ভাড়ারিয়া ইউনিয়নে ইজিপিপি প্রকল্পে ভেকু ব্যবহারের অভিযোগ

ধামরাইয়ের ভাড়ারিয়া ইউনিয়নে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে (ইজিপিপি) অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী ২য় পর্যায়ের প্রকল্পে সরকারী বিধি না মেনে ‘ভেকু’ (খনন যন্ত্র) ব্যবহার করে কাজ শেষ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধামরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার থেকে তথ্য অধিকার আইনে প্রাপ্ত তথ্যের সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে এই অনিয়মের বিষয়টি জানা যায়।

ধামরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামের থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নে ২০১৮-২০১৯ ইং অর্থবছরে ইজিপিপি ২য় পর্যায়ে মোট ৪টি প্রকল্পে সরকারী বরাদ্দ আসে। প্রকল্পগুলি হলো-

(১) সাইদপাড়া জসীমের বাড়ি হতে কালী মন্দির পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নির্মাণ। এই প্রকল্পে মোট ২৫ জন শ্রমিক দৈনিক ২০০/- মজুরিতে ৪০ দিনে কাজ শেষ করার শর্তে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ টাকা) সরকারী বরাদ্দ আসে। প্রকল্পটি ইউনিয়নের ১,২ ও ৩ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য হামিদা বেগমের তত্বাবধানে সম্পন্ন হয়। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এই প্রকল্পের কাজ সরকারি বিধি মেনে শ্রমিক ব্যবহার করেই শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে।

(২) কাটাবই সামছুলের বাড়ি হতে মানছুরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নির্মাণে সরকারী বরাদ্দ আসে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ টাকা)। ৪০ দিনে মোট ২৫ জন শ্রমিক দৈনিক ২০০/- মজুরিতে কাজটি শেষ করে। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে প্রকল্পস্থানের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে এই কাজটিও সরকারী বিধি মেনে সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে। ইউনিয়নের ৪,৫ ও ৬ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য নুরজাহান বেগম এই প্রকল্পের কাজটি তত্বাবধান করেন।

(৩) কাকরান সাইফুলের বাড়ি হতে কাকরান কবরস্থান পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নির্মাণের কাজটি ৪০ দিনে মোট ৪৮ জন হত দরিদ্র শ্রমিকের দৈনিক ২০০/- মজুরিতে শেষ করার কথা থাকলেও এই প্রকল্পটিতে সরকারী বিধি মানা হয় নাই। সরকারী বরাদ্দ হিসেবে এ প্রকল্পে আসে মোট ৩,৮৪,০০০/- (তিন লক্ষ চুরাশি হাজার টাকা)। ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য নুসরাত জাহানের তত্বাবধানে এ কাজটি নির্ধারিত ৪৮ জন হত দরিদ্র শ্রমিকের পরিবর্তে ‘ভেকু’ (খনন যন্ত্র) ব্যবহার করে কাজটি সম্পন্ন করা হয়। সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে প্রকল্পস্থানের স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা ভেকু দিয়ে মাটি কেটে এই প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে বলে এই প্রতিবেদকের নিকট ভিডিও বক্তব্য দিয়েছেন।

(৪) তেতুলিয়া জান্নাতুল বাকি কবরস্থান হতে নাগর আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নির্মাণের কাজটি ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রউফের তত্বাবধানে সম্পন্ন হয়। মোট ২৫ জন হত দরিদ্র শ্রমিকের ৪০ দিনে দৈনিক ২০০/- মজুরি হারে এ প্রকল্পে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ টাকা) সরকারী বরাদ্দ আসে। সরেজমিন গিয়ে প্রকল্পস্থানের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই প্রকল্পের কিছু অংশের কাজ ভেকু দিয়ে এবং বাকি অংশ শ্রমিক দিয়ে করা হয়েছে।

এব্যাপারে ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য নুসরাত জাহানের কাছে প্রকল্পটিতে ভেকু ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি চেয়ারম্যানের নিকট এ বিষয়ে জেনে নিতে বলেন।

ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহ আলমের নিকট উক্ত দুইটি প্রকল্পে ভেকু ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাকরান কবরস্থান পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নির্মাণে ভেকু ব্যবহার না করে উপায় ছিল না। এই জায়গার পাশে খাল ও জলাশয় থাকার কারণে মাটি কাটতে সমস্যা হচ্ছিলো। আর মাত্র ২০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিকেরা কাজ করতে চায় না, এজন্যই ভেকু ও শ্রমিক মিলিয়ে ‘আ্যাডজাস্ট’ করেই কাজ করতে হয়েছে।

ধামরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামের নিকট ভাড়ারিয়া ইউনিয়নে হতদরিদ্র প্রকল্পে বিধি না মেনে ভেকু ব্যবহারের বিষয়টি জানালে তিনি বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর