বিয়েতে ভয় কেন পুরুষের?

অনেকদিন থেকে শান্তকে বিয়ের চাপ দিচ্ছে পরিবার থেকে। কিন্তু করি করবো বলে বলে সেই বিয়ে আর হচ্ছে না। বাসা থেকে প্রশ্ন করছে চাকরির এতদিন পার হলেও কেন বিয়ে করছো না, কোনো পছন্দ আছে কিনা, কোনো সমস্যা আছে কিনা- প্রশ্নের কোনো শেষ নেই। কিন্তু শান্ত নিজেই জানে না এই বিয়েতে এত ভয় সে কেন পাচ্ছে!

বিয়ে শব্দেই অনেকের ভয় থাকে। আর পুরুষদের হয়ত একটু বেশিই থাকে। আর ভয় হওয়াটাও স্বাভাবিক। পুরুষ মনে করে বিয়ে মানেই বিশাল দায়িত্ব যেখান থেকেই ভয়ের সূত্রপাত। বিয়ের উপযুক্ত বয়সে এসে অনেক ক্ষেত্রেই বিয়ের প্রতি দেখা দেয় অনীহা। শুধু তাই নয়, দেখা যায় যে অনেক দিনের প্রেম থাকা সত্ত্বেও সম্পর্ককে বিয়ের নাম দিতে ভয় পাচ্ছেন তারা। বিয়েতে বিভিন্ন ভয় সৃষ্টি হচ্ছে, বিয়ের জন্য যেন নিজেকে কোনো ভাবেই মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে উঠতে পারেন না তারা। কেন হয় এমনটা, সেটাই আজ জানবো-

ভয় থাকে স্বাধীনতা হারানোর

ছেলেদের মধ্যে একটা ভয় প্রায়ই কাজ করে যে বিয়ে করা মানেই ব্যক্তি স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলা। নিজের জন্য আলাদাভাবে সময় দেওয়া, যখন যেখানে খুশি যাওয়া, যা ইচ্ছে করা তাই করার স্বাধীনতা থাকবে না- এই ভয় তাদের সবসময়েই থাকে। তারা ভাবে স্ত্রী হয়ত সারাদিন খবরদারি করবে, সবকিছুতে কৈফিয়ত পাবে। এই ভয়ে পুরুষরা বিয়ে করতে ভয় যায়।

দায়িত্ব নেওয়ার ভয় তো থাকেই

বিয়ে করা মানেই আরেকটি মানুষদের দায়িত্ব নেওয়া। মানে স্ত্রীর পুরোপুরি দায়িত্ব তার ঘাড়েই পড়ে। স্ত্রীর দেখাশোনা, খরচ, সঙ্গ দেওয়া, সুবিধা অসুবিধার দিকে লক্ষ্য রাখতে হয় তাকে। সেই সঙ্গে শ্বশুরবাড়িতে জামাতা হিসেবেও অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয় তাকে। এগুলো বাড়তি বোঝা বলে মনে হতে থাকে। আর বিয়ের পর সংসারে নতুন সন্তান এলে দায়িত্ব আরও বাড়ে। সেই সঙ্গে খরচ আর চিন্তাও বাড়ে। আয়ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য না থাকলে এত দায়িত্ব নিতে স্বাভাবিকভাবেই পুরুষরা ভয় পায়, বিয়ের প্রতি অনীহা হয়।

বিয়ের বিশাল খরচ

বিয়ে মানেই অনেক বেশি চাকচিক্য ও বড় পরিসরের আনুষ্ঠানিকতা করা। আলাদা কাপড়চোপড়, গয়নাগাটি, অতিথি আপ্যায়নসহ সব আযোজন করতে গিয়ে বিশাল অংকের টাকা খরচ হয়ে যায়। এগুলো রক্ষা না করলে সামাজিকতা রক্ষাটাও হয় না। এতো খরচ সামলাতে গিয়ে যেকোনো পুরুষকেই হিমশিম খেতে হয়। ক্যারিয়ারের শুরুতে স্বল্প বেতনের চাকরি করে এতো খরচ সামলানো অসম্ভব একটি ব্যাপার। আর তাই বিয়ের প্রতি ভয় ও অনীহা জন্মে যায়।

পরিবারের সঙ্গে স্ত্রীর বোঝাপড়া হবে তো?

বিয়ে করে ঘরে স্ত্রী এলো ভালো কথা। সেখানে নিজের পরিবার আর স্ত্রীর মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে গিয়ে নিজে মাঝখানে পড়ে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। কখনো স্ত্রী একটু খারাপ আচরণ করে ফেলে, আবার কখনো নিজের পরিবারও না বুঝে অন্যায় আচরণ করে। এই নিয়ে সংসারে শুরু হয় নানান রকম অশান্তি। তার উপর পরিবারের অন্য সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের সাথে নানান রকম মনোমালিন্য তো হয়ই, অশান্তিও হয় খুব। আর সমস্যার সমাধান করতে হয় পুরুষটিকেই।

স্ত্রীর যদি প্রতারণা করে?

আমরা তো অবিশ্বাস আর প্রতারণার কতো উদাহরণই দেখি প্রতিনিয়ত। সেখানে কোনো পুরুষ যদি সম্পর্কের ক্ষেত্রে কাউকে প্রতারিত হতে দেখে বা নিজে প্রেমের সম্পর্কে প্রতারিত হলে বিয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাদের মনে বিয়ে সম্পর্কে এক অজানা ভয় সৃষ্টি হয়। তারা মনে করে বিয়ের পর স্ত্রী প্রতারণা করবে আর এই ভয়েই বিয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

বন্ধুদের তো হারাবো!

বিয়ের আগে থাকে বন্ধুদের দিন। তাদের সঙ্গে দিনভর আড্ডা, ঘোরাঘুরি, রাত করে ঘরে ফেরা আর অফুরন্ত মজা। কিন্তু বিয়ের পর জীবনটা তো আর তেমন থাকে না। তাদের সময় দেওয়া যায় না, সংসারের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যেতে হয়। আবার সংসারী বন্ধুটিকে নিয়ে বন্ধুরা মজাঠাট্টা, বিদ্রুপও কম করে না। এগুলো মোকাবেলা করতে হবে, এটাও অনেকে ভাবেন। সবমিলিয়ে বিয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন অনেক পুরুষই।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর