সড়ক দূর্ঘটনা থেকে মুক্তি চাই, নিরাপদ সড়ক চাই!

সড়ক দূর্ঘটনা আমাদের জাতীয় জীবনের একটি ভয়াবহ অভিশাপে মৃত্যুপুরী হিসাবে উপনিত হয়েছে।প্রতিদিন পত্রিকার পাতা ও টিভির পর্দায় কিংবা স্বচক্ষে দেখতে পাই সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াভহ চিত্র।

হৃদয় বিদারক প্রতিটি দূর্ঘটনাই কেড়ে নিচ্ছে হাজারো স্বপ্ন,কেড়ে নিচ্ছে শিশু, ছাত্র, যুবক, বৃদ্ধসহ নানা বয়সী মানুষের তাজা প্রাণ।

বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ সেন্টারের (এআরসি) গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। আহত হয় ৩৫ হাজার।

নিরাপদ সড়ক চাই-এর রিপোর্টাস অনুযায়ী,২০১৮ সালে ৩১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪৩৯ জন নিহত ও আহত হয়েছেন ৭৪২৫ জন। অন্য দিকে বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে প্রতি দশ হাজার যানবাহনে মৃত্যু ঘটে ৮৫.৬%।

রিপোর্ট অনুযায়ী আমাদের অনুমেয় যে,সড়ক দূর্ঘটনা বাংলাদেশকে মৃত্যুপুরী হিসাবে গড়ে তুলছে।

২০১৮সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে সহপাঠিদের মাধ্যমে শুরু হয় বাংলাদের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত বড় “নিরাপদ সড়ক চাই” আন্দোলন।

শিক্ষার্থীদের ৯দফা দাবির এই আন্দোলন এ রাষ্ট্রের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলাগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল।গাড়ি ও চালকের লাইসেন্স যাচাই,শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে যান চলাচলসহ নানান রীতি শিখিয়েছে শিক্ষার্থীরা।শান্তুিপূর্ন আন্দোলনে পুলিশ ও সরকার সমর্থীত সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নির্যাতন শুরু করে।ফলে,আন্দোলন আরো তীব্রতা দেখে দেয়।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেরর মুখে সরকার নতীস্বিকারে বাধ্য হন,পরবর্তীতে ৬ আগস্ট মন্ত্রীসভা একটি খসড়া ট্রাফিক আইন অনুমোদন করলে ৮ আগস্ট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।যদিও শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিসমূহ টালবাহানায় এড়িয়ে গেছে।কিন্তুু বছর না ঘুরতেই ফের ১৯মার্চ’১৯ রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রাস্তা পার হতে গিয়ে দু’টি বাসের মধ্যে পিষ্ট হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র আবরার আহমেদ।ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে শিক্ষার্থীরা।

তবে কি কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা ও দায়িত্বহীনতার মাশুল গুনতে হবে দেশ-জাতিকে?সড়ক দূর্ঘটনা থেকে উত্তরণ ও নিরাপদ যোগাযোগের কি কোন পথ নেই?উত্তর যদি হয়”হ্যাঁ-আছে”, তবে কেন তা গ্রহন করা হচ্ছে না?

সড়ক দূর্ঘটনা থেকে পরিত্রাণ ও নিরাপদ সড়কের জন্য অবিলম্বে আশু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রাহন করা হোক।

বাংলাদেশ সড়ক দূর্ঘটনা অন্যতম কারন অযোগ্য গাড়ী চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ী।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের হিসাবে ২০১৮ সালে দেশে চলমান বৈধ গাড়ির সংখ্যা ছিল ৩৫ লাখ ৪২ হাজার, কিন্তু বৈধ লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা ২৬ লাখ ৪০ হাজার। অর্থাৎ প্রায় ৯ লাখ গাড়ি লাইসেন্সবিহীন চালক দ্বারা চালিত হয়।আরো জানা যায়,দেশে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা ৪ লাখ ৯৯ হাজার।এই পরিসংখ্যান বলে দেয় সড়ক দূর্ঘটায় এই কারণটি কতটুকু দায়ী।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যায়,স্বল্প ঘুষে গাড়ী ও গাড়ী চালকের লাইসেন্স দেয়া হয়।এবং ট্রাফিক পুলিশ/দায়িত্বরত ব্যক্তিকে ২০-১০০টাকায় রাস্তা-ঘাটে যেখানে সেখানে যাত্রী উঠা-নামা করা হয়।যা জ্যাম ও দূর্ঘটনার কারণ হিসাবে দাঁড়ায়।তাই সকল দুর্ণীতি মুক্ত হয়ে লাইসেন্সবিহীন চালক ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

শক্ত ট্রাফিক আইন ও তার কার্যকরী প্রয়োগ করতে হবে।অনেক সময় দেখা যায় ঘুষের কাছে আইন নত হয় কিংবা আইন খাতা-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে ফলে সকলেই বেপরোয়া হয়।এদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

নিয়মিত রাস্তাঘাট সংস্কার ও জনবহুল স্থানে অভারব্রীজ তৈরী করতে হবে।অনেক জায়গায় দেখা যায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে রাস্তা-ঘাট এতটাই নিম্নমুখী যে প্রায় দূর্ঘটনা ঘটছে,এসব হিংসা ত্যাগ করতে হবে।

চালকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে।গাড়ীর সহকারী দিয়ে কখনোই ড্রাইভিং করতে দেয়া যাবেনা। ওভারলোডেড ও দ্রুতগামী গাড়ি নিয়ন্ত্রণ টিকা, ট্রাফিক সিগনাল দিতে হবে।

দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় সড়কে সিসি ক্যামেরা বসানো,রাস্তার দুই পাশ থেকে বাজার উচ্ছেদ করে রাস্তার ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।

জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সড়ক নিরাপত্তাজনিত শিক্ষা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সর্বপুরী ট্রাফিক পুলিশসহ সকলের জবাবদিহিতা ও দায়িত্ববোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সড়ক দূর্ঘটনার প্রতিকার করতে হবে,করতে হবে নিরাপদ চলাচলের যোগসূত্র।

লেখক: ফেরদৌস আলম
বজরা,উলিপুর(কুড়িগ্রাম),বাংলাদেশ।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর