মায়ের মরদেহ দাফনে বাঁধা দিল প্রধান শিক্ষক ছেলে

গাজীপুরের শ্রীপুরে নিজের মায়ের মরদেহ দাফন করতে বাঁধা দিয়েছেন ইকবাল হোসেন নামে এক স্কুল শিক্ষক। বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার কেওয়া পূর্বখণ্ড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, পূর্বখণ্ড এলাকার প্রয়াত মান্নানের স্ত্রী মালেকা বেগম বেশকিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এর এক সপ্তাহ আগেই তিনি আক্রান্ত হন করোনায়। মরদেহ ঢাকা থেকে গ্রামে নেওয়ার পর মালেকার বড় ছেলে ও স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন শ্রীপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে সাথে করে পুলিশ নিয়ে এসে মরদেহ দাফনে বাঁধা দেয়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় মরদেহ দাফন করা হয়।

স্থানীয় লোকজন জানান, পূর্বখণ্ড এলাকার আব্দুল মান্নান ১৯৯৪ সালে ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ে রেখে মারা যান। তার রেখে যাওয়ার জমির বণ্টন নিয়ে সন্তানদের মধ্যে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এসময় ইকবাল হোসেন তার মায়ের নামে থাকা সম্পত্তি একা ভোগ করতে মরিয়া হয়ে উঠেন। জমি লিখে না দেওয়ায় মায়ের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে ইকবালের ছোট ভাই আমিনুলের বাসায় উঠেন তার মা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার অধীনেই ছিলেন।

আমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন তিনিই তার মায়ের দেখাশোনা করে আসছিলেন। পরে হঠাৎ করে তার মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বুধবার করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাড়িতে মরদেহ নিয়ে আসার পর তার বড় ভাই পুলিশ নিয়ে এসে মায়ের মরদেহ দাফনে বাধা দেন। পরে স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে তারা দাফন সম্পন্ন করেন।

তিনি আরও বলেন, যে মা তাকে খেয়ে না খেয়ে মানুষ করলেন, সেই মাকেই তিনি শেষবারের মতো দেখলেন না, কবরে একমুঠো মাটিও দিলেন না। সবাই যখন দাফনে ব্যস্ত, তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে ঘরে বসে রইলেন। মা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তার ভাইকে দেখতে অনেক ডেকেছিলেন। তিনি তাতেও সারা দেননি।

তবে ইকবালের দাবি, তার মায়ের নামে প্রায় দুই বিঘা জমি ও ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকা ছিল। এগুলো আত্মসাৎ করতেই তার মাকে তার ছোট ভাই মেরে ফেলেছে, এমন ধারণায় তিনি থানায় অভিযোগ করেছিলেন। তবে পুলিশ মরদেহ ময়নাতদন্ত না করেই চলে গেছেন। তিনি এ বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন।

শ্রীপুর থানার এসআই কামরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে চিকিৎসার কাগজপত্র দেখে স্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়াও মৃত নারীর কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিল। তবে তিনি যেহেতু ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন সেহেতু অভিযোগ থাকলে সেখানে মামলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর