কখনো কখনো আত্মহত্যার চিন্তাও মাথায় এসেছিল

জায়রা ওয়াসিম, বলিউড অভিনেত্রী। মিস্টার পারফেকশনিস্ট আমির খানের ‘দঙ্গল’ ছবিতে অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার পান। রোববার সোশ্যাল মিডিয়ায় দীর্ঘ লেখনির মাধ্যমে জায়রা বলিউডের রুপালি পর্দাকে বিদায় জানিয়েছেন বলে খবর দিয়েছে ইন্ডিয়া টুডে ও আনন্দবাজার পত্রিকা।

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ সোশ্যাল মিডিয়ার সব প্লাটফর্মে তিনি যা লিখেছেন, তার সারমর্ম— বলিউডের অভিনয় তাকে খ্যাতি-যশ আর শারীরিক সৌন্দর্যকে উচ্চে নিলেও নিজের ঈমান ও ধর্ম বিশ্বাস বিপন্ন হচ্ছিল। সুখী হতে পারছিলেন না। তাই শেষমেষ সেটি রক্ষার্থেই জায়রা ওয়াসিম ইসলামে ফিরে গেলেন।

কাশ্মীরি কন্যার উপলব্দি, ‘আমি এখানে সুন্দরভাবে ফিট হতে পারব। কিন্তু, আমি এটার জন্য নয়।’

এরপরই তিনি লেখেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছি আমি বহুদিন ধরেই অন্য একজন হয়ে ওঠার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। এই ফিল্ড আমাকে অনেক ভালবাসা, সমর্থন, প্রশংসা দিয়েছে। কিন্তু, এই ফিল্ড আর যেটা করেছে তা হলো আমাকে ক্রমশ অবমাননার দিকে ঠেলে দিয়েছে, ক্রমশ অসচেতনভাবে আমি আমার ঈমান (বিশ্বাস) থেকে বেরিয়ে এসেছি। কারণ, আমি এমন একটা পরিবেশে কাজ করতাম, যা ক্রমাগত আমার ঈমানের মাঝে এসে দাঁড়াতো, ধর্মের সঙ্গে আমার সম্পর্ক বিপন্ন হয়ে পড়েছিল।’

মূলত এ ঘোষণার মাধ্যমে পাঁচ বছরের জনপ্রিয়তায় ইতি টানলেন জায়রা ওয়াসিম। সোশ্যাল মিডিয়ায় সাড়ে পাঁচ পাতার একটি পোস্টে তিনি বলেছেন, ফিল্মি কেরিয়ার তার বিশ্বাস এবং ধর্মের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েছে এবং সে কারণেই যে তিনি অভিনয় ছাড়ছেন, তা বারবারই উঠে এসেছে।

২০১৬ সালে আমির খানের সঙ্গে ‘দঙ্গল’ ছবিতে অভিনয় করেন জায়রা ওয়াসিম। এটাই ছিল তার ডেবিউ ফিল্ম। এত কম বয়সে তার অভিনয় দক্ষতা অত্যন্ত প্রশংসিত হয়। ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড, ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড-ন্যাশনাল চাইল্ড অ্যাওয়ার্ড ফর একসেপশনাল অ্যাচিভমেন্ট পেয়েছেন জায়রা।

গত মার্চে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে তার ছবি ‘দ্য স্কাই ইন পিঙ্ক’-এর শুটিংও শেষ হয়েছে। শুরু থেকেই জায়রার কেরিয়ার গ্রাফ ক্রমশ উঁচুতে উঠছিল। এমন সময়েই তিনি অভিনয় থেকে সরে দাঁড়ালেন।

জায়রা লিখেছেন, পাঁচ বছর আগে আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তা চিরকালের জন্য আমার জীবন বদলে ফেলেছে। যে মুহূর্তে বলিউডে পা রেখেছিলাম, আমার জন্য বিশাল জনপ্রিয়তার দরজা খুলে গিয়েছিল। সাধারণ মানুষের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছিলাম, সাফল্যের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল এবং প্রায়ই তরুণদের রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। কিন্তু, আমি যা করতে চেয়েছিলাম বা হতে চেয়েছিলাম, তার কোনোটিই এগুলো নয়, আমার কাছে সাফল্য এবং ব্যর্থতার যা ধারণা, সবে আমি তা বুঝতে শুরু করেছি।

জায়রার পোস্ট থেকে জানা গেছে, ক্রমাগত সেই বাধার সঙ্গে মানসিকভাবে লড়তে শুরু করেন তিনি। বারবার নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, এমন একটা ফিল্ডে তার কাজের সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক এবং সেটা কখনো তার জীবনকে প্রভাবিত করবে না। কিন্তু, নিজের উপর থেকে সমস্ত বারাখা (আশীর্বাদ)’ হারিয়ে ফেলছিলেন, লেখেন তিনি।

এরপর জায়রার সংযোজন, ‘কোরআনের বিশাল এবং ঐশ্বরিক জ্ঞানের মধ্যে আমি তৃপ্তি এবং শান্তি খুঁজে পেয়েছি। প্রকৃতপক্ষে হৃদয় তার সৃষ্টিকর্তার জ্ঞান, তার গুণাবলী, তার করুণা এবং তার আদেশের জ্ঞান অর্জনে শান্তি পায়।’

নিজের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বদলে আল্লাহর উপরেই যে ভীষণভাবে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন জায়রা, তার উল্লেখও রয়েছে পোস্টে। এতদিন নিজের বিবেকের সঙ্গে প্রতারণা করে কীভাবে সৃষ্টিকর্তা দ্বারা সৃষ্টির প্রকৃত উদ্দেশ্য ভুলে নিজের জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি, সেটারও উল্লেখ রেখেছেন ওই পোস্টে।

শেষে সকলের প্রতি জায়রার উপদেশ— সাফল্য, খ্যাতি, সম্পদ যে পর্যায়ে পৌঁছে যাক না কেন, তাতে যেন কখনো শান্তি এবং নিজের বিশ্বাস না হারিয়ে যায়। বহুদিন থেকে যে কারণেই হোক জায়রা যে শান্তিতে ছিলেন না তা অবশ্য বছরখানেক আগেই তার অন্য একটি পোস্ট থেকে জানা গিয়েছিল।

এর আগে ২০১৮ সালে নিজেকে ভীষণ অবসাদগ্রস্ত জানিয়ে পোস্ট করেছিলেন জায়রা। সেই পোস্টে তিনি জানিয়েছিলেন, গত চার বছর ধরে দিনে পাঁচবার করে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট খেতে হয় তাকে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ ঘুম হয় না। এমনকি মানসিক অবসাদ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, কখনো কখনো তার আত্মহত্যার চিন্তাও মাথায় এসেছিল বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু, এত অবসাদ কেন তাকে গ্রাস করেছিল, তা তখন স্পষ্ট করেননি জায়রা।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর