অনুপ্রেরণার বাতিঘর অদম্য এক নারী !

নামটি তার নাজমুন নাহার। প্রায় দুই দশক ধরে কর্মজীবনে কর্মময় ব্যস্ত জীবন।পারিবারিক চাপে প্রথমে পোশাক শ্রমিক দিয়ে শুরু তার কর্ম।এরপর কখনো দেশি আবার কখনো আন্তর্জাতিক সংগঠনের ডে লেবার, হেল্পার, কন্ট্রাক্টর, সুপারভাইজার আবার কখনো ড্রাইভার হিসেবে। দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। এভাবেই কেটেছে ১৯টা বছর।

মাঝখানে কিছু বুঝে উঠার আগেই এলাকার এক দিনমুজুর ছেলের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়।প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্কুলের গন্ডি পেরুতে ২০০৩ ও ২০০৭ সালে এসএসসি পরীক্ষার আসরে অংশ নেয়ার চেষ্টা ছিল আপ্রাণ। কিন্তু কর্মজীবনের চাপে সেটাও সম্ভব হয়ে উঠেনি। দু’বারই পরীক্ষার ঠিক আগ মুহুর্তে এসে পেশার চাপে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় এসে পরীক্ষা দেয়া হয়নি। তাতেও দমে যাওয়ার মেয়ে নন রেশমা। এরই মধ্যে পেটে সন্তান আসে।পরিবার ও স্বামীর পক্ষ থেকে অনেক বাধা-বিপত্তি আসতে থাকে এসব দৌড়া-দৌড়ি আর পুরুষদের পেশা ছেড়ে মেয়ের মতো চলাফেরার জন্য। কিন্তু তাতেও রেশমা থামেনি। শেষ পর্যন্ত সন্তান সম্ভবা মেয়েকে রেখে স্বামী আলাদা হয়ে যান। নিজ পরিবারও অনেকটা সেরকমই। সে বারেও দমে যাননি তিনি। চলতে থাকে কেয়ার বাংলাদেশ, অক্সফামসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি এনজিও ও দাতব্য সংগঠনের সঙ্গে কাজ করে। জীবনের প্রতিটি ঘাত-প্রতিঘাত থেকে শিখতে থাকেন অনেক কিছু আর চলতে থাকেন সামনের দিকে।

পাশের কলিগ কিংবা বান্ধবী যখন মাসের শেষে জমানো বাড়তি টাকা দিয়ে দামি গহনা, পোশাক, ফার্ণিচার কিংবা মোবাইল কিনেছেন, কিংবা অবসর সময়ে ফেসবুক-টুইটার নামক সোস্যাল মিডিয়ার মোহে পড়ে জীবনকে নষ্ট করছেন, অপরাজিতা এই নারী তখন সেই টাকা ও মূল্যবান সময় দিয়ে কখনো কম্পিউটার কোর্স, বৃটিশ কাউন্সিলে ইংলিশ কোর্স কিংবা ড্রাইভিং কোর্স করেছেন। আর সমাজে নারীদের শুধু অবলা বলে যারা বিভিন্ন ধরণের টিটকারী করেছেন চলাফেরার প্রতিটি মুহুর্তে তাদের দেখিয়ে দিতে চেয়েছেন যে মেয়েরাও পারে। মেয়েদের আলাদাভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই। হে সমাজ ব্যবস্থা তোমার দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলাতে হবে।

বয়স এখন ৩৫ বছর । ছোট্ট মেয়ের বয়স ৯ বছর। মেয়ে গুলশানের অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ে। মা আর একমাত্র মেয়েরে সাথে বাসা নিয়ে গুলশানে থাকেন। কিন্তু সেখানে সপ্তাহ বা মাসের বেশির ভাগ সময়ই থাকা হয় না। কারণ পেশার কারণে থাকতে হয় কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায়। ড্রাইভার থেকে পদন্নোতি পেয়ে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম এর গাড়ি রক্ষাণা্বেক্ষন (ভেহিকল) শাখার সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। মাস শেষে যা পান তাও প্রায় ৬০,০০০/- (ষাট) হাজারের কাছাকাছি।

পেশাজীবনে অনেক অভিজ্ঞতা ও ট্রেনিং কোর্স সমপন্ন করলেও সব সময়ই নাজমুন নাহারের মনে হয়েছে এতোকিছুর পরেও তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটাও জরুরি। তাই চলতি বছর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শেষবারের মতো এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হওয়ার পর আজ এসেছিলেন ঢাকার সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান মিরপুর এলাকায় অবস্থিত সাইক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। অটোমোবাইলে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা করবেন। জীবনের স্বপ্ন সামনে আরও অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার।সেই স্বপ্নকে সফল করতে ভর্তি হলেন ডিপ্লোমা ইন-অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ।

সাইক ইন্সিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট এন্ড টেকনোলজি কলেজের এক্সিকিউটিব এ্যাসিসটেন্ট এডমিন অফিসার আরশাদুল বাড়ি বলেন, আমি চেষ্টা করেছি তার জীবনের সংগ্রামের আদ্যপ্রান্ত সম্পর্কে। বললেনও খুব স্বত:স্ফুতর্তার সঙ্গে(কথা বলেছেন বেশি ইংলিশে, কারন বাংলা একটু কম বলতে পারেন)। পেলাম শিক্ষক হয়েও ছাত্রীর কাছ থেকে অনেক অনুপ্রেরণা। জীবনে অনেক কিছু শেখার আর জানার আছে এসব উদ্যোমী অপরাজিতাদের কাছ থেকে।

এগিয়ে যাক নাজমুন নাহার। তাদের অনুসরণ করেই পাল্টাবে আমাদের সমাজ, ব্যবস্থা, এগিয়ে যাবে দেশ নারীর ক্ষমতায়নের দিকে, পাল্টাবে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি। খুলে যাবে অনেক শিক্ষিত-বেকার যুবক-যুবতীদের চোখ। তাদের মত অদম্য নারীরাই পারবে সমাজটাকে পাল্টাতে, দেশ উন্নত করে সুনাম বয়ে আনতে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর