বইপ্রেমী হারুনের অভিনব উদ্যোগ: সেলুনভিত্তিক পাঠাগার

সমাজকে বইয়ের আলোয় আলোকিত করতে পলান সরকারের বইয়ের কথা ছড়িয়ে দেয়ার গল্প আমরা সবাই কম বেশি জানি। তিনি একটানা ৩০ বছর পায়ে হেঁটে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিয়েছেন বইয়ের কথা।

পলান সরকারের মৃত্যু হলেও থেমে নেই তাঁর দেখানো পথে বই প্রচারের কার্যক্রম। শুধু তাই নয়, বইয়ের প্রচারের কিছুটা ব্যতিক্রমী পথ বেছে নিয়েছেন বই প্রেমী হারুন।

এ প্রজন্মকে বইয়ের নেশায় আসক্ত করতে তিনি মানুষের বাড়ি বাড়ি বই পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি হাতে নিয়েছেন এক অভিনব উদ্যোগ। বইয়ের সাথেই যার আজন্ম সখ্য। আমরা তাকে এ যুগের পলান সরকার হিসেবেই চিনে থাকি। তাকে বলা হয় আলোর ফেরিওয়ালা। বইয়ের আলোয় সমাজকে আলোকিত করার লক্ষ্যে এবারের উদ্যোগ তাক লাগিয়ে দিয়েছে সবাইকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একের পর এক গড়ে তুলছেন সেলুভিত্তিক পাঠাগার।

তাঁর পুরো নাম হারুন অর রশীদ। ১৯৮৩ সালের ১০ আগস্ট কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলায় গোবরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। স্কুল শিক্ষক মৃত আসাদুল্লাহ মাস্টার ও সুফিয়া আক্তার দম্পত্তির দ্বিতীয় সন্তান। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী শেষ করে বর্তমানে ঢাকার নবাবগঞ্জে কর্মরত আছেন গ্রামীণ ব্যাংকে।

পেশায় ব্যাংকার হলেও আপাদমস্তক বইপ্রেমী হারুন অর রশীদ উদ্যোগ নিলেন সেলুনভিত্তিক পাঠাগার নির্মাণের। সফলও হলেন তাতে। ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় কলাকোপা বাজারের সুব্রত হেয়ার কাটিং সেলুনে নির্মাণ করলেন সেলুনভিত্তিক ব্যতিক্রমী এক পাঠাগার। উদ্দ্যেশ্য চুল কাটতে আসা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে অলস সময়ের ফাঁকে বই হাতে তুলে দেয়া।

মূলত সমাজের একটি অংশকে বইমুখী করাই হচ্ছে তার উদ্যোগের মূল উদ্যেশ্য। ‘বই হোক নিত্যসঙ্গী’- এ স্লোগানকে সামনে রেখে অফলাইনে বইয়ের প্রচারে এ উদ্যোগের সাথে থাকতে চাইলে যে কেউ শামিল হতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

থেমে নেই তার সেলুনভিত্তিক পাঠাগার নির্মাণের অগ্রযাত্রা। ঢাকার নবাবগঞ্জে সুব্রত হেয়ার কাটিং সেলুন দিয়ে পাঠাগার নির্মাণের সূচনা করলেও দেশের বিভিন্ন জেলার সেলুনে তিনি নির্মান করে যাচ্ছেন একের পর এক পাঠাগার। গতমাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে উপজেলার অরুয়াইল বাজারে নকুল হেয়ার ফ্যাশনে নির্মাণ করেন সেলুনভিত্তিক পাঠাগার।

চলতি মাসের প্রথম দিকে রাজশাহী নগরীর সাগর পাড়া বটতলায় সাগর ম্যানস ফ্যাশন, নাটোরের বঙ্গজ্বলে শুভ হেয়ার ফ্যাশন এবং কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে অর্জুন হেয়ার কাটিং সেলুনে নির্মাণ করেন সেলুনভিত্তিক পাঠাগার। চলতি সপ্তাহে সেলুন পাঠাগার নির্মাণ করেন শেরপুর শহরের বুলু হেয়ার কাটিং সেলুনে এবং মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাটে সুমাইয়া হেয়ার ফ্যাশনে।

এ পর্যন্ত ১১ জেলায় নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন ১১টি সেলুন পাঠাগার। তার লক্ষ্য ক্রমান্বয়ে ৬৪ জেলায় সেলুনভিত্তিক পাঠাগার নির্মাণ করার। এ লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন বইপ্রেমী এই মানুষটি।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে যেখানেই সুযোগ সৃষ্টি হবে, সেখানেই ধাপে ধাপে নির্মিত হবে এ ব্যতিক্রমী পাঠাগার। প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশের বিখ্যাত লেখকদের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় কিছু লেখকের বইও স্থান পেয়েছে তার নির্মিত সেলুন পাঠাগারটিগুলোতে।

দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে, অফলাইনে বই নিয়ে কাজ করে আসছেন বইয়ের এ ফেরিওয়ালা। গত বছর করোনা লকডাউনেও তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই পৌঁছে দিয়েছেন, যা অনেকের মানসিক প্রশান্তিতে ভূমিকা রেখেছিল।

বই নিয়ে নিত্য নতুন এসব উদ্যোগ এবং ইন্টারনেটে ঝুঁকে যাওয়া প্রজন্মকে বইমুখী করার এ কাজকে স্বীকৃতি জানিয়ে কিছুদিন আগে আফ্রিকা এশিয়া ইউথ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তিনি বাংলাদেশের “বেস্ট সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট” নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বই নিয়ে স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে চাইলে আলোর ফেরিওয়ালা হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরণ বইয়ের কথা ছড়িয়ে দিতে চাই গ্রাম থেকে শহরে এবং লোকান্তরে। এর জন্য সবার সহাযোগিতা কামনা করছি। যে কেউ এ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। অর্থ বা বই দিয়ে পাশে থাকতে পারেন।’

উল্লেখ্য, বই নিয়ে তিনি গত দশ বছর ধরে কাজ করছেন অফলাইন এবং অনলাইনে। ইতোমধ্যে তিনি দেশি-বিদেশি প্রায় দুই শতাধিক বইয়ের রিভিউ করে অনলাইনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন।

বার্তা বাজার/টি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর