আপুকে ২ কারণে হত্যা করা হয়েছে: আদালতে নুসরাতের ভাই

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় অষ্টম দিনে নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হানের জেরা শেষ হয়েছে। আদালতে তিনি বলেন, আপুকে দুই কারণে হত্যা করা হয়েছে।

সোমবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান সাক্ষ্য দিলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল ৫টায় পর্যন্ত চলে এ জেরা।

এদিকে কর্মদিবস শেষ হয়ে যাওয়ায় পূর্ব নির্ধারিত সোনাগাজী বাজারের ফার্মেসি দোকানদার জহিরুল ইসলামের সাক্ষ্য মঙ্গলবার সকাল থেকে গ্রহণ করা হবে।

মঙ্গলবার ফার্মেসি দোকানদার জহিরুল ইসলামসহ মাদ্রাসার পরীক্ষার হল পরিদর্শক মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আদালত।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার পর এ মামলার অভিযুক্ত ১৬ আসামিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ফেনীর কারাগার থেকে সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করা হয়।

সরকারি ছুটি ছাড়া প্রতিদিনই এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম চলছে। এ নিয়ে হত্যা মামলার ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু জানান, এ পর্যন্ত ৯ জনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়েছে। আজ নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান আদালতে সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছেন।

রাশেদুল হাসান রায়হান আদালতে ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজের যৌন হয়রানি ও ৬ এপ্রিলের ঘটনা বর্ণনা করেছেন।

রায়হান আদালতে বলেন, শাহাদাত হোসেন শামিম আমার বোনের সঙ্গে প্রেম করতে ব্যর্থ হয়ে তার ক্ষোভ থেকে যায়। অন্য দিকে যৌন হয়রানি মামলাটি আমরা প্রত্যাহার না করায় অধ্যক্ষ সিরাজের নির্দেশে আমার বোনকে তারা হত্যা করেছে। এ ছাড়াও অধ্যক্ষ সিরাজ আমার বোনের মতো অনেক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির করেছেন।

তার বোন বিভিন্ন সময় এ নিয়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছেন বলে রায়হান আদালতে বলেছেন।

পরে আসামি পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু, কামরুল হাসান, কাজী বুলবুল আহম্মেদ সোহাগসহ আসামি পক্ষের প্রায় ২০ জন আইনজীবী সাক্ষীদের জেরা করেন।

তারা বলেন, নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান আদালতে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাতে অনেক গরমিল রয়েছে। আমরা আদালতকে তাদের এই গরমিলের বক্তব্য ধরিয়ে দিয়েছি। বলেছি তাদের কথায় কোনো সত্যতা নেই।

মঙ্গলবার সোনাগাজী বাজারের ফার্মেসি দোকানদার জহিরুল ইসলাম এবং ৬ এপ্রিল সোনাগাজী মাদ্রাসায় পরীক্ষার হল পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ জুন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার কাজ শুরু হয়।

পরে রাফির বান্ধবী নিশাত সুলতানা ও সহপাঠী নাসরিন সুলতানা, মাদ্রাসার পিয়ন নুরুল আমিন নৈশপ্রহরী মো. মোস্তফা, কেরোসিন বিক্রেতা লোকমান হোসেন লিটন, বোরকা দোকানদার জসিম উদ্দিন ও দোকানের কর্মচারী হেলাল উদ্দিন ফরহাদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়।

অন্যদিকে মঙ্গলবার একই আদালতে নুসরাতকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় করা মামলাটির পিবিআই’র করা তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

প্রসঙ্গত, সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে ৬ এপ্রিল গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।

১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে সে মারা যায়। এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই নোমান বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়।

২৯ মে আদালতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে। ৩০ মে মামলা ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে স্থানান্তর হয়।

১০ জুন মামলাটি আমলে নিয়ে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর