সোমভাগ ইউনিয়নে ইজিপিপি ২য় পর্যায়ের প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন

নানা প্রতিকূলতার ভিতর দিয়েও ধামরাইয়ের সোমভাগ ইউনিয়নে ২০১৮-১৯ ইং অর্থবছরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী প্রকল্প (ইজিপিপি) এর ২য় পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (১৭ জুলাই) সরেজমিন প্রকল্পস্থানে গিয়ে প্রকল্প তত্বাবধায়ক ইউপি সদস্যদের সাথে কথা বলে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন প্রতিকূলতার বিষয় সম্পর্কে জানা যায়।

এর আগে ধামরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নিকট থেকে তথ্য অধিকার আইনে উক্ত অর্থবছরে এই ইউনিয়নে আসা সরকারী বরাদ্দের তালিকা চাওয়া হয়। সেগুলির অনুসন্ধানে গেলে বিষয়গুলি সামনে আসে।

২০১৮-১৯ ইং অর্থবছরে মোট পাঁচটি প্রকল্পের বিপরীতে সরকারী বরাদ্দ আসে। এগুলি হলো-

(১) ২নং ওয়ার্ডের নূর আলীর বাড়ির নিকট থেকে খায়রুলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণ। এই কাজটিতে ২ লক্ষ (২,০০,০০০/-) টাকা সরকারী বরাদ্দ আসে, মোট ২৫ জন শ্রমিক ৪০ দিনে প্রতিদিন ২০০ টাকা হাজিরায় কাজটি শেষ করে। এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ নাসির উদ্দিনের তত্বাবধানে কাজটি সম্পন্ন হয়।

(২) দেপাশাই বড়পাড়া মোতালেবের বাড়ির নিকট থেকে গেদ্দুসের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণ কাজে মোট ২ লক্ষ (২,০০,০০০/-) টাকা সরকারী বরাদ্দ আসে। ইউনিয়নের ৪,৫ ও ৬ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য নিলুফা বেগমের তত্বাবধানে প্রকল্পের কাজটি সম্পন্ন হয়। মোট ২৫ জন শ্রমিক ২০০ টাকা প্রতিদিন পারিশ্রমিকে ৪০ দিনে কাজ শেষ করে।

(৩) দক্ষিণ দেপাশাই হাসানের বাড়ির নিকট থেকে লোকমানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণ কাজটি সরকারী বরাদ্দ ২ লক্ষ (২,০০,০০০/-) টাকার বিপরীতে মোট ৪০ দিনে ২৫ জন শ্রমিক দৈনিক ২০০ টাকা পারিশ্রমিকে সম্পন্ন হয়। এই কাজটির তত্বাবধান করেন ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুল হক।

(৪) ফুকুটিয়া নূর মোহাম্মদের বাড়ির নিকট থেকে লাল মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণ কাজে ২ লক্ষ (২,০০,০০০/-) টাকা সরকারী বরাদ্দ আসে। ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আবুল কালামের তত্বাবধানে প্রকল্পের কাজটি সম্পন্ন হয়। মোট ২৫ জন শ্রমিক দৈনিক ২০০ টাকা পারিশ্রমিকে ৪০ দিনে কাজটি শেষ করে।

(৫) বানেশ্বর গোপালের বাড়ি হতে উজ্জ্বলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত সংযোগ গাওয়াইল রশিদের বাড়ির নিকট হতে আমিনুলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণ কাজে মোট ৫ লক্ষ ৭৬ হাজার (৫,৭৬,০০০/-) টাকা সরকারী বরাদ্দ আসে। মোট ৭২ জন শ্রমিক দৈনিক ২০০ টাকা পারিশ্রমিকে ৪০ দিনে কাজটি শেষ করে। এই কাজটি দুইজন ইউপি সদস্যের তত্বাবধানে সম্পন্ন হয়। ৯ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোঃ রেজাউল করিম এবং ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য জুলেখা বেগম এই প্রকল্প কাজের বাস্তবায়ন করেন।

প্রকল্প স্থানগুলিতে সরেজমিন ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকারী বিধি মেনে কাজগুলি হতদরিদ্র শ্রমিকদের দিয়েই করানো হয়েছে। এখানে ‘ভেকু’ (খননযন্ত্র) ব্যবহার করা হয়নি।

তবে প্রকল্পগুলির তত্বাবধায়কগণ আক্ষেপ করেন কাজগুলি শেষ করতে গিয়ে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা সামনে আসায়। এব্যাপারে ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আবুল কালাম বলেন, আমরা যখন কাজ করেছি তখন দৈনিক ৯০০/১০০০ টাকা ছাড়া শ্রমিক পাওয়া যায় নাই কারণ ধান কাটার মওশুম ছিলো। আর এই কাজে সরকারী বরাদ্দ আসে মাত্র ২০০ টাকা প্রতিদিন প্রতি শ্রমিকের জন্য। সেখান থেকে আবার ২৫ টাকা কেটে রাখা হয়। আবার ভেকু দিয়েও মাটি কাটা যাবে না। তাহলে সরকারী বরাদ্দ হিসেবে আসা প্রতিদিন ২০০ টাকা মজুরি দিয়ে কাজ কীভাবে শেষ করা সম্ভব?
সাধারণ অবস্থায়ও তো প্রতিদিনের একজন শ্রমিকের মজুরি ন্যুণতম ৪০০/৫০০ টাকার কম নয়।

ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুল হক জানান, রাস্তার কাজ করতে গিয়ে অনেক বাঁধা আসে। কেউ কেউ বাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা নিতে দেয় না কিংবা তাদের জমি থেকে রাস্তার জন্য মাটি দিতে চায় না। সেক্ষেত্রে অন্য জায়গা থেকে মাটি কিনে আনতে হয় আমাদের। এখন সরকার শ্রমিকের মজুরি ২০০ টাকা দিয়েই খালাস, মাটি কেনা ও তা প্রকল্পের জায়গায় আনার পরিবহন খরচ তো আমাদের দেয় না। তাহলে এই বাড়তি খরচের ব্যয়ভার কিভাবে মিটাবো আমরা?

সোমভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আজাহার আলী জানান, নির্দিষ্ট সময়সীমায় এই অর্থবছরে আসা প্রকল্পের কাজগুলি শেষ করেছি। এলাকাবাসীর উন্নয়ন ও কিছু গরীব শ্রমিকের কর্মসংস্থানের জন্য সরকারী বরাদ্দের অর্থ সম্পূর্ণটাই খরচ হয়েছে প্রকল্পগুলিতে। তবে শ্রমিকের উচ্চ পারিশ্রমিক এখানে একটা বিষয় হিসেবে দাঁড়ালেও আমাদের নিজস্ব অর্থ ভর্তুকি দিয়ে কাজগুলি শেষ করা হয়েছে এটাই স্বস্তির ব্যাপার।

ধামরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামের নিকট এই ইউনিয়নের প্রকল্পের কাজগুলির বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে জানানো হয় এবং শ্রমিকের উচ্চ পারিশ্রমিকের বিপরীতে সরকারী বরাদ্দের অপ্রতুলতার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট উপস্থাপন করবেন বলে জানান।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর