আর এসডিএফকে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা।

২০১৫ সালে আইএস’র কাছ থেকে ইরাকের রামাদি পুনরুদ্ধার করেছিলো ইরাকি বাহিনী ও তাতে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী।

পরবর্তীতে মসুল উদ্ধার হয় ২০১৭ সালে এবং এটি ছিলো আইএসের জন্য বড় ধাক্কা। এরই ধারাবাহিকতায় একই বছরের অক্টোবরে সিরিয়ার রাকা হারায় আইএস। এটি ছিলো তাদের কথিত খিলাফতের রাজধানী।

পরের মাসেই সিরিয়ার সেনাবাহিনী পূর্বাঞ্চলীয় দেইর-আল-জৌর নিয়ন্ত্রণে নেয় আর ইরাকে সরকারি বাহিনী দখল করে সীমান্ত শহর আল কাইম। আর শেষ পর্যন্ত এসডিএফ দখল করলো আইএসের শেষ ঘাঁটি বাঘুস।

আইএস বিরোধী লড়াইয়ে কত হাজার মানুষ মারা গেছে তার কোনো হিসেব নেই। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের মতে সিরিয়ায় ২০১১ সালের পর থেকে প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের তথ্যমতে এ লড়াইয়ে কমপক্ষে ৩০ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন ইরাকে। আর ইরাকের একটি সংস্থার হিসেবে এ সংখ্যা ৭০ হাজার।

নিহতের পাশাপাশি এ যুদ্ধে একইসঙ্গে বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। সিরিয়া থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ৬৬ লাখ মানুষ। আরো ৫৬ লাখ বিদেশে পালিয়েছে। তুরস্কে শরণার্থী হিসেবে আছে ৩৫ লাখ মানুষ।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর