ডিমলায় থামছে না বোমা মেশিনের তাণ্ডব, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ

নিয়ম-নীতি আর সরকারি নির্দেশনার বালাই নেই। পুকুর খননের নামে অবৈধ বোমা মেশিনে ভূ-গর্ভস্থ বালু ও পাথর উত্তোলন করে দায়সাড়া কাজ করছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

হাতিবান্ধা ও ডিমলা উপজেলার মধ্যবর্তী সীমানা দিয়ে বয়ে চলা তিস্তা নদীর পাড়ে এভাবেই পুকুর খনন করছে খনন কাজে নিয়োগ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, নীলফামারীর ডালিয়া পাউবো কর্তৃক ২০২০-২১ অর্থ বছরের ১টি প্যকেজ ২কোটি ৯২লাখ টাকা ব্যয়ে তিস্তার সীলটাপ সহ পাউবোর পার্শবর্তী এলাকায় ৫টি পুকুর খননের কাজ বাস্তবায়ন করছে হাছিবুল ট্রেডার্স নামক রংপুরের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দরপত্র অনুযায়ী লোকাল ড্রেজার ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা না মেনেই অবৈধ বোমা মেশিনের মাধ্যমে খনন করছে প্রতিষ্ঠানটি।

ফলে তিস্তা ব্যারেজ, পাশের সড়ক, আবাদি জমি ও আশেপাশের গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে। অবৈধ বোমা মেশিনে বালু-পাথর উত্তোলনে তিস্তায় বাড়ছে নদী ভাঙন। তীর রক্ষা বাঁধেও দেখা দিচ্ছে ধস, তবুও বেপরোয়া প্রভাবশালীরা। পরিপত্রে পুকুর খননের গভীরতা ৮ ফিট উল্লেখ থাকলেও তা না করে রাষ্ট্রীয় খনিজ সম্পদ পাথর ও বালু বিক্রি করার ফায়দায় বোমারু মেশিন দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ ফিট গভীরে গিয়ে রীতিনীতি তোয়াক্কা না করে পুকুর খননের কাজ চলছে। আধা কিলোমিটারের মধ্যে ২৩টি অবৈধ বোমা মেশিন ব্যবহার করে ভূ-গর্ভস্থ মাটি উত্তোলন করে দায়সাড়া নদী খনন কাজ করছে পাউবো ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।

নদী নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু-পাথর উত্তোলন করলে তা হবে অপরিকল্পিত। বিশেষ করে যে গভীরতা নির্ধারণ করা হয়েছে তা পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে পারবে না। ফলে চারপাশ থেকে বালুর স্তর ভেঙে তলদেশ ভরাট হয়ে যাবে।

এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ দৌলার সঙ্গে। তিনি ঠিকাদারের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, এখানে ড্রেজার মেশিন প্রবেশ করার কোনো উপায় না থাকায় শ্যালো মেশিন দিয়েই খনন কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিস্তার সীলটাপে পুকুর খননকৃত বালু বিক্রির অপরাধে গত ২৩ আগস্ট সোমবার ডিমলা থানা পুলিশ অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ এর নির্দেশে অভিযান চালিয়ে ৩টি বালু ভর্তি ট্রলী জব্দ করেন। স্থানীয়রা বলেন প্রায় প্রতি রাতেই একটি সিন্ডিকেটের যোগসাজশে বিক্রি হচ্ছে এসব সরকারি বালু ও পাথর।

উল্লেখ্য, পানি উত্তোলন যন্ত্রকে (পাওয়ার পাম্প) রূপান্তর করে নাম দেওয়া হয়েছে বোমা মেশিন। মাটির প্রায় ৩০০ ফুট গভীর থেকে পাইপ দিয়ে পানি তোলার ভান করে উত্তোলন করা হয় পাথর। এই যন্ত্র চালানোয় ভূগর্ভস্থ মাটির স্তর পরিবর্তন হওয়ায় ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত এই যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।

তারিকুল ইসলাম সোহাগ/বার্তা বাজার/অমি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর