রোহিঙ্গা ক্যাম্প সয়লাব ভূয়া ডাক্তার ও ভূয়া ওষুধে

চোখে চশমা, হাতে চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, ফার্মেসীর ভিতরে চেম্বার, ভিতরে বাইরে অসংখ্য রোগী। এসব রোগীদের দেখেশুনে প্রেসক্রিপশন দেওয়া হচ্ছে। পুশ করা হচ্ছে ইনজেকশন। অনেক সময় কাঁটাছেড়াও করতে দেখা গেছে। বেশভূষা সহ কথা বলার ঢং দেখে মনে হবে তিনি কোনো ডিগ্রীধারী ডাক্তার।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এসব ভূয়া ডাক্তারের বিশাল একটি অংশ ক্যাম্পের আনাচেকানাছে ফার্মেসী দিয়ে বসে আছে। আসল মোড়কে নকল ওষুধ বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কাড়িকাড়ি টাকা। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্প ৮ এ অভিযান চালিয়ে ক্যাম্প প্রশাসন প্রায় ৭ লক্ষ টাকার ওষুধ জন সম্মুখে পুড়িয়ে ফেললেও থামেনি ওষুধ বাণিজ্য। অদক্ষ অযোগ্য অশিক্ষা কুশিক্ষায় বেড়ে উঠা রোহিঙ্গা চিকিৎসকের ভূয়া চিকিৎসার মাধ্যমে অভিনব প্রতারণা চালিয়ে গেলেও পক্ষান্তরে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বৃহত্তর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানব সম্পদ।

এক শ্রেণির ওষুধ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি নিম্নমানের মেয়াদোর্ত্তীণ ভেজাল ওষুধ ক্যাম্পে সরবরাহ করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দাবী সরকারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট পরিমাণ ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। সমপরিমাণ চিকিৎসক তাদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। তাই অন্যান্য চিকিৎসকের দ্বারস্ত হওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না।

কুতুপালংয়ের স্থানীয় বাসিন্দা ও আ’লীগ নেতা নুরুল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের পুঁজি করে ক্যাম্পের আনাছে কানাছে ব্যাংঙের ছাতামত গজে উঠেছে অসংখ্য ওষুধের দোকান। এসব দোকানে নেই কোনো ফার্মাসিস্ট, নেই কোন চিকিৎসক। এক শ্রেণির রোহিঙ্গা হাতুড়ে ডাক্তার রোহিঙ্গাদের অপচিকিৎসা ও নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ দিয়ে নাম সর্বস্ব ডাক্তারী পেশায় আখের গোছাচ্ছে। এসব ভূয়া চিকিৎসকদের শায়েস্তা করার মত কেউ না থাকায় ওষুধ বাণিজ্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গা চিকিৎসকদের হাতে বেশ কয়েকজন রোগী মারা যাওয়ার খবরও রয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিকট থেকে কোন প্রতিবাদ ও ওজর আপত্তি না থাকায় ওইসব প্রতারক চিকিৎসকেরা নির্বিঘ্নে তাদের চিকিৎসা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের খপ্পরে পড়ে স্থানীয়রাও সর্বশান্ত হওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বারস্ত হতে দেখা গেছে।

সম্প্রতি কুতুপালং বস্তি ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায় প্রায় অর্ধশতাধিক অবৈধ ফার্মেসীতে ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি চিকিৎসা দিচ্ছে এসব ভুয়া ডাক্তার। এসব ডাক্তারদের মধ্যে ডিপু জাফর, রোহিঙ্গা সেলিম উল্লাহ ও খোরশেদ আলমের ফার্মেসির পেছনের চেম্বারে রোগীর সংখ্যা বেশী। তারা স্থানীয়দের ম্যানেজ করে চালাচ্ছে অবৈধ ওষুধ বাণিজ্য। প্রায় শতাধিক রোহিঙ্গা চিকিৎসক কুতুপালং ক্যাম্পের ৮ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। চিকিৎসা সেবার নামে অবিনব প্রতারণার সাথে জড়িত রয়েছে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পের মাঝিরা।

কয়েকজন মাঝি জানালেন, প্রশাসনের কিছু লোকজন ওষুধের দোকানে আসা যাওয়া করতে দেখা যায়। তবে ক্যাম্প ইনচার্জ ক্যাম্পে প্রবেশ করলে ওষুধের দোকান বন্ধ করে সংশ্লিষ্টরা শটকে পড়ে।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে রোহিঙ্গা ডাক্তার সেলিম, ডাক্তার নুরু ও ডাক্তার আব্দুল্লাহ জানায়, তারা ক্যাম্প পুলিশকে ম্যানেজ করে ওষুধের ব্যবসা চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান বেশ কয়েকবার কুতুপালং ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ নিম্নমানের ওষুধ মজুদ ও বিক্রির অপরাধে জরিমানা করেছে। এসময় অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকায় বৃহত্তর আকারে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো সম্ভব হয়নি বলে নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রঞ্জন বড়ুয়া রাজন জানান, সরকার ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা বিপুল পরিমাণ ওষুধ সামগ্রী ক্যাম্পে সরবরাহ করছে। রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য সেবার জন্য তারাই যথেষ্ট। ক্যাম্পে কর্মরত রোহিঙ্গারা বিপদগামী হয়ে ভূয়া চিকিৎসকদের দ্বারস্ত হয়ে আর্থিক ও মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রশাসন ইচ্ছা করলে এসমস্ত ভূয়া চিকিৎসকদের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।

বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর