৯ বছর ধরে সরকারি স্কুলে শিক্ষক আছে পড়া নাই

দশমিনা উপজেলার একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর অভাবে ৯ বছরেও কোন পাঠদান হয়নি। ওই বিদ্যালয়ের চার জন শিক্ষক বিদ্যালয় খোলার সময় গিয়ে বসে থাকেন বা খোশগল্প করেন আবার ছুটির সময় বাড়ি চলে আসেন। এভাবেই চলছে ওই বিদ্যালয়ের দীর্ঘ বছরের কার্যক্রম।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প হাওর বাওর ও চরাঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষাবঞ্চিত এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সারা দেশে এক হাজার ৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। এর অংশ হিসেবে দশমিনা উপজেলার বাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের (মুল ভূখন্ডের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন) চর বাশবাড়ীয়া এলাকায় ১৪৫ নং চর বাশবাড়ীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জাতীয়করন করা হয়। ওই বিদ্যালয়ে একজন প্রধান শিক্ষকসহ ৩ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।

একসময় চরাঞ্চলের শিক্ষা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মূখর হয়ে ওঠে চরাঞ্চলের ওই বিদ্যালয়টি। কিন্তু ২০১৩ সালে ওই চরে দেশের বৃহত্তর বীজ বর্ধন খামারের জন্য চর বাশবাড়ীয়া এলাকার এক হাজার ৪৬ একর জমি অধিগ্রহন করে বিএডিসি। জমি অধিগ্রহনের পর স্থানীয় বাসিন্দারা উপজেলার মূল ভূখন্ডসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে চলে যান। এর পর থেকে শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে পরে বিদ্যালয়টি। দীর্ঘ ৯ বছর বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী শূন্য অবস্থায় রয়েছে।

কোনো শিক্ষার্থী না থাকলেও মোঃ এনায়েত করিম ,মোঃ মোশারফ হোসেন এবং মোঃ ইয়াছিন নামে তিনজন সহকারী শিক্ষক ও মোঃ তরিকুল ইসলাম নামে একজন প্রধান শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। তবে বিদ্যালটির নামে ক্ষুদ্র মেরামত, স্লিপ, রুটিন মেন্টিনেন্স সহ প্রতি বছর বিভিন্ন বরাদ্দ দেওয়া হয়।

২০২০ সালের ১৫ মার্চ দশমিনা উপজেলার ততকালীন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুজাহিদ উদ্দিন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর বিদ্যালয়টির প্রয়োজনীয়তা নাই উল্লেখ করে অফিসিয়াল স্বারকে একটি চিঠি পাঠান। এরপর একই বছরের ২৮ জুলাই বিদ্যালয়টির প্রয়োজনীয়তা নাই উল্লেখ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি পাঠান পটুয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাইয়াদুজ্জামান।

এর আগে ২০২০ সালের ৪ মার্চ স্থানীয় সংসদ সদস্য এস,এম শাহজাদা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর বিদ্যালয়টির কোন প্রয়োজনীয়তা নেই উল্লেখ করে চিঠি পাঠান।

এত চিঠি চালাচালির পরেও বিদ্যালয়টির ব্যপারে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় চলতি বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আবারো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর বিদ্যালয়টির কোন প্রয়োজনীয়তা নাই উল্লেখ করে বাশবাড়ীয়া ইউনিয়নের বিদ্যালয় বিহীন ১ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিন দাসপাড়া এলাকায় ওই বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের আবেদন জানিয়ে লিখিত চিঠি দিয়েছেন।

এব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থী না থাকায় প্রতিদিন বিদ্যালয়ে গিয়ে শুধু হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন শিক্ষকরা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমীন বলেন, বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী শূন্য থাকার ব্যাপারে একাধিকবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছি।

এ বিষয়য়ে জানতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছাইয়াদুজ্জামানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

স্থানীয় সংসদ সদস্য এস,এম শাহজাদা বলেন, বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর লিখিত চিঠি পাঠিয়েছি। এখন তারা বিদ্যালয়টির ব্যপারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিবেন।

বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর