জনগণই আমার আসল পরিবার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার শুধু একটাই কাজ- তা হচ্ছে জনগণকে উন্নত জীবন দেওয়া। দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চান তিনি। তার লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া।

চীনের রাষ্ট্রীয় ইংরেজি ভাষার চ্যানেল সিটিজিএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। চীন সফরকালে দেওয়া সাক্ষাৎকার গতকাল শনিবার চ্যানেলটির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

সিটিজিএনের এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, টাইম ম্যাগাজিনে ২০১৮ সালের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ জনের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরাধিকার বহন করছেন তিনি। ১৯৭৫ সালে পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে হারানোর বেদনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি দেশের উন্নয়নে কাজ করতে ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ফিরে আসেন। তিনি চেয়েছেন তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমার বাবা কী করতে চেয়েছিলেন তা যখনই ভাবি তখনই আমি তার ডায়েরি পড়ি। সেটা আমার অনুপ্রেরণা। আমার বাবা সবসময় জনগণের কথা ভাবতেন। কারণ তারা ছিল খুবই গরিব। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ ছিল গরিব। এই জনগণের জন্যই বাবা আত্মনিয়োগ করেন। তিনি জনগণের দুঃখ-কষ্ট জানতেন। তাদের উন্নত জীবন দিতে চেয়েছিলেন তিনি। তার কাছ থেকে আমরা দেশকে ও দেশের মানুষকে ভালোবাসতে শিখেছি। তিনি আমাকে জনগণের জন্য আত্মনিয়োগ করতে বলেছিলেন।’

সিটিজিএনের সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আপনি তো বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয় এবং একজন ক্ষমতাধর নারী।’ প্রধানমন্ত্রীর বিনয়ী জবাব, ‘আমি অনুভব করি জনগণের সেবা করতে হবে আমাকে। অবশ্যই জনগণও আমাকে ভালোবাসে। আপনি জানেন, আমি আমার বোন ছাড়া পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি। তবে জনগণই আমার আসল পরিবার। তারা আমার আপনজন।’

বিভিন্ন ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর অংশগ্রহণে সদ্য সমাপ্ত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এখানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। তারা নিজেদের মধ্যে ব্যবসার নানা পরিকল্পনা নিয়ে মতবিনিময় করেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন আসলে পৃথিবীটা গ্লোবাল ভিলেজ তথা পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। এখানে কেউ একা চলতে পারে না। আমাদের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ আর জীবনমান উন্নয়ন করতে আমি সবসময়ই আঞ্চলিক সংযোগকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চীন ও প্রতিবেশী অন্য দেশগুলোর সঙ্গে কী করে আরও বেশি সহযোগিতা বাড়ানো যায় সে বিষয়ে কাজ করছি। সত্যি বলতে কি, চীন তো আমাদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেই যাচ্ছে। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে চীনের অনেক কোম্পানিই আমাদের সঙ্গে কাজ করছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য সম্প্রসারণে আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য আরও নতুন পথ খুঁজছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার মিলে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যেটাকে বলা হয় বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডোর। তিনি আশা করেন, এই চুক্তি ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।

সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী চীনের অর্থনৈতিক উন্নতির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। চীনের উন্নতির ফলে তার প্রতিবেশীরাও লাভবান হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ভীষণ সন্তুষ্ট। এটা ভিন্ন ধরনের এক সন্তুষ্টি। আমার প্রতিবেশী যথেষ্ট উন্নতি করছে। আমরা চীনের কাছ থেকে শিখতে পারি এবং একযোগে কাজ করতে পারি। সত্যি কথা বলতে কি, ৭০ বছর আগে যখন চীনের পুনর্জন্ম হয়, তখন কী অবস্থা ছিল তা কল্পনাও করা যায় না। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই চীন উন্নতি করেছে। এটা গর্ব করার মতো বিষয়। আমি অবশ্যই বলব যে এটা অসাধারণ অর্জন।’

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর