মহসিনকে বেধড়ক পিটুনির ঘটনায় আটক ৫

চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবর শাহ থানা এলাকায় যুবলীগকর্মী মোহাম্মদ মহসিনকে (২৬) প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা বেধড়ক পিটুনি দিয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই একটি সিসি ক্যামেরা ছিল। সেই ক্যামেরায় পিটুনির পুরো দৃশ্য ধরা পড়েছে। ভিডিও ফুটেজের তথ্য বিশ্লেষণ করে পুলিশ কয়েকজনকে শনাক্ত করে। শেষে রাতে অভিযানে চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মহসিনের পরিবার মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।

বরগুনায় রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশের আইন-শৃখলা পরিস্থিতি নিয়ে যখন জনমনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, তখনই সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা এমন লাঠিপেটা করল, যা দেখে শিহরিত হয়ে উঠে শরীর। এর আগে খুলশী থানার লালখান বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সেখানে পুলিশসহ দুইপক্ষের কর্মীরা আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মহসিন একটি সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। লাঠিসোটা দিয়ে সেখানে অতর্কিত উপস্থিত হয় ১০-১২ জন সন্ত্রাসী। তাদের দেখে মহসিন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু দ্রুত ঘিরে ফেলায় পালানো সম্ভব হয়নি। মুহূর্তের মধ্যেই লাঠিসোটা নিয়ে মহসিনের ওপর হামলে পড়ে সন্ত্রাসীরা। লাঠিপেটা শুরুর পর সড়কে পড়ে যায় মহসিন। সেখানেই তিন-চারজন যৌথভাবে লাঠিপেটা করতে থাকে। একজন পা ধরে রাখে। দুই হাত উচিয়ে বাঁচার আকুতি জানানোর মধ্যেই হাতে লাঠিপেটা সন্ত্রাসীরা। মারধরের পর চলে যাওয়ার সময় এক সন্ত্রাসী মহসিনকে সজোরে লাথি মেরে চলে যায়। অর্ধমৃত মহসিন সড়কে পড়ে থাকে।

ভিডিও ফুটেজ দেখে স্থানীয়দের মাধ্যমে পুলিশ জানতে পারে, মহসিনকে মারার সময় পা ধরে রাখা সন্ত্রাসীর নাম জুয়েল। শনাক্ত হওয়া অন্য কয়েকজন সন্ত্রাসীর মধ্যে খোকন, রাব্বী, ফারহান ও তুহিনের নাম জেনেছে পুলিশ।

এ বিষয়ে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, আকবর শাহ থানার বিশ্বকলোনী এলাকার সেভেন মার্কেটের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার সঙ্গে উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিমের অনুসারীরা জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার মোরশেদ কচি অভিযোগ করেন, কাউন্সিলরের অনুসরীরা মধ্যযুগীয় কায়দায় মহসিনকে মারধর করেছে।

পুলিশ কর্মকর্তারাও জানান, আকবর শাহ থানা এলাকায় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জসিম ও সরওয়ার মোরশেদ কচির মধ্যে বিরোধ আছে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে গতকাল যুবলীগকর্মী মোহাম্মদ মহিসনকে পিটুনিকে দেওয়া হয়। মহসিনকে পিটুনি দেওয়ার ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগ নেতা সরওয়ার মোর্শেদ পক্ষের লোকজন মিছিল বের করে। এই সময় ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

ঘটনার বিষয়ে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানিয়েছেন, মহসিনের সহযোগীরাও তাকে পিটিয়েছে। এর সঙ্গে আমার কর্মীরা জড়িত নয়। মহসিনও সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে মামলা আছে।

এর আগে শনিবার সরওয়ার মোর্শেদ কচির অনুসারী কর্মী মামুনকে মারধর করা হয়। এই ঘটনায়ও কাউন্সির জসিমের অনুসারী কর্মীদের দায়ী করা হয়। পরে কচির অনুসারী কর্মীরা গিয়ে বেলাল উদ্দিন জুয়েলকে মারধর করে। পরদিন রবিবার মারধরের শিকার হয় মোহাম্মদ মহসিন। বর্তমানে মহসিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে আকরব শাহ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, রবিবার সন্ধ্যায় ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সবাই বিশ্বকলোনী এলাকার বাসিন্দা। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো মো. সাজু (২৪), মো. তারেক (১৮), মো. বেলাল হোসেন (২০), মোহাম্মদ মিরাজ (১৮) ও মো. মাসুদ (১৮)। তাঁরা সহ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে আহত যুবলীগ কর্মী মহসিনের পরিবার। মামলা রেকর্ড হওয়ার পর আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর