স্থায়ী সমাধান চায় লালমনিরহাটের নদীভাঙ্গন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা

লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় তিস্তার ভাঙ্গনে নিঃস্ব শতাধিক পরিবার। প্রতিনিয়তই মাথা গোঁজার ঠাঁই বসতভিটে হারিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে দারিদ্রসীমার নিচে অবস্থান করা অসহায় পরিবারগুলো।

জেলার সদর উপজেলার গোকুন্ডা ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের চরগোকুন্ডা, তিস্তাচর চোংগাদ্বাড়া বাজারের পশ্চিম পাশ, খোলাহাটি, কালমাটি, বাগদ্বারা, গোবর্ধন এলাকায় তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।

গত কয়েকদিনে বিভিন্ন এলাকায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বেশকিছু ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও রাস্তা।

সরেজমিনে ভাঙন কবলিত এলাকায় দেখা যায়, ঘরবাড়িসহ আসবাবপত্র সরিয়ে নিতে ব্যস্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলো। ভাঙন এলাকা থেকে দূরে কেউবা রাস্তার ধারে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের থাকার ব্যবস্থা হলেও গবাদীপশু নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

বৃষ্টির পানি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢালে তিস্তানদী সংলগ্ন চরের উঠতি ফসলসহ বসতবাড়ি বিলীন হচ্ছে তীরবর্তী মানুষদের। তিস্তার ভাঙনে চর-গোকুন্ডা, রাজপুর, খুনিয়াগাছ, চোংগাদ্বাড়া, কালমাটি, বাগদ্বারা, গোবর্ধনসহ বেশকিছু এলাকার সহস্র ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে পরেছে।

একই চিত্র আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের দক্ষিণ বালাপাড়া এলাকার, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়ন এর চর ভোটমারী, তুষভান্ডার ইউনিয়ন এর আউলিয়ারহাট, চর বৈরাতীর মুন্সির বাজার ও কাকিনা ইউনিয়নের,হাতিবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্ণা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী এলাকাগুলোর। তিস্তার ভাঙ্গনে এই এলাকাগুলোর শতাধিক পরিবার ইতোমধ্যে হারিয়েছে বসতভিটা। সেই সাথে শেষ সম্বল হারানোর পথে আরো হাজারো পরিবার।

এদিকে, তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে আয়তনে ছোট হয়ে আসছে পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন। হুমকির মুখে রয়েছে সরকারী গুচ্ছগ্রাম। শীঘ্রই দুর্দিন নেমে আসছে গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী ১৩০ পরিবারে।

তিস্তা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে ছোট হয়ে আসছে প্রায় ২৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ ইউনিয়নটি।তিস্তার করাল গ্রাসে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে আবাদি জমি, বিভিন্ন স্থাপনা ও বসতভিটা। মানুষজন হচ্ছেন নিঃস্ব। পানি উন্নয়ণ বোর্ড ভাঙ্গন ঠেকাতে ব্যবস্থা নিলেও তা কাজে আসছেনা।

গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা ৯৫ বছর বয়সী আব্দুল কাদের নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ১৩বার বাড়ী সরিয়েছেন। তার মতো অবস্থা আব্দুস সাত্তার সহ অনেকের। নিজ ভিটামাটি হারিয়ে ঠাঁই হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আশ্রায়ণ প্রকল্প দহগ্রামের গুচ্ছগ্রামে। এ গুচ্ছগ্রামটিতে নদী ভাঙ্গনের শিকার ১৩০ পরিবার বসবাস করেন।

কিন্তু তিস্তা নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে চলে এসেছে তাদের আশ্রয়স্থল গুচ্ছগ্রামে। ফলে তাদের দুঃশ্চিন্তার অন্ত নেই। এ গুচ্ছ গ্রামটি নদী গর্ভে চলে গেলে তাদের আর মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও থাকবেনা। পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়বেন তারা।

এদিকে, নদীতে জমিজায়গা বিলীন হওয়ার ফলে আয়তনেও ছোট হয়ে আসছে দহগ্রাম ইউনিয়নটি। ফলে এখানকার বসবাসকারী ২০ হাজার লোকের মধ্যে কাজের অভাব দেখা দিয়েছে।

ভাঙন কবলিত পরিবার গুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। একদিকে করোনা ভাইরাস এর কারনে লকডাউনে কর্মহীন অন্যদিকে তিস্তার ভয়াল থাবার ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তারা।

এমন অবস্থায় অবিলম্বে তিস্তা নদীর ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী সমাধান চান নদীভাঙ্গন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা।

জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহা(সহকারী কমিশনার) জানান, ইতোমধ্যে জেলার ৩ হাজার পরিবারের ১২ হাজার জনকে নগদ অর্থ সহযোগীতা করা হয়েছে।পুরো জেলায় ২২ হাজার পরিবারের মাঝে ২২০ মেট্রিকটন জিআর চাল বিতরণ করা হয়েছে।সেই সাথে ৭৬৮৪৩ টি পরিবারে ভিজিএফ এর আওতায় ৭৬৮ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে।এছাড়াও জেলার পাঁচ উপজেলায় বিতরণের জন্য ২৯৯ মেট্রিকটন জিআর চাল মজুদ রয়েছে।

প্রদীপ কুমার আচার্য্য/বার্তা বাজার/এসবি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর