বাংলাদেশী সবজি ও মাছ চাষে কর্মসংস্থান বাড়ছে মালয়েশিয়ায়

মালয়েশিয়ার মাটিতে বাংলাদেশী শাক সবজি ও দেশীয় মাছ চাষ দিন দিন বেড়েই চলেছে। দেশটিতে বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে প্রায় আনুমানিক ১ মিলিয়নেরও বেশি বাংলাদেশী প্রবাসী রয়েছেন। যাদের দৈনিক চাহিদা রয়েছে দেশীয় শাক সবজি ও মাছ। প্রথম দিকে চাহিদা থাকলে ও যোগান কম ছিল। সরাসরি বাংলাদেশ থেকে কার্গো যোগে সবজি ও মাছ সরবরাহ করা হত তাই দাম একটু বেশি ছিল।

এখন দেশটির কিছু কিছু অঞ্চলের হাজার হাজার একর জমিতে বাংলাদেশী প্রবাসীদের উদ্যাগে চাষ হচ্ছে দেশীয় সব ধরনের শাক সবজি, মাছ, মুরগী। এতে করে একদিকে যেমন বিদেশের মাটিতে বাঙ্গালির পাতে পড়ছে দেশীয় চির স্বাদের সবজি ও মাছ মুরগী তেমনি অন্যদিকে এই খাতে নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে বাংলাদেশী প্রবাসীদের। অর্জিত আয় দেশে পাঠাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স।

কারণ হচ্ছে সবজি চাষ, জমি তৈরী, জমি ও ফসল রক্ষণাবেক্ষণ, কীটনাশক প্রয়োগ, সবজি ও মাছ সারাদেশে বিপনন ও প্রবাসী গ্রাহকের হাতে পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত শুধু বাংলাদেশী প্রবাসীরা ই কাজগুলো করে থাকেন। অনূকুল আবহাওয়া, খরচ কম, সহজলভ্য নিরাপদ জমি,পরিবহণ সুবিধা, উর্বর মাটি এবং লাভজনক ও ঝুকি নেই বলে তারা এই খাতে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হচ্ছেন। অবাক বিষয় হলো আলু, লাউ,সীম, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, বেগুন, ঢেড়স, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, বরবটি, ধনেপাতা, ফুলকপি, বাঁধাকপি আমাদের বাংলাদেশে এগুলো শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত। গ্রীষ্মকালে তেমন পাওয়া যায় না।

কিন্তু মালয়েশিয়া কুয়ালালামপুর সহ আশেপাশের অঞ্চলগুলো তে সারা বছরেই বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালের মতই আবহাওয়া থাকে। সারা বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। আর এই গড়ম আবহাওয়াতে উপরোক্ত সব ধর ধরনের সবজির বাম্পার ফলন হচ্ছে। এবং সারাবছরই উৎপন্ন হচ্ছে। মাছ চাষের মধ্যে রয়েছে রুই,কাতলা,মৃগেল, চিতল, ব্রিগেড,কানলা, সরপুটি, শোল, টেংরা, কৈ, বাইম মাছ সহ হরেক রকম দেশীয় মাছ সারাবছরই উৎপাদন হচ্ছে।

মালয়েশিয়ায় মাত্র তিন কোটি জনসংখ্যার দেশে দেশটির আয়তন ৩ লাখ ২৯ হাজারেও কিছু বেশি। এত বিশাল ভূমির বিরাট একটা অংশ অবৃবহৃত থেকে যাচ্ছে । জনসংখ্যা কম কিন্তু দেশটিতে প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে ভরপুর।

মালয়েশিয়ার মাটিতে বাংলাদেশের সবজি ও মাছ চাষ হচ্ছে আর বাগান থেকে এই পন্য কাকডাকা ভোরে পৌছে যাচ্ছে চেইন সুপারশপ গুলোতে। বিষয়টি অবিশ্বাস্য মনে হলে কুয়ালালামপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পাসার মিনি এলমার স্বত্বাধিকারী মোঃ ইব্রাহিম প্রস্তাব দিলেন সরেজমিনে ঘুরে দেখার জন্য।

দেশটিতে ক্লাঁং ও ক্যামেরুন হাইল্যান্ডস প্রদেশে বেশি সবজি মাছ চাষ হয়।কুয়ালালামপুর থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার কাছে ক্লাং প্রদেশ হওয়ায় সেখানে পৌঁছে গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেল এ যেন মালয়েশিয়ার বুকে এক টুকরা বাংলাদেশ। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা হওয়ায় ৪০ কি.মি মাত্র ২৫ মিনিটেই পৌছে গেলাম। চারদিকে শত সহস্র একর সমতল ভূমিতে সবজির বাগান।

যেদিকে দূ চোখ যায় এ যেন সবুজের মেলা। বাংলাদেশী বাগান শ্রমিকরা জমিতে কাজ করছে। তবে এসব কৃষি জমিতে বৃবহৃত হচ্ছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। যার দরুন সময় ও খরচ কম লাগছে। আবার দেশটির রাওয়াং প্রদেশে গিয়ে দেখা গেল পাহাড়ি লালমাটির উচুনিচু ভূমি কেটে তৈরী করা হয়েছে পুকুর। প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুকুরের মিঠা পানিতে চাষ হচ্ছে দেশীয় মাছ।

করোনায় লকডাউনে দেশের সব ধরনের অর্থনৈতিক সেক্টর গুলো দীর্ঘ সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে বন্ধ ছিল। নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য বিধায় একমাত্র এইখাতে সরকার কোন সময় নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। সারাবছরই এর উৎপাদন ও বিপনন হচ্ছে। সপ্তাহে হাজার হাজার টন সবজি মাছ বাজারজাত করা হচ্ছে জড়িত রয়েছে হাজার হাজার বাংলাদেশী কর্মী। আর এই খাত থেকে অর্জিত মোটা অংকের রেমিট্যান্স বাংলাদেশে প্রেরন করা হচ্ছে।

আশরাফুল মামুন/বার্তা বাজার/এসবি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর