শাখা-সিঁদুরে দুই মাস বিয়ে ছাড়া সংসার, পালাল প্রেমিক

পীরগঞ্জে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে স্কুলছাত্রীকে ঢাকায় পালিয়ে নিয়ে গিয়ে মাথায় সিঁদুর আর হাতে সাঁকা পরিয়ে দু’মাস ঘর-সংসারের পর নিজ বাড়িতে এনে প্রেমিকাকে ফেলে প্রেমিক উধাও হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রেমিকের মা, চাচা ও চাচী মারপিট করে ওই স্কুলছাত্রীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের আদিবাসী পল্লী ওদলাপাড়া (চৈত্রকোল) গ্রামে।

প্রতারণার শিকার ওই স্কুলছাত্রী ও তার পারিবারিক সূত্র জানায়, ওদলাপাড়া গ্রামের বিগাল কুজুরের পুত্র লিমন কুজুরের সঙ্গে পাশ্ববর্তী মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের ধাপ আম্বাপাড়া গ্রামের ৯ম শ্রেণী পড়–য়া (করোনাকালীন সময়ে লেখা-পড়া স্থগিত) ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক বিয়ে অনুষ্ঠানে প্রথম পরিচয়, মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান। তারপর দীর্ঘ দু’বছর চুটিয়ে প্রেম। প্রেমকে চির অম্লান করে রাখতে তারা দু’জন গত ২০ জুলাই’২১ তারিখে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়।

ঢাকা নবীনগর এলাকায় লিমন তার এক বন্ধুর সহযোগীতায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ভাড়া বাসায় একসঙ্গে বসবাস করতে থাকে। তার আগে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় সকলের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে চতুর লিমন ওই স্কুলছাত্রীর মাথায় সিঁদুর আর হাতে সাঁকা পরিয়ে দেয়। লিমন ঢাকার নবীনগর এলাকায় ইলেক্ট্রিক আর ওই স্কুলছাত্রীটি সুতা’র কারখানায় কাজ করতো। বিভিন্ন সময়ে অন্তরঙ্গভাবে ছবিও তোলে লিমন তার মোবাইলে।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) রাতে ঢোল (ভাদাই) পূজায় অংশগ্রহনের জন্য তারা দু’জনে ঢাকা থেকে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পরদিন (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে লিমনের আপত্তি থাকা সত্বেও ওই স্কুলছাত্রীকে নিয়ে তার নিজ বাড়িতে নিয়ে গেলে তার পরিবার স্কুলছাত্রীকে বধু হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং লিমনকে তাৎক্ষনিকভাবে বাড়ি থেকে পালিয়ে দেয়। এদিকে অসহায় স্কুলছাত্রী লিমনের বাড়িতে কোন রকম ওই রাত যাপন করলেও পরদিন সকালে লিমনের মা শুকুমনি তিগ্যা, বাবা বিগাল কুজুর, চাচী রীনা ও চাচা দিনাস কুজুর মারপিট করে তাড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, পাড়ার বখাটে ছেলেদের লেলিয়ে দিয়ে নানাভাবে ভয়ভীতিও দেখানো হয় তাকে।

এ বিষয়ে লিমনের বাবা বিগাল কুকুর ও তার মা শুকুমনি জানান, ছেলে (লিমন) বাড়িতে ছেলে কোথায় গেছে আমরা জানিনা। তবে দু’পরিবারের মধ্যে সমঝোতার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

নিরুপায় স্কুলছাত্রী বিষয়টি তার পরিবারকে অবগত করালে বাবাসহ কয়েকজন ওই গ্রামে গিয়ে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় সমাজপতিদের নালিশ দেয়। একই দিন সন্ধ্যায় গ্রাম্য সালিস বসলে লিমনের পরিবার টাকার বিনিময়ে নিস্পত্তির প্রস্তাব দিলে সালিসী বৈঠক ভেস্তে যায় এবং সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে পরবর্তী বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্ত এ বৈঠকেও অভিযুক্ত লিমনকে হাজির না করিয়ে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে আবারো মিমাংসার জন্য বৈঠক ভেঙ্গে যায়।

মঙ্গলবার সকালে (২৮ সেপ্টেম্বর) ওই অসহায় স্কুলছাত্রীটির সঙ্গে কথা হলে জানায়, আমি তো সবই হারিয়েছি, সমাজে মুখ দেখাবো কি করে! তাকে (লিমনকে) যখন পাওয়াই হলোনা, তখন ধর্ষণ ও প্রতারণার দায়ে তার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেব।

এ ব্যাপারে ভেন্ডাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান বলেন, অভিযোগ পেলে আইনগত দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মোঃ আনজারুল হক/বার্তা বাজার/অমি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর