জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সেই শাহীন

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিনতাইকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখম যশোরের কিশোর অটোরিকশাচালক শাহীন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা চলছে তার।

শনিবার রাতে শাহীনকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর ওই রাতেই তার মাথায় অস্ত্রোপচার হয়। তিন ঘণ্টার বেশি সময় অস্ত্রোপচার শেষে রাত ৩টায় তাকে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) রাখা হয়।

ঢামেক সূত্র জানিয়েছে, শাহীনের চিকিৎসার সার্বক্ষণিক খবর রাখছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে রাতেই শাহীনের স্বজনদের হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেয়া হয়েছে। আর শাহীনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. অসিত চন্দ্র সরকার বলেন, শাহীনের মাথার হাড় ভেঙে ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। অস্ত্রোপচার করেছি। তাকে ইমার্জেন্সি ওয়ান স্টপের আইসিইউতে রাখা হয়েছে।

শাহীন যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের হায়দার আলী মোড়লের ছেলে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সে সবার বড়। সংসারে অভাবের কারণে মাত্র ১৭ বছর বয়সে সংসারের হাল ধরতে অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় নামতে হয় তাকে। সংসারের দায়িত্ব নিতে গিয়ে তার জীবনই এখন সংকটাপন্ন।

২৮ জুন সকালে ভদ্রবেশে দুর্বৃত্তরা যাত্রীবেশে শাহীনের অটোরিকশা ভাড়া নেয়। এরপর সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার ধানদিয়ায় নিয়ে রাস্তার দু’পাশের পাটক্ষেতের নির্জন স্থানে শাহীনের মাথায় আঘাত করে তার শেষ সম্বল অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে শাহীনকে উদ্ধার করে প্রথমে খুলনার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

কিশোরটির একটি রক্তভেজা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সংশ্লিষ্টদের নজরে আসে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হলে তিনি তার বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া এবং ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকনকে নির্দেশ দেন শাহীনের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে।

শনিবার রাত ১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন ঢামেকে গিয়ে শাহীনের স্বজনের হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। এ সময় তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শহীনের চিকিৎসার পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন।

শাহীনের চাচা মনসুর আলী জানান, স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ত শাহীন। তার বাবা খুবই দরিদ্র। বসতভিটা ছাড়া আর কোনো সহায়সম্বল নেই তাদের। অভাবের সংসার ও পারিবারিক অবস্থানের কারণে কয়েক মাস আগে পড়াশোনা ছেড়ে ভ্যান চালানো শুরু করে শাহীন। একটি ভ্যান হওয়ায় বাবা-ছেলে দু’জনে শিফট মেনে ভাড়া চালায় তারা।

সম্প্রতি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কিনে সেটি চালিয়ে সংসার চালাত শাহীন। ওই রোজগারের টাকায় তাদের সংসার খরচ, ঋণের কিস্তি ও বোনের পড়ালেখার খরচ চলত।

এদিকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার হয়নি অটোরিকশাটিও। পাটকেলঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল ইসলাম রেজা জানিয়েছেন, আসামিদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর