অদম্য প্রতিভাবান চিত্রশিল্পী সাতক্ষীরার তরুণ কান্তি সরকার

শেখ আমিনুর হোসেন, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: আমাদের সমাজে এখনও এমন কিছু মানুষ আছেন যার সৃষ্টি আমাদের দারুণভাবে আদোলিত করে এবং সমাজ ও কালের জন্য হয়ে ওঠে অনন্যা দৃষ্টান্ত। নিরব নিভৃত সজন করে যান কিছু সৃষ্টিকর্ম। তেমনি একজন সৃজনশীল, নিভৃতচারী তরুণ চিত্রশিল্পী ও অভিনেতা সাতক্ষীরার আশাশুনির তরুণ কান্তি সরকার। প্রগতিশীল অভিনয় ও নিপুণ সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে তিনি হিংসা বিদ্বেষ ও সামাজিক ব্যাধি সহ অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সু-দঢ় সামাজিক সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন সমাজে।

প্রগতিশীল সৃষ্টিতে অদম্য অভিনেতা ও চিত্রশিল্পী তরুণ কান্তি সরকার, প্রায় দশ বছর যাবৎ ঢাকা আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলা ও অমর ২১শে গ্রন্থমেলায় মানুষের সরাসরি ৫-১০মিনিটে হুবহু প্রতিকৃতি এঁকে আসছেন। যেকোন মাধ্যম দিয়ে তিনি ছবি আঁকতে পারেন, ক্যানভাসের তৈরী তল চিত্র” প্রতীক্ষা ” তাঁর জলন্ত উদাহরণ। অনলাইন ইটারন্যাশনাল আর্ট কম্পিটিশনে ”প্রতীক্ষা” নামের ছবি এঁকে পেয়েছেন বিশেষ সম্মাননা সনদ। এছাড়াও বিভিন্ন সময় তিনি তাঁর অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য পুরস্কারও সনদে ভূষিত হয়েছেন।
তরুণ কান্তি সরকার আটের সব সাইড যেমন বিচরণ করার চেষ্টা করেছেন তেমনি রঙেও। এ বিষয় নিজের মেধাকে আরো পরিপূর্ণ করার জন্য তিনি ফাইন আটের উপরেও পড়াশুনা করেছেন। তাহার চিত্রকর্ম যৌথ প্রদশর্নীও করেছেন জাতীয় চিত্রশালায়। তাঁর আঁকা ”রহস্যময় মানব, রহস্যময়ী মানবী”, ”প্রতীক্ষা”, ”ক্ষুধা”, ”দি ইসমাইল” খুবই জনপ্রিয়।

এই তরুণ চিত্রকর ও অভিনেতা ‍তরুণ কান্তি সরকার সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার পুইজালা গ্রামে জন্ম। তিনি শিশু শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় ক্লাশে ব্লাকবোর্ডে শ্রেনী শিক্ষক দেব স্যারের আঁকা লতা-পাতা, ফুল-ফল, পুশু-পাখি দেখে দেখে ছবি আঁকার প্রতি তার আগ্রহ জন্মে। তার এ আগ্রহ থেকেই হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের তরুণ আঁকিয়াদের মধ্যে অন্যতম। ছেলেবেলায় এলাকার দোকানপাটের বাৎসরিক হালখাতা অনুষ্ঠানের জন্য কাগজে আলতা দিয়ে দৃষ্টি নন্দন “শুভ হালখাতা” লিখে সকলের দৃষ্টিতে আসেন এবং সকলের প্রসংশায় ভাসেন। মূলত এই শুভ হালখাতা লেখার মাধ্যমেই তার চিত্রাংকন জগতে আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেই থেকেই ছবি আঁকা হয় ওঠে তার ধ্যান ও জ্ঞান। ছবি আঁকার প্রতি গভীর ভালাবাসার কারনে তিনি খাবার কেনার পয়সা দিয়ে রং তুলি কিনতেন।

তিনি এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন ও সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন এবং উচ্চ ডিগ্রীর জন্য তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। বাংলা সংস্কৃতি ও ভাষার প্রতি প্রবল অনুরাগের কারণে তিনি বাংলা বিষয়কেই তার পাঠ্য বিষয় হিসাবে বেছে নেন এবং বাংলা বিষয় তিনি কৃতিত্বের সাথে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তরুণ একই সঙ্গে অভিনয় এবং ছবি আঁকা দুটাতেই পারদর্শী হতে থাকেন সমান তালে।

তিনি নিজেকে যেমন তিল তিল গড়ে তুলেছেন দক্ষ চিত্রশিল্পী হিসাবে তেমন হয়ে উঠেছেন একজন অভিনতা। এ পর্যন্ত তিনি অনেক নাটক সিনমায় ও টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন। শুরুতেই বিটিভিতে ম্যাগাজিন “ত্রিভূন ঈদ আনন্দ ” এ কমাডিয়ান পুলিশ চরিত্র অভিনয় করেন। এর পর সৃষ্টি আর্ট লিঃ. এর প্রয়োযোজনায় অডিশনের মাধ্যমে ৬টি ঐতিহাসিক নাটকে কাজ করার সুযোগ পান। সেগুলো হলো- সমসের গাজী, আলাল- দুলাল, মহামায়ের প্রেম, মহাস্থানগড়, রামসাগর ও শাহজালাল। কাজ করেন একুশ টিভিতে আলভী হায়াৎ রাজৈর চার্জশীট রিপোর্টে কেন্দ্রীয় চরিত্র, পরবর্তিতে ডিবি সিরিয়াল সহ অনেক সিরিয়ালে কাজ করেন কমবেশ এবং ডকুমেটারী, শর্টফিল্ম, বিজ্ঞাপন, ম্যাগাজিন, সিনেমা, টেলিফিল্ম পা রাখেন। পরিচালক দেওয়ান নাজমুলের হাজার পর্ব “সুয়ারানী -দুয়ারানী “নাটকে কাজ করেন, কাজ করন একই পরিচালকের ” ক্ষুদিরাম” সিনেমায়।

তরুণ কান্তি সরকার বর্তমান সময় নিজের “আর্ট সার্কেল” নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন এবং আটের শিক্ষকতা করছেন। তিনি তার শিল্পকর্মের মাধ্যমে সব আর্টকে বৃত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ বুঝিয়েছেন। সেট ডিজাইন কাজ সহ ঘরে বসে তিনি ইলাস্ট্রেশন, লঘু ও প্রচ্ছদও আঁকেন এই শিল্পী। তিনি সকল আটের্র মধ্যে মানুষের প্রতিকৃতি আঁকতে বেশি আনন্দবোধ করেন। তার আঁকা-আঁকির হাতটা অনেক সূক্ষ ও নিখুত এক চান্সে বলা যেতে পারে। তাঁর বিশেষ গুণের কারনেই – “রহস্যময় মানব”- “রহস্যময়ী মানবী”- “প্রতীক্ষা”- “ক্ষুধা”- দি ইসমাইল”, এর মতো সারাজাগানো ছবি গুলোর জন্ম হয়েছে।

এখানেই শেষ নেয়, ফিল্ম অভিনয় ও চিত্রাংকনের পাশা-পাশি মঞ্চ নাটকের প্রতিও ছিল তাঁর বিশেষ দুর্বলতা। নিজের দল “নাট-নালদা” এর জন্য ২৭বার মঞ্চস্থ নীল উপাখ্যান নামক নাটকটিতে তিনি কমাডিয়ান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। গাজী রাকায়েত, আসমা আক্তার লিজা ও মোমেনা চৌধুরীর সাথে অতিথী শিল্পী হয়েও অভিনয় করেছেন। সাতক্ষীরা জেলার নাট্য সংগঠন থেকে পেয়েছেন বর্ষসেরা কমাডিয়ান অভিনেতা হিসেবে পুরুস্কার ও সনদ। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের জাতীয় পাপোট দল, আবৃত্তি একাডেমি ও উজান গানের দলেও নিয়মিত সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।

তরুণ চিত্রশিল্পী ও অভিনেতা তরুণ কান্তি সরকার জানান, শিল্পচর্চার জন্য যে ধরনের অর্থ ও পরিবেশ দরকার, তা কখনোই আমার ছিলনা । নানা প্রতিকুলতার মধ্যে কাজ করতে হয়েছে। কখনো হাল ছাড়িনি । সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমি-শুধু টাকার বিনিময় নয়, বরং অধিক ভালবাসা আর ব্যাপক চর্চার কারনে আঁকা-আঁকিতে আমি এ পর্যায় পৌঁছেছি। আর অভিনয়টাকেও আমি নেশা হিসাবে গ্রহন করেছি।

ব্যস্ততম এই চিত্রশিল্পী আরো বলেন, শিল্পীদের আলাদা ছত্রছায়া খুবই দরকার । শিল্পীর দেশ শিল্পী বাঁচলে দেশ আরও সুন্দর ও এগিয়ে যাবে । তবে আমরা অবগত আছি যে, কিভাবে শিল্প উন্নয়ন বিকাশ ঘটানো যায় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ব্যাপক চেষ্টা চালাচ্ছেন, এজন্য তাকে আমি শ্রদ্ধার সাথে সাধুবাদ জানাই। সামনে কোন কাজ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদের আগে ৪টি শর্ট ফ্লিম শেষ করেছি সামনে -২টি সিনেমা, ১টি টেলিফ্লিম ও ১টি বিজ্ঞাপনের কাজের কথা চলছে। পরিশ্রমী, আত্মবিশ্বাসী ও ধর্যশীল প্রতিভাবান এই তরুণ কান্ত সরকার সকলে সহযোগিতা কামনা করে এবং ক্যারিয়ারকে আরো এগিয়ে নিতে চান।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর