মঠবাড়িয়ায় প্রতিপক্ষের হামলায় দোকানঘর ভাংচুর, থানায় মামলা

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মিরুখালী বাজারে ডিসিআরকৃত ভোগদখলীয় দোকানঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ভাংচুরের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ’র স্ত্রী আফরোজা বাদী হয়ে  গত ১৫ সেপ্টেম্বর মঠবাড়িয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার ১ নং আসামী মেহেদী হাসান মেরিন মিরুখালী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউপি সদস্য।

গত ৯ সেপ্টেম্বর নাপিতখালী মৌজার জে এল নং-২৬, খতিয়ান নং- ৭৩/১০৪ দাগ নং- ১১৮৭/১১৮৮/১১৮৯ এ মাসুম বিল্লাহ’র ভোগদখলীয় দোকানঘর ও বসতঘরে প্রতিপক্ষরা অনধিকার প্রবেশ করে হামলা ও ভাংচুর চালায়। আত্মরক্ষা করতে গিয়ে নারীরা শ্লীলতাহানির শিকার হয়। মাসুম বিল্লাহ আমুয়া এ সি গার্লস হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক এবং মিরুখালী গ্রামের মৃত. আলহাজ্ব আবুল হাসেম হাওলাদারের পুত্র।

সরেজমিনে জানা যায়, উপরোক্ত তফসিলভুক্ত সম্পত্তি মাসুম বিল্লাহ তার পিতা জীবিত থাকা আবস্থায় ২০ বছর ধরে ভোগ দখল করে আসছে। ঢাকায় বসবাসরত মাশরিকুল আযম রবি ওরফে মিলন আরেকজনের ডিসিআরভুক্ত ভোগ দখলীয় ওই সম্পত্তি অনধিকারভাবে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তাদের ভুল বুঝিয়ে ও প্রভাবিত করে ৮০ বর্গ মিটারের মধ্য থেকে ২০ বর্গমিটার অর্থাৎ  . ৫০ ( দশমিক পাঁচ শূন্য) শতাংশ জমি ডিসিআর নেয়। ডিসিআর নিয়ে ৭ আগস্টের দিকে মাসুম বিল্লাহ’র ভাড়াটিয়া দোকানদারকে জোরপূর্বক নামিয়ে দেয়। এরপর তারা ৯ আগস্ট হামলা ও ভাংচুর চালায়। এতে উভয় পক্ষের একাধিক লোক জখম হয়।

মিরুখালী বাজারে বিরোধীয় ওই জমির পশ্চিমে এলজিইডি সড়ক, পূর্বে বাজারের রাস্তা, উত্তরে হাসানের দোকান, দক্ষিনে লতিফের দোকান। স্হানীদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাশরিকুল আযম রবি ওরফে মিলন এবং মেহেদী হাসান মেরিন গংদের ওই জমিতে কখনোই কোন ভোগ দখল ছিল না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, পূর্ব বিরোধের জের ধরে ভোগদখলীয় ডিসিআরভুক্ত জমির  মধ্যে ফাঁক ফোকর খুঁজে নিজের নামে ডিসিআর নেওয়া   মাশরিকুুল আজম রবি ওরফে মিলন ঢাকায় বসবাস করেন। কোটি কোটি টাকার মালিক রবি বিলাসবহুল জীবন যাপন করেন। মিরুখালীতে তার কোটি টাকার বিলাসবহুল একটি বাড়ি থাকলেও কাউকেই বসবাস করতে দেখা যায় না। কেউ কেউ বলেন, সৌন্দর্যের জন্য দৃষ্টিনন্দন এ বাড়িটি করা হয়েছে। এতকিছু থাকতেও একজন স্কুল শিক্ষকের মাথা গোঁজার ঠাঁই ডিসিআরভুক্ত বসত ঘর ও দোকান ঘরের একাংশ ডিসিআরের নামে দখল করার চেষ্টাকে মেনে নিতে পারছে না অনেকেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সমাজ বিরোধী অনৈতিক কার্যাবলীর জন্য রবির বাবা আঃ গফফার ০৫.০৯.১৯৯৫ খ্রি. তারিখে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে মাশরিকুল আজম রবি ওরফে মিলনকে সকল প্রকার স্হাবর ও অস্হাবর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত রাখেন। বিভিন্ন অভিযোগে ২৭.০৮.১৯৯৫ খ্রি. তারিখে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকে ঢাকায় বসবাস করেন।

এদিকে ৯ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় রবি ওরফে মিলনের পক্ষে মৃত আবুল হাসেমের পুত্র  মোঃ মহিউদ্দিন বাদী হয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক মোঃ মাসুম বিল্লাহকে ১ নং আসামী করে মঠবাড়িয়া বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- সিআর ২৯৭/২০২১। মামলাটি আমলে নিয়ে ১ নং আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা দেয় বিজ্ঞ আদালত।

এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মেহেদী হাসান মেরিন জানান, ওই জমিতে মাশরিকুলদেরও অধিকার আছে। মাসুম বিল্লাহ গং শালিস ব্যবস্থা অমান্য করায় এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি হয়। আমি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে  ১ নং আসামী হয়েছি। তবে একাধিকবার চেষ্টা করেও মিলনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।

অন্যদিকে মাসুম বিল্লাহ’র স্ত্রী আফরোজা জানান, মাশরিকুল আযম ওরফে মিলনের ৩১(এম)২০২০-২১ ডিসিআর বাতিল চেয়ে ১৭.০৬.২০২১ খ্রি. তারিখে সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদন করেছি। এর মধ্যেই ৯ সেপ্টেম্বর আমাদের দোকান ঘর ও বসত ঘরে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। নিজেদের অপরাধ ঢাকতে আমাদের নামে কোর্টে একটি মিথ্যা মামলা দেয়।

মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাঃ নুরুল ইসলাম বাদল জানান, এ ঘটনায় উভয় পক্ষই মামলা করেছে। এর মধ্যে এক পক্ষের মামলা কোর্টে এবং আরেক পক্ষের মামলা থানায় দায়ের করেছে।

শাহ জাহান/বার্তা বাজার/এসবি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর