গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার নতুন ফাঁদ ‘রিং আইডি’!

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো একটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে ‘রিং আইডি’। তবে এই যোগাযোগ মাধ্যমটি ব্যবহার করে হয়রানির শিকার হচ্ছেন অনেকে। লোভনীয় অফার দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে গ্রাহকের টাকা।

আয়ের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই রিং আইডি। এই যোগাযোগ মাধ্যমে বিনিয়োগ করে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন মো. রাব্বি হাসান নামের এক গ্রাহক।

তিনি জানান, গত ১২ আগস্ট ‘রিং আইডি কমিউনিটি জবস মেম্বারশিপ’ নেওয়ার জন্য তিনি ২২ হাজার টাকা পেমেন্ট করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার আইডি অ্যাকটিভ হয়নি। এমনকি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সমাধান হয়নি।

এভাবে মেম্বারশিপের নামে তারা শত শত গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ তার।

আইডি খোলা, জবস মেম্বারশিপ ছাড়াও বিভিন্ন উপায়ে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। তাদের যে ক্যাশ আউট সেবা রয়েছে সেটার মাধ্যমে গ্রাহকরা নিজেদের জমানো টাকা তুলতে পারছেন না, এজেন্টদের মাধ্যমে হচ্ছেন হয়রানির শিকার।

জানা যায়, এ বছরের মার্চ মাস থেকে ‘কমিউনিটি জবস মেম্বারশিপ’ চালু করেছে রিং আইডি। এই সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রাহকরা বিনিয়োগ করে আয় করতে পারবে। আর জন্য সিলভার বা গোল্ড মেম্বারশিপ প্রয়োজন। সিলভার মেম্বারশিপের মূল্য ১২ হাজার টাকা ও গোল্ড মেম্বারশিপের মূল্য ২২ হাজার টাকা। এছাড়াও ২৫ হাজার মূল্যের প্রবাসী গোল্ড ও ৫০ হাজার মূল্যের প্রবাসী প্লাটিনাম প্যাকেজ রয়েছে।

রিং আইডি থেকে জানানো হয়, মেম্বারশিপ পাওয়ার পর বিভিন্ন ধরণের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। ওই বিজ্ঞাপন যত গ্রাহক দেখবেন তত টাকা ইনকাম হয়। সিলভার মেম্বারশিপের প্যাকেজ থেকে দৈনিক ২৫০ ও মাসে ৭ হাজার টাকা, গোল্ড মেম্বারশিপের প্যাকেজ থেকে দৈনিক ৫০০ ও মাসে ১৫ হাজার টাকা, প্রবাসী গোল্ড মেম্বারশিপ থেকে দৈনিক ৫০০ টাকা ও মাসে ১৫ হাজার টাকা, প্রবাসী প্লাটিনাম প্যাকেজ থেকে দৈনিক ১ হাজার টাকা ও প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা আয়ের সুযোগ রয়েছে।

এমন লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহকের টানছে এই মাধ্যমটি। এর ফলে সেখানে অনেক গ্রাহক বিনিয়োগ করছে। কিন্তু কালক্ষেপণ আর টালবাহানাতে হারাতে হচ্ছে সবকিছু।

রিং আইডি থেকে উল্লেখ করা হয়, রিং আইডির জবস মেম্বারশিপ থেকে জমানো অর্থ বিকাশ, রকেট ও নগদ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১০ দিন পর কমপক্ষে ২০০ ও সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা উঠানো যাবে এবং এজেন্টদের মাধ্যমে পেমেন্ট রিকোয়েস্ট দিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাওয়া যাবে।

কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। রিং আইডি সপ্তাহপ্রতি যে নির্দিষ্ট পরিমাণের টাকার কথা উল্লেখ করেছে তারা তা কমিয়ে দেয় এবং মাঝেমধ্যে ক্যাশ আউট অপশন সরিয়ে ফেলে। এই টাকা দিয়ে তাদের অ্যাপ দিয়ে অনলাইন শপিং করতে বাধ্য করা হয় যেখানে পণ্যের দাম অনেক বেশি থাকে।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে এজেন্টদের মাধ্যমে পেমেন্ট রিকোয়েস্ট দিয়ে টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও মাসের পর মাস ঘুরেও টাকা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

মাহবুবুর রহমানের নামের এক গ্রাহক বলেন, গত ৭ সেপ্টেম্বর রিং আইডির এজেন্ট ইমরান হোসেনের নম্বরে ক্যাশ আউট দিয়েছি। কিন্তু এখনো টাকা পায়নি। কল দিলেও এজেন্ট কল ধরছে না।

এভাবেই বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে রিং আইডি।
কোম্পানিটি বাংলাদেশি দাবি করলেও এর দুই প্রতিষ্ঠাতা আইরিন ইসলাম ও শরিফ ইসলাম থাকেন দেশের বাইরে। কানাডা প্রবাসী এই দুইজন দেশের বাইরে থাকায় রিং আইডি থেকে টাকা ফেরত পাওয়া নিয়েও জটিলতা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

দেশে বর্তমানে অনেক ধরণের অনলাইন শপ রয়েছে। এই সেক্টর নিয়ন্ত্রণে কোনো নির্দিষ্ট আইন-নীতিমালা না থাকায় গজিয়ে উঠছে নতুন নতুন কোম্পানি, হাতিয়ে নিচ্ছে গ্রাহকের টাকা। প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অনলাইন ব্যবসায় আগে পণ্যের মূল্য নিয়ে পরে ডেলিভারি দেওয়া যাবে না। পণ্য হাতে পেয়ে মূল্য পরিশোধ করতে হবে। পণ্য ডেলিভারির ক্ষেত্রে ঢাকার ভেতর সর্বোচ্চ ৫দিন ও ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি নিশ্চিত করতে হবে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এসব নির্দেশনা অমান্য করেই চলছে অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।

সম্প্রতি গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা ও নানা অনিয়মের অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল এবং ই-অরেঞ্জের চেয়ারম্যান সোনিয়া মেহজাবিন ও এমডি মাসুকুর রহমানকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে রাখা হয়েছে।

তাদের গ্রেফতারে গ্রাহকদের মনে শঙ্কা আরও বেড়েছে। তারা তাদের অর্থ ফেরত পাবে কিনা এ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। এসব ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে হাজার হাজার গ্রাহক।

বার্তা বাজার/নব

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর