হালাল উপার্জনের প্রলোভনে শিক্ষিকা আত্মসাৎ করলেন ১০ কোটি টাকা!
হালাল উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের কাছে থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে পাবনার স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় প্রতারণার স্বীকার ভুক্তভোগীরা ওই শিক্ষিকার বাড়ি অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরবর্তীতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
অভিযুক্ত সীমা আক্তার (৪০) পাবনা পৌর এলাকার পুলিশ লাইনস স্কুল এন্ড কলেজের প্রাথমিক শাখার শিক্ষিকা। তিনি পৌর এলাকার আটুয়া হাউজ পাড়া মহল্লার মৃত হানিফুল ইসলামের স্ত্রী।
প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা জানান, এই শিক্ষিকা সাধারণ মানুষদের ইসলামী শরিয়া মোতাবেক গরুর খামার ও আরও নানা ধরনের হালাল উপর্জনের কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি শুধু সাধারণ মানুষকেই বোকা বানাননি, নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক ও পুলিশ সদস্যদেরকেও তার শিকারে পরিণত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মানুষ তার কথায় বিশ্বাস করে লাভের আশায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অর্থ বিনিয়োগ করে। লাভের অংক বেশি হওয়ায় লোভে পরে অনেকেই সেখানে অর্থ বিনিয়োগে করতে আগ্রহী হয়। প্রথম পর্যায়ে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে তাদেরকে লাভের অর্থ প্রদান করেন। কিন্তু পরবর্তীতে টাকার অংক বৃদ্ধি পেলে তিনি সমস্ত টাকা আত্মসাত কর এক মাস ধরে গা ঢাকা দেন।
এদিকে মাসিক লাভের অর্থ নিতে এসে ওই নারী ব্যবসায়ীকে না পেয়ে তখন সকলেই বুঝতে পারে তারা চরম প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এদিকে ওই শিক্ষিকার কাছে অর্থ দিয়ে অনেকেই এখন সর্বশান্ত হয়ে পরেছেন বলে জানান। এই ঘটনার পরে স্কুল কতৃপক্ষ সীমা আক্তারকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
ঘটনার পরে ভুক্তভোগীরা পাবনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করছেন। ওই নারী শিক্ষিকা অনেকের কাছ থেকে চেক ও স্টাম্পের মাধ্যমেও অর্থ নিয়েছেন।
তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই শিক্ষিকার বৈধ কোনো কাগজ পত্র পাওয়া যায়নি। তিনি স্বীকার করেছেন মানুষের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার বিষয়টি। তিনি এক জনের কাছে থেকে অর্থ নিয়ে আরেক জনকে দিয়েছে বলে স্বীকার করেন। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ও প্রতারণার শিকার হওয়া সাধারণ মানুষ তাদের অর্থ ফিরে পাবার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে মোছা: সীমা আক্তার বলেন, আমার কোনো বৈধ ব্যবসা নাই। এক জনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আরেক জনকে দিয়েছি। যারা টাকা দিয়েছে তাদেরকে সুদে অনেক টাকা লাভ দিয়েছি। অমি কারো টাকা আত্মসাত করি নাই। মানুষ না জেনে না বুঝে আমাকে টাকা কেন দিয়েছে। তাদেরকে প্রশ্ন করুন। সম্প্রতি যারা আমাকে টাকা দিয়েছে তাদের টাকার একটি হিসাব করেছি। সেখানে প্রায় তিন কোটি টাকার মত হবে। সেই সকল টাকা আমি দিয়ে দিবো। আর যারা সুদে লাভের টাকা নিয়েছে তাদেরটা দিবোনা। আর আমাকে কেন স্কুল থেকে বহিস্কার করেছে সেটি স্কুল কর্তৃপক্ষ জানে। আমি ব্যক্তিগত কাজে বাইরে ছিলাম। জেলা পুলিশ আমাকে আসতে বলেছে বলে আমি এসেছি।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, এই ঘটনার বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। তার বিরুদ্ধে এই ধরণের অভিযোগের কারণে তাকে স্কুল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। তার প্রতারণার বিষয়ে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ নিয়ে এসছিলো ভুক্তভোগীরা। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছি। অনেকেই তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ নিয়ে এসেছেন। ভুক্তভোগীরা তার বাড়িতে তাকে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রেখেছিলো। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে থানাতে নিয়ে আসা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের আলোকে মামলা দায়ের করা হবে।
মাসুদ রানা/বার্তা বাজার/এসজে