কেরানীগঞ্জে লকডাউন নিয়ে চলছে চোর-পুলিশ খেলা!

কঠোর লকডাউনের ৪র্থ দিনে কেরানীগঞ্জে ঢিলেঢালা ভাব দেখা গেছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য মানুষ চলাফেরা করছে। কদমতলী বাবুবাজার সেতু ও পোস্তগোলা সেতুর হাসনাবাদ এলাকায় দেখা যায়, শহরের প্রবেশ মুখে পুলিশের চেকপোস্টের কিছু দূরে ইজিবাইক থেকে যাত্রী নামানো হচ্ছে।

তারপর তারা পায়ে হেঁটে শহরে ঢুকে রিকশায় গন্তব্যে যাচ্ছে। ঈদের আগে যারা শহর ছেড়েছিলেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তারাও ফিরতে শুরু করেছেন। সড়কে ব্যক্তিগত যানবাহন, মোটরসাইকেল রিকশা ভ্যান তুলনামূলক বেড়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার দোকানপাট খোলা রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। দোকানে সাটার অর্ধেক বন্ধ রেখেই বেচা-কেনা করছেন দোকানীরা।

অনেকে আবার সাটার বন্ধ করে কর্মচারীকে দোকানের সামনে দাড় করিয়ে রাখে ক্রেতা এলে সাটার খুলে ভিতরে তাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট দেখলে দোকানপাট বন্ধ হচ্ছে, লোকজন চলে যাচ্ছে আবার একটু পর দোকান খুলে দেওয়া হচ্ছে।

ছবি- বার্তা বাজার

অন্যদিকে কেরানীগঞ্জজুড়ে রয়েছে ঈদের আমেজ। করোনা মহামারির চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন। কেরানীগঞ্জের বেশিরভাগ বিনোদনকেন্দ্রগুলো সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধ থাকলেও শাড়িঘাট, তুলশিখালী ব্রীজ, দলেশ্বরী ব্রিজের মতো দর্শনীয় এবং উন্মুক্ত স্থানগুলোতে ঘুরতে যাচ্ছে কর্মচঞ্চলতার ফাঁকে একটু ফুরসত পাওয়া উপজেলাবাসী।

তাই বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে রিকশা, অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ। ম্যাজিষ্ট্রেট বা পুলিশ এলেই সবাই দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। আবার কিছুক্ষণ সেই আগের মতই জড়ো হয়ে শুরু করে। তবে সাধারণ মানুষের চলাচলে করোনা সংক্রমণ আবারও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউনের প্রথম দিন সকাল থেকেই ঢাকার কেরানীগঞ্জে কঠোর অবস্থানে রয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

দুপুরে সরেজমিন উপজেলার শুভাঢ্যা, জিনজিরা, কদমতলী, হাসনাবাদ ও শাড়ীঘাট এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি দেখা গেছে। চেকপোস্ট বসিয়ে জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে পুলিশ। তবে মানুষের অহেতুক চলাচল বেড়েছে। মূল সড়ক ছাড়াও পাড়া-মহল্লায় অলিগলিতে ইজিবাইক, রিকশাভ্যান ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে।

জানা যায়, সারা দেশে করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ও মৃত্যু রোধে গত শুক্রবার থেকে সরকার ঘোষিত কঠোরতম বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে।

কেরানীগঞ্জ উপজেলায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৩৭ জন, এর মধ্যে সুস্থ্য হয়েছে ২ হাজার ৪৩৬ জন, মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের। হোম আইসোলেশনে আছে ৪৯২ জন ও হাসপাতালে ভর্তি আছে ৬০ জন।

এদিকে কেরানীগঞ্জে উপজেলায় বিধিনিষেধ অমান্য করায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৪ দিনে ২৭১টি মামলায় ১ লক্ষ্য ৮২ হাজার ৬শ’ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ৬ জনকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা সহায়তা প্রদান করেন।

লকডাউনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেব নাথ বার্তা বাজারকে বলেন, দুই সাপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ বাস্থবায়নে উপজেলা প্রশাসন প্রথম দিন থেকেই প্রায় প্রতিদিনই মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

কেরানীগঞ্জ যেহেতু বড় একটি উপজেলা তাই পুরো উপজেলাকে আমিসহ আরও দুইজন এসিল্যান্ড মিলে তিনটি জোনে ভাগ করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মোবাইল কোটের অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি। যে সব এলাকায় জনসমাগম বেশি রয়েছে সে এলাকা গুলোতে প্রশাসনিক নজরদারী আরো বাড়ানো হয়েছে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে নজরদারী আরো বাড়ানো হবে।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। গত ৩ দিনে আমরা প্রায় ২২৫টির মতো মোবাইল কোর্টের মামলা করেছি। যেখানে ১ লক্ষ্য ৪৬ হাজার ৭শ’ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ৫ জনকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।

এসময় তিনি আরও বলেন, সবাই নিজে থেকে সচেতন না হলে জেলা জরিমানা করে করোনার সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না। উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‍্যাব কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কেউ বাহিরে বের হলে উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারলে তাকে যেতে দেয়া হচ্ছে।

অকারণে বাহিরে বের হলে তাদেরকে মামলা দেয়া হচ্ছে। আর বাজারগুলোতে যেনো স্বাস্থ্যবিধি মান হয় এ ব্যাপারে বাজার কমিটিগুলোকে বলা হয়েছে। তারপরও যদি কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানে তাহলে আমরা তাদেরকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবো।

রানা আহমেদ/বার্তা বাজার/এস.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর