বন্যায় বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ: খাদ্যের অভাবে বানভাসীরা

বাহে মোক খাবার দিয়া যা,ছবি তুলি কি করবু”বলছিলেন ৪৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা আমেনা বেওয়া । কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার শুলবাজার এলাকায় বাসা । বাড়ির উঠোনে উঠেছে কোমর পর্যন্ত পানি । শুকনো জায়গার আশায় আশ্রয় নিয়েছে সড়কের পাশে,কিন্তু সেখানেও পানি হাঁটু পর্যন্ত । আমেনা বেওয়ার মতো অজস্র পরিবার এখন আশ্রয় নিয়েছে রাস্তার পাশে ও উঁচু বাধঁ গুলোতে । এমন চিত্র কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলার । জেলাটির ৭৩ ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়নের ৪৯৮টি গ্রামের প্রায় ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ।

ঘরে শুকনো খাবার নেই। নেই রান্না করার মতো সরঞ্জাম। নলকুপ তলিয়ে থাকায় মিলছে না বিশুদ্ধ খাবার পানি। টয়লেট ব্যবস্থা না থাকায় বাড়ছে বিড়ম্বনা । পরিবারগুলোর মানুষ তাদের গবাদি পশুসহ অবর্ণনীয় কষ্টে দিন পার করছেন। অনেকের হাঁস-মুরগী ,বীজতলা ভেসে গেছে নদীর পানিতে । খাবারের তীব্র সংকটে পড়েছেন পানির মাঝে বসবাসকারী পরিবারগুলো। যারা আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে তারাও সেখানে কোন রকমে জীবন বাঁচানোর তাগিদে রান্নার কাজ সেরে নিচ্ছেন।

অনেক পরিবার শুকনো খড়ির অভাবে রান্নার কাজ করতে না পারায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন দোকান থেকে কেনা শুকনো খাবারের উপর। কিন্তু নগদ টাকার অভাবে অনেক পরিবারের ভাগ্যে জুটছে না দোকান থেকে কেনা সে খাবার টুকুও। সেই সাথে শত শত মানুষ একসাথে বাঁধ ও পাকা সড়কের দুই ধারে ধাপড়ি ঘর ও পলিথিনের তাবু টাঙ্গিয়ে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও গবাদি পশু নিয়ে বসবাস করলেও অনেক পরিবার পলিথিন বা ত্রিপালের অভাবে রয়েছেন খোলা আকাশের নীচে।

নলকুপের অভাবে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন তারা। পাশাপাশি টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় রাতের বেলাই উন্মুক্ত স্থানে সাড়তে হচ্ছে তাদের প্রাকৃতিক কাজ। বিশেষ করে বেশি বিড়ম্বনায় পড়েছে নারীরা।

বন্যা দুর্গত পরিবারগুলোর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেক পরিবারের ঘরে রান্নার চাল থাকলেও শুকনো খড়ি ও চুলার অভাবে রান্না করতে পারছেন না। চারিদিকে থৈ থৈ পানি থাকার কারনে দিনমজুর শ্রেনীর মানুষেরা কর্মহীন দিন পার করছে। হাতে কাজ না থাকায় ও ঘরের সঞ্চিত খাবার ফুরিয়ে যাওয়ায় এ মানুষগুলি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে ত্রাণ সহায়তার উপর।

এ অবস্থায় একবেলা আধবেলা খেয়েই দিন পার করছেন অনেক পরিবার।
এদিকে সরকারী হিসাব মতেই জেলায় প্রায় সোয়া ৬ লাখ মানুষ বন্যা দুর্গত হয়ে শুকনো খাবারের সংকট নিয়ে বসবাস করলে জেলা প্রশাসন থেকে তাদের জন্য মাত্র ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

এদিকে জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা যায়,বন্যার পানি কমার কোন সুযোগ তারা দেখছেন না । ৯ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকেই যাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ১১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এতে করে বন্যার পানির চাপে জেলার রৌমারী, রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী, চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধ ছিড়ে ও সড়ক-মহাসড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে তা ঢুকে পড়ছে উঁচু এলাকার গ্রামও হাটবাজারগুলোতে ।

এ অবস্থায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় বন্যা দুর্গত মানুষেরা শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে খেয়ে না খেয়ে অবর্ণনীয় দিন পার করছে।

কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো: হাফিজুর রহমান জানান, বন্যা কবলিত পরিবারগুলো শুকনো খড়ি ও চুলার অভাবে রান্না করতে পারছেন না। এজন্য ৯ লাখ টাকা জিআর ক্যাশ দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বন্যা কবলিতদের মধ্যে শুকনো খাবার কিনে দেয়া হচ্ছে। নতুন করে ৪ লাখ ৮৮ হাজার পরিবাকে দেয়ার জন্য ভিজিএফ বরাদ্দ পাওয়া গেছে যা দ্রুত বিতরণ করা হবে। এছাড়াও আজ বুধবার নতুন করে ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়ার কথা রয়েছে। বরাদ্দ পেলে সাথে সাথেই বিতরণ করা হবে ।

দুর্ভোগ/বার্তাবাজার/আরএইচ

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর