রেজওয়ান করিমের সফল ফ্রিল্যান্সার জীবনের গল্প

বিশ্ব এখন এগোচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে। এই বিপ্লবের মূলে আছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)। বাংলাদেশেও আইসিটির প্রসার দ্রুত হচ্ছে। অনেকেই আইসিটি নির্ভর ক্যারিয়ার গঠনের চেষ্টা করছেন, কেউবা হচ্ছেন ফ্রিল্যান্সার। কেউ কেউ হচ্ছেন সফল। তেমনি এক সফল ফ্রিল্যান্সারের কথা জানাচ্ছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত

রেজওয়ান করিম, প্রযুক্তিই যার নেশা-পেশা। রেজওয়ানের শৈশব কৈশোর কেটেছে ঢাকাতে। বর্তমানে তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বসবাস করেন। দুই ভাই-বোনের মধ্যে রেজওয়ানই বড়। বাবা রেজাউল করিম বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে কর্মরত আছে। মা রোজিনা খাতুন গৃহিনী।

রেজওয়ান গাজীপুর প্রাইভেট ক্যাডেট কলেজ থেকে ২০০৮ সালে মাধ্যমিক ও ২০১০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। এরপর এরোনটিকাল ইন্সটিটিউট অফ বাংলাদেশ থেকে এরোনটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ালেখা শেষ করেন। ২০১৬ সালে ইন্টার্নশীপ শেষ করার পর অনেক চেষ্টা করেও চাকরি হচ্ছিলো না তার। তারপর অনেক ভেবে রেজওয়ান ক্যারিয়ার শিফট করার চিন্তা করেন।

রেজওয়ান বলেন, ‘ছোটোবেলা থেকেই টেকনোলজির প্রতি আমার প্রচন্ড আগ্রহ ছিলো। ২০০০ সালে আব্বু তার অফিসিয়াল কাজের জন্য কম্পিউটার কিনেছিলেন। ঐসময় থেকেই কম্পিউটার বা টেকনোলজির প্রতি আমার আলাদা একটা আকর্ষণ বাড়তে থাকে। তখন আমরা (২০০০) সালে অগ্নি নামক একটা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতাম। তখনকার সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করা অনেক কঠিন ও ব্যায়বহুল ছিল। খুব অল্প সংখ্যক মানুষ তখন ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন। তখন থেকেই আমি ইন্টারনেটের খুটিনাটি বুঝতাম। আমি যেহেতু চেষ্টা করার পরেও আমার সেক্টরে চাকরি হচ্ছিলো না তাই আমি ভিন্ন উপায় খুজছিলাম। অবশেষে ভেবে চিন্তে আমি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করি’।

রেজওয়ান বার্তা বাজারকে আরও বলেন, ‘আমার এখনো মনে আছে প্রথম প্রজেক্ট এর কথা। প্রজেক্টটি শেষ করতে ৭ দিনের মতো সময় লেগেছিলো। আমি খুব আগ্রহী ছিলাম আমার প্রথম কাজ নিয়ে। এরপর আবার পরবর্তী কাজের জন্য বিড করলাম। পরের প্রজেক্টটির কাজ ছিল ২০ ডলারের। এরপর নিয়মিত কাজ পেতে লাগলাম। তবে ২০১৯ সালে এসে কয়েক মাস এপ্লাই করার পরেও কাজ পাচ্ছিলাম না। তখন আবার হতাশ হয়ে পরি। চিন্তা করলাম আমার ল্যাকিংস কোথায়? কাজ পাচ্ছি না কেন? পরে নিজের স্কিল আরও ডেভেলপ করলাম, কভার লেটার আপগ্রেড করলাম তারপর আবার নতুন করে এপ্লাই করা স্টার্ট করলাম। এবার ভাগ্য সহায় হলো। বিড করার সাথে সাথেই কাজ পাচ্ছিলাম’।

বর্তমানে আপওয়ার্কের টপ রেটেট প্লাস ফ্রিল্যান্সার রেজওয়ান। টপ রেটেড এর উপরে হচ্ছে টপ রেটেড প্লাস। ২০২০ সালে অনেকগুলো প্রজেক্টর কাজ করে রেজওয়ান। অনেক প্রতিষ্ঠত কোম্পানি যেমন- ব্লুমবার্গ (Bloomberg), আপকাউন্সিল (Upcounsel), ওয়েফেয়ার (wayfair) এর মতো কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ পান তিনি।

এরপর ২০২০ সালের শেষের দিকে ফিনল্যান্ডের স্টার্টআপ কোম্পানিতে একটা প্রজেক্টের জন্য এপ্লাই করেন রেজওয়ান। এরপর ইন্টারভিউতে ডাক পরে তার। সেখানে রেজওয়ান প্রথমে ১ মাসের জন্য ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করেন। এরপর রেজওয়ানের পারফর্মেন্স এবং সততাই মুগ্ধ হয়ে তাকে পার্মানেন্ট ফুল টাইম কাজের অফার করেন। বর্তমানে তিনি সেখানে পার্মানেন্ট ভাবে ফুল টাইম ডাটা এনালিস্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। ৪ বছরের ফ্রিল্যান্সিং জীবনে রেজওয়ান এ পর্যন্ত প্রায় ২২ লাখ টাকা উপার্জন করেন।

রেজওয়ানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, তিনি তার অবসর সময়ে, যারা ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চান তাদের বিনামূল্যে ফ্রিল্যান্সিং শেখানো, তাদেরকে গাইড করা এবং ট্রেনিং দিতে চান। সেই লক্ষ্যে তিনি খুব শীঘ্রই একটা ট্রেনিং সেন্টার খুলতে যাচ্ছেন।

রেজওয়ান ফ্রিল্যান্সিং এর পাশাপাশি অবসর সময়ে গান করেন। গান করা তার অন্যরকম একটা শখ। বর্তমানে বাবার কিনে দেওয়া পিয়ানো দিয়ে অবসর সময় কাটে গান তৈরি করে এবং এ গানগুলো তিনি তার ভেরিভাইড স্পটিফাই প্রোফাইল ও ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড দেন।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর