অতি বৃষ্টিতে শরণখোলার ১৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি, কষ্টে দিন পার সাধারণ মানুষ

তিন দিনের টানাবৃষ্টিতে শরণখোলার ১৩ হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি। বৃষ্টির পানিতে উপজেলার সর্বত্র তলিয়ে রয়েছে। চরম কষ্টে রয়েছে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে এসব পরিবারে।

মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, দেড় হাজার মাছের ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। যার ক্ষতির পরিমান প্রায় ১০কোটি টাকা। কৃষি বিভাগ জানায়, আমনের বীজতলা, রোপা আউশ এবং সবজিসহ অন্যান্য মৌসুমী ফসল শতভাগই পানির নিচে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) বিকেলে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত শরণখোলা বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে তাৎক্ষনিকভাবে পাঁচ টন চাল বরাদ্দ দেন।

এসময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রায়হান উদ্দিন শান্ত, ইউএনও খাতুনে জান্নাত, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আজমল হোসেন মুক্তা তার সঙ্গে ছিলেন।

এছাড়া, উপজেলা প্রশাসন থেকে কন্ট্রেলা রুম খোলা হয়েছে। ৩৩৩ নম্বর ফোন করে কেউ খাদ্য সংকটের কথা জানালে তার বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। অপরদিকে, উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত পানিবন্দি পরিবারে শুকনা খাবার এবং রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন (বৃহস্পতিবার) খিঁচুড়ি বিতরণ করেছেন।

উপজেলার উত্তর কদমতলা গ্রামের জামাল চাপরাসী ও আনোয়ার হাওলাদার জানান, তাদের ঘরের মধ্যে কোমর সমান পানি। দুই দিন রান্না হয়না। ঘরের মধ্যে টং বানিয়ে তার ওপর থাকেন। চিড়া খেয়ে কাটছে তাদের দিন। ওই গ্রামের প্রত্যেকের বাড়িতে একই অবস্থা বলে জানান তিনি।

উত্তর সোনাতলা গ্রামের শাহ আলম ফকির জানান, বেড়িবাঁধের বাইরে উত্তর সোনাতলা আদর্শ গ্রামের ১২০ পরিবার পানিতে ডুবে আছে। তাদের ঘরে খাবার নেই। বাজার থেকে চিড়া কিনে ওই সব পরিবারে বিতরণ করেছেন তিনি।

রায়েন্দা বাজার শ্রমিক আ. লতিফ, ফুলমিয়া হাওলাদার, রুবেল ঘরামী জানান, তাদের হাতে কাজ নেই। ঘরে খাবার নেই। পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর। একইভাবে দুর্ভোগে রয়েছে উপজেলা সদরের কয়েকহাজার দিনমজুর, ভ্যানচালক, হোটেল শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ।

শরণখোলার বাসিন্দা শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ রিয়াদুল ইসলাম সোহেল জানান, পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে পর্যাপ্ত স্লুইস গেট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং যেসব গেট রয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে পরিচালনার অভাবে এই দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এসব কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই প্রতিবছর একই সংকটের মুখে পড়তে হচ্ছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. লাকিদুল ইসলাম জানান, পাউবোর ৩৫/১ পোল্ডারে শরণখোলায় ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ১৬টি ড্রেনেজ স্লুইস গেট এবং ১৫টি ফ্লাশিং স্লুইস গেট এবং শহর রক্ষাবাঁধের রায়েন্দা ফেরিঘাট থেকে বান্দাঘাটা পর্যন্ত ১১টি ড্রেন রয়েছে। যেহেতু বাঁধের কাজ এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ শেষ হয়নি।

তাই পানি নিষ্কাশনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। দুর্যোগমুহূর্তে জরুরী প্রয়োজনে পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির (ডব্লিউএমজি) কাছে কয়েকটি গেটের চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাতুনে জান্নাত বলেন, শরণখোলার ১৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসক পানিবন্দি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শ করে জরুরীভাবে পাঁচ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এছাড়া, ৩৩৩ নম্বরে কল দিলেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।

বাবুল দাস/বার্তা বাজার/টি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর