বন্ধ হওয়ার পথে ৮ হাজার মানুষের চিকিৎসাসেবা
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় তিস্তার ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে উপজেলার ঘড়িয়াল ডাঙা ইউনিয়নের গতিয়াশাম কমিউনিটি ক্লিনিক। রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের এই কমিউনিটি ক্লিনিকটি স্থানীয়দের চিকিৎসার প্রাথমিক ভরসা।
চিকিৎসা কেন্দ্রটি বর্তমানে নদীর কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। তিস্তার ভাঙনে যে কোন মুর্হুতে নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে ভবনটি। এতে করে ওই গ্রামের অন্তত ৮ হাজার মানুষ হাতের নাগালের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে প্রায় ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আট শতক জমির ওপর কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনটি নির্মাণ করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির অনুদানের জমিতে নির্মিত এই ক্লিনিকটি ওই এলাকার বাসিন্দাদের চিকিৎসা সেবার ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে। কিন্তু তিস্তার চলমান ভাঙনে স্থানীয় বাসিন্দারা বাস্তুহারা হওয়ার পাশাপাশি তাদের চিকিৎসার আশ্রয়স্থলটিও হারাতে বসেছে।
কমিউনিটি ক্লিনিকের সি,এইচ,সি,পি মোঃ আলতাব হোসেন বলেন, গতিয়াশম কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যামে এই এলাকার প্রায় আট হাজারেরও বেশি মানুষ চিকিৎসা সেবা পেয়ে থাকেন। সরকারি ওষুধসহ প্রাথমিক চিকিৎসার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি রয়েছে এখানে। ভবনটি না থাকলে ভোগান্তিতে পরবে সেবা গ্রহীতারা।
ক্লিনিকটির জমি দাতা হাদিউজ্জামান আনসারি জানান,আমরা স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতা ও স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙন রোধে চেষ্টা করছি। দ্রæত সময়ের মধ্যে যদি পানি উন্নয়নবোর্ড জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে হয়তো ক্লিনিকটি রক্ষা করা যাবেনা।
ঘড়িয়াল ডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ কর্মকার জানান, ক্লিনিকটি নদীতে বিলীন হলে ওই এলাকার মানুষের চিকিৎসাসেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। আমরা কর্তৃপক্ষকে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া অনুরোধ করেছি।
চেয়ারম্যান আরও জানান, বৃহস্পতিবার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন।
রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, ‘আমি ক্লিনিকটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি এবং এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশাকরি উনারা দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
এছাড়াও তিস্তা নদীর হুমকির মুখে রয়েছে নামাভরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনসহ আরো কয়েকশ’ বাড়ি-ঘর। গত দেড় মাসে তিস্তার ভাঙনে বাস্তুহারা হয়েছে শত শত পরিবার। তীব্র ভাঙনে তিস্তা পারের বাসিন্দারা সর্বহারা হলেও জিও ব্যাগ ফেলা ছাড়া ভাঙন প্রতিরোধে টেকসই কোনও ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
এ বিষয়ে পাউবো, কুড়িগ্রামের সদ্য যোগ দেওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,‘আমি ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছি। পানি কমে যাওয়ায় তিস্তার ভাঙনের হার পূর্বের তুলনায় কম।’
কমিউনিটি ক্লিনিকটি রক্ষায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্নে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘ আজই দেখে আসলাম। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে জরুরী ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সেটা স্পষ্ট করেননি এই প্রকৌশলী।
সুজন মোহন্ত/বার্তা বাজার/টি