কার পক্ষে খেলবেন নূর?

দীর্ঘ ২৮ বছর দশ মাস পর ডাকসু অভিষিক্ত হচ্ছে আগামীকাল। এই ডাকসু নিয়ে নানা প্রশ্ন এবং বিতর্কের পর অবশেষে ছাত্রদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটা বড় ব্যাপার এটি। ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে অনেক বিতর্ক হয়েছে। অনেক প্রশ্ন উথাপিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য সংগঠনগুলো ডাকসু নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি অব্যাহত রেখেছে। তার মধ্যেও নতুন ডাকসু শপথ গ্রহণ করছে।

এই ডাকসুর একটা অন্যতম বিশেষত্ব হলো কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম থেকে অংশগ্রহণ করা নুরুল হক নূর ভিপি পদে বিজয়ী হয়েছেন। সমাজসেবা সম্পাদক পদেও কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে একজন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এই নির্বাচনে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্যান্য শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখান করেছে এবং এখানে ছাত্র রাজনীতির একটা নতুন বিন্যাস ঘটেছে। এখন প্রশ্ন হলো নূরের নেতৃত্বে যে ডাকসু, তারা কী করবে? তারা কি ছাত্রলীগের চাওয়া পাওয়া পূরণের জন্যই ডাকসুতে কাজ করবেন নাকি এই ডাকসু সত্যিকার অর্থে শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া আদায়ের একটা প্ল্যাটফর্ম হবে? অনেকগুলো অমীমাংসিত প্রশ্ন সামনে রেখেই নূর অভিষিক্ত হচ্ছেন ডাকসুর ভিপি পদে।

ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ের পর ক্ষণে ক্ষণে রং বদলিয়েছেন নূর। কখনো তিনি বলেছেন, এই নির্বাচনের দুটি পদ ছাড়া বাকিদের পুনর্নির্বাচন দিতে হবে। কখনো তিনি বলেছেন পুরো ডাকসু নির্বাচন বাতিল করতে হবে। আবার ছাত্রলীগের সঙ্গে যখন তারা দেখা করেছেন, তখন তিনি বলেছেন, ডাকসুকে তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া আদায়ের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি বলেছেন, তার মাঝে মায়ের ছবি খুঁজে পান। আবার বিএনপি সমর্থিত ছাত্রদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেছেন, ডাকসুকে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে যে ইস্যুগুলো আছে সেই ইস্যুগুলোর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করবেন। ডাকসু যখন অভিষিক্ত হচ্ছে, তখন সারাদেশে আবরারের মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের আন্দোলন চলছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন স্তিমিত হলেও এই আন্দোলন নতুন করে সংগঠিত করার চেষ্টা চলছে। এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে নূর কার পক্ষে খেলবেন? যদিও নূরের অতীত হলো তিনি ছাত্রলীগ করতেন। ছাত্রলীগের হল শাখার একজন নেতা ছিলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর তাঁকে নিয়ে অনেক বিতর্ক দেখা দিলেও কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়েই যে তিনি পরিচিতি পান এবং জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠেন সেটা নিয়ে এখন আর কোনো বিতর্ক নেই। কিন্তু এই জনপ্রিয়তাকে তিনি কতটুকু কাজে লাগাতে পারবেন? তিনি কি পারবেন সরত্যিকারের শিক্ষার্থীদের নেতা হতে? নাকি তিনি আওয়ামী লীগের ছাত্রসংঠন ছাত্রলীগের পুতুল হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন? এই বিষয়গুলো দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে সামনের দিনগুলোতে।

নূর কার পক্ষে খেলবেন তাঁর উপর নির্ভর করছে এই ডাকসু। যদিও ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বময় ক্ষমতা ডাকসুর সভাপতির ওপর। ডাকসুর সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কিন্তু ছাত্রদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে ডাকসুর ভিপির ক্ষমতাও অপরিসীম। ডাকসুর ভিপির বক্তব্য এবং ডাকসুর ভিপির অবস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত হিসেবেই বিবেচিত হয়। এই বাস্তবতায় নূরের ভূমিকা কি হবে তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন। যদিও ছাত্রলীগের একাধিক নেতা বলছেন যে, নূর ছাত্রলীগের সঙ্গে সহমত থেকেই কাজ করবেন এবং ডাকসুতে যে বিষয়গুলো হবে সেগুলোতে সরকারের উন্নয়ন এবং সরকারের কর্মসূচিগুলোর আলোকেই ডাকসুর কর্মকান্ড প্রণয়ন করা হবে। আবার নূর যেটা বলছেন তা হলো তিনি শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া, অভাব-অভিযোগ সেটি নিয়ে তিনি এগুবেন। এই দুই চাওয়া পাওয়ার দুই রেখা এক বিন্দুতে মিলিত হবে কীভাবে সেটাই দেখার বিষয়।

ডাকসু কি সত্যিই নূরের নেতৃত্বে একটি নতুন মেরুকরণ ঘটাবে? নাকি নূর জনপ্রিয়তার যে চাপ সেই চাপ সামলাতে ব্যর্থ হয়ে নিজেই একজন বিতর্কিত ব্যক্তিতে পরিণত হবেন? সেটা বুঝা যাবে ডাকসু কীভাবে কাজ করে তাঁর ওপর। আগামীকাল নতুন ডাকসু অভিষিক্ত হওয়ার পর শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয় দেশের রাজনীতির দৃষ্টি থাকবে এই ডাকসুর দিকে। এই নতুন ডাকসু কির করে? কীভাবে এগোয় তার ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু নয় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং শিক্ষার আন্দোলন অনেকাংশে নির্ভর করছে।

— বাংলা ইনসাইডার

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর