ডাকাতির কাজে বাঁধা দেওয়ায় ট্রেনের ছাদে দু’জনকে হত্যা

ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জগামী ট্রেনে ডাকাতদের হাতে দুজন নিহতের ঘটনায় ৫ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-১৪ এর একটি দল। শনিবার (২৫) সেপ্টেম্বর দিনগত রাতে তাদেরকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) র‍্যাব-১৪-এর অধিনায়ক উইং কমাণ্ডার রোকনুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে দশটার দিকে ঢাকা হতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেন জামালপুর স্টেশনে পৌঁছালে ট্রেনের যাত্রীরা ট্রেনের ছাদ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে ট্রেনের ছাদ থেকে গুরুতর আহত তিনজনকে উদ্ধার করা হয়। আহতদের তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার দুজনকে মৃত ঘোষণা করে।

যাত্রীদের ভাষ্যমতে, ডাকাতির মাধ্যমে তাদের হত্যা করা। হয়। উক্ত ঘটনায় ময়মনসিংহ জেলার রেলওয়ে থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয় যার মামলা নং-০৫/১৩ তারিখ- ২৪/০৯/২০২১খ্রিঃ ধারা- ৩৯৬ পেনাল কোড। এই ঘটনা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হলে তা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।।

উক্ত চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক ঘটনা সংঘটনের সাথে সাথেই র‍্যাব-১৪, ময়মনসিংহ গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পারিপার্শ্বিকতার বিচার ও নিহতের বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে নিবিড় তদন্তপূর্বক র‍্যাব-১৪ ঘটনার রহস্য উন্মোচন করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‍্যাব-১৪ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খুনসহ ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আশরাফুল ইসলাম স্বাধীন (২৬) নামে একজনকে ময়মনসিংহের শিকারীকান্দা এলাকা থেকে বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত ১টার দিকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে লুণ্ঠন হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চেইন অপারেশনের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িত ময়মনসিংহ সদরের বাঘমারার সাব্বির খানের ছেলে হাসান (২২) ও মোহাম্মদ (২৫), একই এলাকার মঞ্জুর ছেলে রিশাদ (২৮) এবং ধামাই এলাকার মৃত আশরাফ আলীর ছেলে রুবেল মিয়াকে(৩১) গ্রেফতার করে তাদের কাছ থেকেও লুট করা মোবাইল উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে তাদের দেখানো জায়গা থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ট্রেনে ডাকাতির উদ্দেশ্যে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ৪) জন পেশাদার ডাকাত দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে উঠে। রিশাদ, হাসান এবং স্বাধীন টঙ্গী স্টেশন থেকে তাদের সাথে যুক্ত হয়। ট্রেনটি ফাতেমা নগর স্টেশনে থামলে তাদের সাথে যোগ দেয় মোহাম্মদ ও তার একজন সহযোগী। ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলতে শুরু করলে তারা ইঞ্জিনের পরের বগি’র ছাদে বসে থাকা যাত্রীদের মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন লুট করা শুরু করে। ডাকাতির একপর্যায়ে ভিকটিম মৃত মোঃ সাগর মিয়া ও নাহিদ বাধা দিলে তাদের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু হয় এবং ডাকাতরা তাদের হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে ভিকটিমদ্বয়ের মাথায় এলোপাথারীভাবে আঘাত করে।

মৃত সাগর ও নাহিদ যখন আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ট্রেনের ছাদে লুটিয়ে পড়ে তখন ডাকাতরা ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে ঢোকার পূর্বে সিগন্যালে ট্রেনের গতি কমলে ট্রেন হতে নেমে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১৪-এর অধিনায়ক উইং কমাণ্ডার রোকনুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি এরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র এবং এই চক্রটি নিয়মিতভাবে ডাকাতি ও ছিনতাই করে আসছে। এরা ঢাকার কমলাপুর, এয়ারপোর্ট ও টঙ্গী রেলস্টেশন হতে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ট্রেনে উঠত এবং তাদের কিছু সহযোগী গফরগাঁও ও ফাতেমা নগর স্টেশন হতে ট্রেনে উঠে সম্মিলিতভাবে ডাকাতি ও ছিনতাই করে ময়মনসিংহ স্টেশনে নেমে যেত।

ঘটনার দিন তারা ছিনতাইয়ের পরিবর্তে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। তারা ছোট ছোট উপ-গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি ও ছিনতাই করত। এই ছোট ছোট উপ-গ্রুপগুলো কেউ টার্গেট শনাক্ত করত, কেউ নিরাপত্তার বিষয় দেখত, কেউ লুট করা মোবাইল ও অন্যান্য মালামাল সংগ্রহ করে বিক্রি করত আর বাকীরা সরাসরি ডাকাতির কাজে সম্পৃক্ত থাকত। এই চক্রটি তাদের ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে তাদের পূর্ব নির্ধারিত জায়গায় লুকিয়ে রাখত।

উক্ত ঘটনায় গ্রেফতারকৃত রিশাদ, স্বাধীন, মোহাম্মদ ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজন সরাসরি ডাকাতির কাজে সম্পৃক্ত ছিল। হাসান টার্গেট শনাক্তের কাজে যুক্ত ছিল। রুবেল লুণ্ঠিত মোবাইল ও অন্যান্য মালামাল স্বল্পমূল্যে এই চক্রের কাছ থেকে সংগ্রহ করত এবং অন্যদের কাছে বেশী মূল্যে বিক্রি করে মুনাফা লাভ করত। পাশাপাশি সে এই চক্রের পৃষ্ঠপোষক বলে জানা যায়।

উল্লেখ্য, রিশাদ এই সংঘবদ্ধ চক্রের মূল হোতা। তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে সে ২ বছরের অধিক সময় কারাগারে ছিল। আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর