মহিলাকে ধর্ষণের পর হত্যা: মেয়ের শ্বশুরের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

শেখ আমিনুর হোসেন, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বারাত গ্রামের পুষ্প রানী দাসকে ধর্ষণের পরে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার ঘটনায় র‍্যাব সদস্যরা নিহতের মেয়ের শশুর জয়দেব দাসকে গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার রাতে তাকে খুলনা জেলা ফুলতলা উপজেলার ফুলতলা হাফরাস্তা গ্রামের শশুর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত জয়দেব দাস (৫২) সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানাধীন তৈলকুপি গ্রামের গৌর দাসের ছেলে। গ্রেপ্তারকৃত জয়দেব তার ছেলের শাশুড়িকে নৃশংসভাবে হত্যার কথা স্বীকার করে বুধবার বিকালে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

বারাত গ্রামের মহাদেব দাস জানান, গত ২০ জুন বিকালে তালা থানার বারাত গ্রামের দর্জি পারভীন খাতুনের বাড়িতে ব্লাউজ আনতে যেয়ে আর বাড়ি ফেরনি একই গ্রামের মনোরঞ্জন দাসের স্ত্রী পুষ্প রানী দাস (৪২)। ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ২২ জুন বড় ভাই জয়দেব দাস তালা থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করে। নিখোঁজের আট দিন পর ২৮ জুন দুপুর দেড়টার দিক গ্রামবাসির কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ বারাত গ্রামের অ্যাড. কেসমত আলীর ইজারা দেওয়া পাটক্ষেত থেকে উলঙ্গ অবস্থায় মায়ের উলেঙ্গ গলিত লাশ উদ্ধার কর। লাশের হাতে ও পায়ের সব আঙ্গুল কাটা ছিল। গলায় একটি দড়ি বাঁধা ছিল। সারা শরীরে কেমিকল লাগানো ছিল। ঘটনার রাতেই বড় ভাই জয়দেব দাস বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ছর করেন। মামলার তদন্ত ভার দেওয়া হয় তালা থানার উপপরিদর্শক প্রীতিশ রায়কে। ঘটনার তদন্ত নামে পুলিশ ও র‍্যাব। নিহতের মোবাইল কললিষ্ট যাঁচাই করে বোন অঞ্জলীর শ্বোশুর জয়দেব দাসকে খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার হাফরাস্তা নামক স্থানে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে আটক কর।

গ্রেপ্তারকৃত জয়দেব দাসের ছেলে মিঠুন দাস জানান, তার মা বুলু ১৫ বছর আগে মারা যান। বাবা তিন বছর পর খুলনার ফুলতলা উপজেলার হাফরাস্তা নামক স্থানের গোপাল দাসের মেয়ে ববিতাকে বিয়ে করেন। বিয়ের কয়েক মাস না যেতেই তাকে (মিঠুন) ভাল চোখে দেখতো না বিমাতা। একপর্যায়ে সাড়ে চার বছর আগে বারাত গ্রামর মনোরঞ্জন দাসের মেয়ে অঞ্জলীকে বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করতে থাকি। বিগত সাত মাস যাবৎ শ্বোশুর বাড়িতে সস্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করি। শ্বাশুড়ি পুষ্প রানীক হত্যার ঘটনায় তার বিমাতার হাত রয়েছে বল দাবি মিঠুনের। সোমবার রাতে র‍্যাব তার বাবাকে খুলনার ফুলতলা থেকে আটক কর বলে তিনি শুনেছেন।

খুলনা র‍্যাব -৬ এর সাতক্ষীরা শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সহকারি পরিচালক এম মাহামুদুর রহমান মোল্লা জানান, মোবাইল কললিষ্ট ও ভয়েস রেকর্ড যাঁচাই করে মঙ্গলবার রাতে জয়দেব দাসকে খুলনার ফুলতলা এলাকায় তার শ্বোশুর বাড়ি থেকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে বেহান পুষ্পকে কয়েক বছর আগে বিয়ে করে বলে জানিয়েছে। একইসাথে সে তাকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে ২০ জুন সন্ধ্যার পর নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ পাটক্ষেতে ফেলে দেয় বলে জানায়। দুপুর দু’ টার দিকে জয়দেব দাসকে তালা থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তালা থানার উপপরিদর্শক প্রীতিশ রায় জানান, গ্রেপ্তারকৃত জয়দেব দাস তার বেহান পুষ্পকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করার কথা স্বীকার করে বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতের বিচারক বিলাস মন্ডলের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে জয়দেব উল্লেখ করেছে যে সে এক বছর আগে বেয়ান পুষ্প রানী দাসকে কোর্ট ম্যারেজ করে। পুষ্প রানীর সঙ্গে আরো অনেকের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। এটা তিনি মানতে পারতেন না। এরই জের ধরে তাকে পাটক্ষেতে ডেকে এনে মেলামেশার পর নির্যাতন চালিয়ে শ্বাসরোধ কর হত্যা করে।

প্রসঙ্গত, বুধবার সকাল ১০টায় ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে দলিত পঞ্চায়ত ও দলিত ফোরামের পক্ষ থেকে পুষ্প রানী দাস হত্যাকারিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন করে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর