হত্যাকারীদের অবস্থান নিশ্চিত করে তানভীর

রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি অলি ও জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার তানভীর। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার আরও তিন আসামির পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার (১ জুলাই) বিকাল তিনটার দিকে রিফাত হত্যা মামলার পাঁচ আসামিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর বিকাল ৫টার দিকে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি অলি ও জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার তানভীর আদালতে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।

বিচারক মোহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম গাজী আসামিদের জবানবন্দি শেষে জেল হাজতে পাঠান। এ সময় অন্য তিন আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন তিনি।

স্বীকারোক্তিতে আসামি অলি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতকে জানায়, হত্যার আগের দিনের প্ল্যান অনুযায়ী ২৬ তারিখ সকালে রাকিবুল ইসলাম রিফাতের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা অস্ত্র নিয়ে কলেজ রোড এলাকায় রিফাত ফরাজীর কাছে পৌঁছে দেয় সে। রিফাত ফরাজী অস্ত্রের ব্যাগ একটি টিনের চালার ওপর রাখে। পরে ওই অস্ত্র নিয়ে রিফাত ফরাজী, রাকিবুল ইসলাম রিফাত ও টিকটক হৃদয় নয়ন বন্ডের সঙ্গে হামলায় অংশ নেয়। রিফাত শরীফকে মারধরের সময় হত্যাকারীদের সহায়তা করে বলেও আদালতকে জানায় অলি।

অন্য আসামি তানভীর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতকে জানায়, রিফাতকে হত্যার আগে বরগুনা সরকারি কলেজ মাঠে তাদের ০০৭ গ্রুপের একটি বৈঠক হয়। সেখানে রিশান ফরাজী তাকে ২৬ তারিখ কলেজ রোড এলাকায় আসতে বলে। কি জন্য আসতে হবে জানতে চায় তানভীর। পরে রিশান তাকে জানায় রিফাত শরীফকে খুন করা হবে। রিশান ফরাজীর নির্দেশনা অনুযায়ী ২৬ তারিখ ৯টার সময় কলেজ রোড এলাকায় হাজির হয় তানভীর। হামলা ও মারধরের সময় যাতে রিফাত শরীফ পালাতে না পারে এ জন্য তানভীর প্রতিটি গলিতে মানুষ রেডি করে রাখে। সবার অবস্থান নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল তার ওপর।

আদালতে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া কয়েকজনের নামও জানায় তানভীর। জড়িতদের মধ্যে রয়েছে, সাব্বির আহমেদ নয়ন (নয়ন বন্ড), রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রাকিবুল ইসলাম রিফাত, রাব্বি আকন, রায়হান। হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার জন্য অজ্ঞাত আরও অনেকে ছিল বলে জানায় তানভীর।

এ সময় পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্য তিন আসামি নাজমুল হাসান, কামরুল ইসলাম সাইমুন ও মো. সাগরের পাঁচ দিন করে রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। এদের মধ্যে নাজমুল হাসান প্রথমবার তিন দিনের রিমান্ডে ছিলেন। দ্বিতীয় ধাপে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আবারও পাঁচ দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা আদালতে পাঁচ জন আসামিকে হাজির করেছিলাম। এদের মধ্যে অলি ও তানভীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বাকি তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

প্রসঙ্গত, ২৬ জুন সকাল সাড়ে দশটার দিকে বরগুনার কলেজ রোড এলাকায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে তার স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ হত্যাকাণ্ডের পরদিন বরগুনা সদর থানায় ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যামামলা দায়ের করেন। এখন পর্যন্ত পুলিশ ৯ আসামিকে গ্রেফতার করতে পেরেছে। এরমধ্যে চার জন এজাহারভুক্ত ও পাঁচ জনকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্যে দুই জন জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। পাঁচ আসামি পুলিশ রিমান্ডে রয়েছে।

এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, আমরা সব আসামিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সব আসামিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর