এক মাসের ব্যবধানেই সড়কে পিষ্ট ৫ মেধাবী স্বপ্ন

মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে সড়কে। একের পর এক চালক ও পথচারীর উদাসীনতায় ঘটছে দুর্ঘটনা, খালি হচ্ছে মায়ের কোল। গত এক মাসের ব্যবধানে সড়কে প্রাণ গেছে ৫ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের। এদের মধ্যে চলতি মাসেই নিহত হয়েছেন দুইজন। গত মাসে নিহত হয়েছেন ছাত্রীসহ ৩জন।

নিহতদের মধ্যে দুইজন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র। একজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অন্যজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। সর্বশেষ রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী।

নুসরাত চৌধুরী নিশাত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী নুসরাত চৌধুরী নিশাত (২৩) সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ১২ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি তিনি না ফেরার দেশে চলে গেছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তিনি মারা যান।

নুসরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সম্মান (২০১২-১৩ সেশন) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া গ্রামের মৃত কবির হোসেন চৌধুরী মেয়ে। এক কন্যা সন্তানের জননী নুসরাত ২১ জানুয়ারি সকালে পরীক্ষা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে ভাটিয়ারি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। মাথায় গুরুতর আঘাত লেগে কোমায় চলে যান নুসরাত। অস্ত্রোপচার শেষে প্রথমে নুসরাতকে নগরের একটি বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের আইসিইউতে রাখা হয়।

কাজী শেহজাদ হক সাম্য
নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির এই ছাত্র নিহত হয়েছেন গত ৪ ফেব্রুয়ারি। তিনি বিবিএর ছাত্র ছিলেন। ময়মনসিংহে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।

জুলহাস জীম
মোটরসাইকেল চালানোই ছিল তার নেশা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোটরসাইকেলে করে একাধিকবার বগুড়ায় নিজের বাড়িতে গিয়েছেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি বন্ধুদের নিয়ে মোটরসাইকেলে করে ঘুরে বেড়ানো, অাড্ডা, হৈ-চৈয়ে মেতে থাকা উচ্ছ্বল সেই ছেলেটির চঞ্চলতা থামিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘাতক পিকআপের চাপায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনি ২৪ ফেব্রুয়ারি। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের কামারখন্দ উপজেলার ওভারব্রিজ এলাকায় পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় নিহত হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এএসএম জুলহাস জীম। এ সময় তার বড় ভাই একেএম জাকারিয়া আহত হন। নিহত জুলহাস বগুড়া জেলার বিন্দাবন পাড়ার তারাজুল ইসলামের ছেলে।

সাকিব চৌধুরী তুর্য
নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির এই ছাত্রের শখ ছিল ঘুরে বেড়ানো। নিজেই ড্রাইভ করে শখের গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াতেন তিনি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতেন। পড়াশোনার ফাঁকে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠতেন। হাসিখুশি সেই ছেলেটির উচ্ছ্বলতা চিরজীবনের জন্য থেমে গেছে। একটি দুর্ঘটনায় তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এই ছেলেটি আর কোনদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আড্ডায় মেতে উঠবে না। পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাবে না। বাবা-মায়ের কাছে এটা ওটা নিয়ে বায়না ধরবে না। সড়ক দুর্ঘটনায় থেমে গেছে একটি সম্ভাবনাময় স্বপ্ন।

জানা গেছে, গত ৫ মার্চ রাজধানীর প্রগতি সরণিতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তুর্য। তার মৃত্যুতে পরিবারে শোকের মাতম চলছে। থামছে না কান্না। পরিবারের মধ্যমনি এই ছাত্রের জন্য এখনও আঁতকে উঠেন তারা। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন প্রাইভেটকার ড্রাইভ করার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেটি সড়কের পাশে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ধাক্কা দেয়। এতে প্রাইভেটকার দুমড়ে-মুচড়ে নিহত হন ওই তুর্য। ভাইয়ের বিয়ের কেনাকাটা করতে গিয়ে ০৫ মার্চ মঙ্গলবার গভীর রাতে রাজধানীর প্রগতি-সরণিতে ওই দুর্ঘটনায় পড়েন তুর্য। এ ঘটনায় ফারদিন খান (২৪) নামে প্রাইভেটকারের অপর যাত্রী তুর্যের মামাতো ভাই গুরুতর আহত হয়েছেন।

গুলশান থানার এসআই আল হেলাল জানান, শাকিল আহমেদ তুর্যের বড় ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে জরুরি প্রয়োজনে মামাতো ভাইকে নিয়ে বসুন্ধরা যাচ্ছিলেন। এসময় প্রগতি সরণিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি একটি বিদ্যুৎ খুঁটিকে সজোরে ধাক্কা মারে। এতে বিদ্যুৎ খুঁটিটি গোড়া উপড়ে প্রায় কয়েক গজ দূরে সড়ে যায়। প্রাইভেটকারটির দুমড়ে-মুচড়ে ফুটপাত অতিক্রম করে একটি দোকানের শাটার ভেঙে ফেলে। এসময় গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারটি খুলে রাস্তায় পড়ে যায়। অল্পের জন্য এটি বিস্ফোরিত হয়নি। পথচারীরা এসে গাড়ি থেকে আহত দুজনকে উদ্ধার করে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোরে মারা যান তুর্য।

আবরার আহমেদ চৌধুরী
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) রাজধানীতে বাসচাপায় নিহত হয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ওই ছাত্র। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী ছিলেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে সুপ্রভাত পরিবহন নামের বাসের চাপায় নিহত হন আবরার আহমেদ চৌধুরী নামে ওই ছাত্র। তার বাবা আরিফ আহমেদ চৌধুরী। এ ঘটনায় বাসচালক সিরাজুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ। দুর্ঘটনার পর যমুনা ফিউচার পার্কের সামনের রাস্তা অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের বহনকারী বিইউপির একটি বাস সকালে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে আবরার বাসে উঠতে যাচ্ছিলেন। এ সময় পাশে থাকা গাজীপুরগামী সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই আবরারের মৃত্যু হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর