চলনবিলে নৌ-ভ্রমণের আড়ালে অশ্লীল নৃত্য, জুয়া ও মাদক

চলনবিলে নৌ-ভ্রমণে জমজমাটভাবে চলছে অশ্লীল নৃত্য, জুয়া ও মাদকের আসর। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে একশ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি পিকনিক ও নৌকা ভ্রমণের নামে নর্তকিদের ভাড়া করে এনে অশ্লীল কার্যকলাপে মত্ত হয়ে ওঠেন। এতে ক্ষুব্ধ চলনবিলে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা ভ্রমণ পিপাসুরা।

সরেজমিনে চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ ভ্রমণ নৌকার সামনে অশ্লীল পোশাকে নাচছেন নর্তকীসহ হিজড়ারা। আর এদের সঙ্গে নৌকায় নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করে নাচছেন কিশোর-যুবকরা। নৌকার মধ্যেই বসানো জুয়া ও মাদকের আসর। অ-থৈ পানির মধ্যে নৌকায় চেপে এসব অপকর্ম হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় বেপরোয়াভাবে চলছে এসব কার্যক্রম। এতে বিলপাড়ের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

ছবি: বার্তা বাজার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাটোরের গুরুদাসপুরসহ পাশ্ববর্তী বড়াইগ্রাম, সিংড়া ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া এলাকা থেকে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বেড়িয়ে পড়েন নৌকা ভ্রমণে। সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার রান্না হয় নৌকাতেই। স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নর্তকি ও অখ্যাত কণ্ঠশিল্পীদের ভাড়া করে আনা হয়। এরপর উচ্চস্বরে গান-বাজনার তালে তালে নৌকার মধ্যেই চলে অশ্লীল নৃত্য। পাশাপাশি বসে জুয়া ও মাদকের আসর। এসব নর্তকী ও হিজড়াদের অন্য জায়গা থেকে টাকা দিয়ে এনে অবৈধ এমন কর্মকান্ড চালায় ভ্রমণে আসা যুবকরা। নর্তকী ও হিজড়া থাকা নৌকাগুলোর বেশিরভাগ অংশই ছাউনি দেওয়া। আর দিনে নাচের মাধ্যমে আনন্দ দিলেও রাতে ঘটছে অসামাজিক কার্যকলাপ। বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিনই ছোট-বড় অসংখ্য ভ্রমণ নৌকা চলে নদীতে। কিন্তু নৌকা ভ্রমণের নামে নদীতে বাজানো হয় অতিরিক্ত শব্দে গান-বাজনা।

হিন্দি ও ডিজে গানের তালে তালে চলে অশ্লীল নৃত্য, অসামাজিক কার্যকলাপ ও মাদক সেবন। ফলে নৌকা ভ্রমণের নামে অপসংস্কৃতির চর্চা, শব্দদূষণ ও মাদকের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে।

চলনবিলের গবেষক ও কবি সৌরভ সোহরাব বলেন, নৌকাভ্রমণের নামে চলে নানান অসামাজিক কার্যকলাপ। দিনরাত মাত্রাতিরিক্ত শব্দে গান-বাজনা বাজিয়ে চলে নৌকা। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নর্তকী ও হিজড়ারা নৃত্য করে। অপসংস্কৃতি রোধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

গুরুদাসপুর থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ মনোয়ারুজ্জান বলেন, চলনবিল একটা বিশাল এলাকা। সব এলাকার খবর রাখা কষ্টকর। তবে শুনেছি চলনবিলে নৌকা ডুবির ঘটনায় মাঝে মধ্যেই দু একজন করে মারা যায়। সম্প্রতি নৌকার মাঝি আরজু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হত্যাকান্ডের মুল আসামীকে গ্রেফতার করেছি। আর জুয়া এবং মাদকের ব্যাপারে তিনি বলেন ইতিমধ্যেই ২০ থেকে ৩০ জনকে আর্থিক দন্ড ও মামলা করা হয়েছে। ঘটনাস্থল নজরদারীতে রাখা হয়েছে, অপরাধী যেই হোক তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তমাল হোসেন বলেন, গত আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বিষয়টি উঠেছিল। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমি স্ব স্ব বিভাগকে এ ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।

মেহেদী হাসান তানিম/বার্তা বাজার/অমি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর