সন্দেহভাজনদের মেরে রাস্তার মোড়ে ঝুলিয়ে দিচ্ছে তালেবান

তালেবান বলছে, তারা চারজন সন্দেহভাজন অপহরণকারীকে গুলি করে হত্যা করেছে এবং পরে তাদের মৃতদেহ আফগানিস্তানের হেরাত শহরের রাস্তার মোড়ে ঝুলিয়ে রেখেছে।

তালেবানের একজন কুখ্যাত কর্মকর্তা মৃত্যুদণ্ড এবং অঙ্গহানির মতো কঠোর শাস্তি আবার শুরু হওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়ার একদিন পর এই ভয়াবহ প্রদর্শন ঘটলো।

স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, একজন ব্যবসায়ী এবং তার ছেলেকে জিম্মি করার অভিযোগের পর বন্দুকযুদ্ধে ওই ব্যক্তিরা নিহত হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শহরের কেন্দ্রে একটি ক্রেন থেকে একটি মৃতদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

ওয়াজির আহমাদ সিদ্দিকি নামে স্থানীয় এক দোকানদার বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এপিকে বলেন, চারটি মৃতদেহ মোড়ে আনা হয়, একটিকে সেখানে ঝুলিয়ে রাখা হয় এবং বাকি তিনটি লাশ প্রদর্শনের জন্য শহরের অন্যান্য মোড়ের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

হেরাতের ডেপুটি গভর্নর মৌলভী শাইর বলেন, অপহরণের মতো ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্যই মৃতদেহগুলি এভাবে ঝুলিয়ে প্রদর্শন করা হয়েছে। তিনি বলেন, একজন ব্যবসায়ী এবং তার ছেলেকে অপহরণের খবর পেয়ে তালেবান সদস্যরা তাদের গুলি করে হত্যা করে। পরে ওই ব্যবসায়ী ও তার ছেলেকে মুক্তি করা হয়।

তবে ওই ব্যক্তিদের কোন পরিস্থিতিতে হত্যা করা হয়েছিল সেটি বিবিসি নিরপেক্ষভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি।

যাইহোক, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা ছবিতে দেখা গেছে যে, একটি পিক-আপ ট্রাকের পিছনে রক্তাক্ত দেহ দেখা যাচ্ছে যেখানে একজনের মরদেহ ক্রেনের সাথে ঝুলে আছে।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে একজন ব্যক্তিকে ক্রেন থেকে ঝুলিয়ে দেয়ার পর তার বুকে একটি সংকেতে লেখা হয়েছে: “অপহরণকারীদের এভাবে শাস্তি দেওয়া হবে।”

১৫ই অগাস্ট আফগানিস্তানে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তালেবানরা তাদের আগের শাসনামলের তুলনায় একটি কিছুটা নমনীয় শাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে।

কিন্তু ইতিমধ্যে দেশজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য ঘটনার উল্লেখ পাওয়া গেছে।

তালেবানের কুখ্যাত সাবেক ধর্মীয় পুলিশ বাহিনীর প্রধান মোল্লা নূরুদ্দিন তুরাবি, যিনি নতুন সরকারের অধীনে কারাগারের দায়িত্বে রয়েছেন, তিনি বৃহস্পতিবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন যে, আফগানিস্তানে মৃত্যুদণ্ড এবং অঙ্গহানির মতো কঠোর শাস্তি আবার শুরু হবে। এসব শাস্তি “নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনীয়” বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এপি- কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন যে, ১৯৯০ এর দশকের তালেবান শাসনামলের মতো এই শাস্তিগুলো জনসমক্ষে কার্যকর করা হবে না। গোষ্ঠীটির আগের ৫ বছরের শাসনামলে কাবুলের স্পোর্টস স্টেডিয়ামে বা ঈদগাহ মসজিদের বিস্তীর্ণ মাঠে প্রায়ই প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো।

জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা মি. তুরাবি তাদের আগের সাজা কার্যকরের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “স্টেডিয়ামে শাস্তির জন্য সবাই আমাদের সমালোচনা করেছিল, কিন্তু তাদের আইন এবং শাস্তি কেমন হবে সে সম্পর্কে আমরা কখনও কিছু বলিনি”।

অগাস্ট মাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছিল যে, নির্যাতিত হাজারা সংখ্যালঘুদের নয় জন সদস্যের হত্যাকাণ্ডের পেছনে তালেবান যোদ্ধারা ছিল।

অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড সেই সময় বলেছিলেন, “ঠাণ্ডা মাথায় বর্বর হত্যাকাণ্ডের” এই ঘটনা ছিল “তালেবানদের অতীত রেকর্ডের স্মারক এবং তালেবান শাসন কী নিয়ে আসতে পারে তার একটি ভয়াবহ সূচক”।-বিবিসি বাংলা।

বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর