বরিশালের আগৈলঝাড়াকে মামলা মুক্ত থানা ঘোষণা

প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে দুই লক্ষাধিক জনগোষ্ঠি অধ্যুষিত বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া থানাকে মামলা মুক্ত থানা হিসেবে জেলা পুলিশের ঘোষণা। এখন মামলা শুন্য আগৈলঝাড়া থানা। শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই হয়েছে আগৈলঝাড়া থানায়। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে বরিশাল রেঞ্জের মধ্যে সর্বপ্রথম আগৈলঝাড়া থানাকে মামলা শুন্য ঘোষণা করলেন বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন (পিপিএম)।

বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে নিয়মিত পরিদর্শনের অংশ হিসেবে আগৈলঝাড়া থানা পরিদর্শন করেন। ডিআইজি’র থানায় আগমনে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিসিক্ত করেন থানার কর্মকর্তারা। এসময় থানা পরিদর্শক মো. গোলাম ছরোয়ারের নেতৃত্বে ডিআইজিকে গার্ড অফ অনার প্রদান করেন থানা পুলিশের একটি চৌকস দল। পরে ডিআইজি থানা পরিদর্শণ করে পরিদর্শন বহিতে স্বাক্ষর করেন।

এসময় তার সাথে ছিলেন রেঞ্জ পুলিশ সুপার মো. সোয়েব আহম্মেদ, অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (প্রশাসন) শাহজাহান হোসেন, অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (গৌরনদী সার্কেল) আব্দুর রব হাওলাদারসহ উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা।

পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন থানা পরিদর্শনকালে থানায় কোন মামলা, জিডি ও পুলিশ ক্লিলিয়ারেন্স পেনডিং না থাকায় বরিশাল রেঞ্জের মধ্যে আগৈলঝাড়া থানাকে প্রথম মামলা শুন্য থানা হিসেবে ঘোষণা করেন। পরিদর্শনে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সন্তোষ প্রকাশ করে থানার পরিদর্শক মো. গোলাম ছরোয়ারসহ সকল অফিসারদের বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি।

এর আগে ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের সেরাল গ্রামের বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের খোঁজ খবন নেন এবং প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে তাদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করে তাদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে বিভিন্ন ফলমুল তাদের হাতে তুলে দেন। পরে ডিআইজ সেরাল মসজিদে যোহরের নামাজ আদায় করেন। এর পরে জাতির পিতার ভাগ্নে (মন্ত্রী) আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র বাড়িতে গিয়ে সেখানে তাঁর দাদা ও দাদীর কবর জিয়ারত করেন তিনি।

এসময় আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ, সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মো. লিটনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ন্যায় বিচারের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে মানুষ প্রথমেই যান স্থানীয় থানায়। বছরের পর বছর যাবত মামলার তদন্ত কার্যক্রম ঝুলে থাকায় ন্যায় বিচার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে ভোগান্তিতে পরেন মামলার বাদী-বিবাদীসহ সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীরা।

আর মামলার দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে কয়েকবার তদন্তকারী কর্মকর্তা রদবদলের কারনে গুরুত্বপূর্ণ অনেক মামলার আলামত পর্যন্ত নষ্ট হয়। মামলায় সময় ক্ষেপনের জন্য আইনের ফাক-ফোকর খুঁজে, অনেক সময় তদন্ত কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে সহজেই পার পেয়ে যায় বিবাদীরা। ফলে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয় ক্ষতিগ্রস্থরা।

মামলা, জিডি, ক্লিয়ারেন্সসহ সবকিছু কিভাবে শূন্যের কোঠায় আনা সম্ভব হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে থানা পরিদর্শক মো. গোলাম ছরোয়ার জানান, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলা পুলিশ সুপারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় মামলায় বিচার প্রার্থীদের কথা চিন্তা করে দ্রুত ন্যায় বিচারের স্বার্থে থানার অফিসারদের সহযোগীতায় চলতি মাসের মামলাসহ পেনডিং মামলা, জিডি ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের তদন্ত শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভভ হয়েছে। বরিশাল রেঞ্জের মধ্যে এই প্রথম কোনো থানায় কোনো মামলা, জিডি, ক্লিয়ারেন্স মুলতবি না থাকার ইতিহাস তৈরী হয়েছে।

ওসি আরও জানান, মামলা রুজুর পরে তদন্ত সম্পন্ন করতে অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অনেক মামলায় দ্রুত ডাক্তারি সনদ গ্রহন, বিশেষজ্ঞ সনদ ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের মামলা রেকর্ডের পর পরই সরাসরি চিকিৎসকদের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত রিপোর্ট পাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে রিপোর্ট পাওয়া মাত্র তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হচ্ছে। যেগুলোর রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না সেগুলোর জন্য ওই সকল কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে সমন্বয় করা হয়েছে।

থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, থানায় বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ১জন, পুলিশ পরিদর্শক ১ জন, এসআই রয়েছেন ১১জন, এএসআই ৮জন, কনস্টেবল ২৬জন। চলতি সেপ্টেম্বর মাসে থানায় ১১টি মমলা দায়ের হয়। এই মাসে সবগুলোর তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছরে থানায় রুজু করা ১০৬টি মামলার মধ্যে ২২টি মামলায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের রিপোর্ট না পাওয়ায় আদালতে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা যায় নি। বর্তমান মাসে ২টি পিটিশনসহ চলতি বছরে ৯টি কোর্ট পিটিশন এর মধ্যে সবগুলোর রিপোর্ট আদালতে দাখিল করা হয়েছে।

২৯,২৩২টি পরিবারভুক্ত দুই লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর আবাস এলাকা আগৈলঝাড়া থানা। গড়ে এই থানায় মাসে ১৫টি মামলা দায়ের হয়। সাধারণত যেসব মামলা বেশি দায়ের হয় তার মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদক, হামলা-সংঘর্ষ, অপমৃত্যু, যৌতুক ও নির্যাতনের ঘটনাই বেশি। অপমৃত্যু মামলা ব্যতীত অধিকাংশ মামলা ১০ থেকে ২০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা সম্ভব। অহেতুক তদন্ত কর্যক্রম বিলম্ব হলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে যেমন জবাবদিহিতা করতে হয় তেমনি বাদী ও বিবাদীরা পরেন বিড়ম্বনায়। তাই সকল কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া আছে মাসের মামলা মাসেই রিপোর্ট দাখিল করার জন্য।

বর্তমানে থানার কোন কর্মকর্তাদের কাছে কোন মামলার তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের জন্য নেই তাই তারা দৈনন্দিন পুলিশি কার্যক্রম ও বিট পুলিশিং কার্যক্রমের ওপর বেশী গুরুত্বারোপ করছেন।

অটোমেশন পদ্ধতিতে থানার মামলা, জিডির হাল নাগাদ তথ্য রাখা হয়। সিডিএমএস পদ্ধতিতে শতভাগ মামলা তদন্ত হাল নাগাদ থাকে। জিডি, মামলাসহ কোন কিছুর তদন্ত মুলতবি নেই। আরেকটি কারন হচ্ছে মানবিক কারণ। মামলার জট কমাতে পারলে জনগন উপকৃত হলে মানবিক কারনেই মনে স্বস্তি পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিনে আগৈলঝাড়া থানাকে মামলা শুন্য ঘোষণা করায় পুলিশের সকল কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনগনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পরিদর্শক মো. গোলাম ছরোয়ার।

আরিফন রিয়াদ/বার্তা বাজার/এসবি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর