বিক্রি হয়নি শাকিব-ডিপজল আর মানিক

করোনা আর লকডাউনের ব্যাপক প্রভাব পরেছে কোরবানি পশু কেনা বেচার হাটে। এতে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বড় গরু লালন পালনকারী খামারীরা। এর শিকার হয়েছেন টাঙ্গাইলের দুই তরুণ শিক্ষার্থী খামারি উদ্যোক্তাও। সঠিক দাম না পাওয়ায় গেল কোরবানির হাটে বিক্রি হয়নি টাঙ্গাইলের দুই তরুণ উদ্যোক্তা ও খামারি শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ক্রেতা আকৃষ্টে শাকিব খান, ডিপজল আর মানিকের মত ষাঁড়।

এর ফলে ষাঁড়গুলো লালন পালনের ব্যায়বহনসহ পূণরায় বিক্রির শঙ্কায় রয়েছেন এই খামারীরা। তবে অবিক্রিত ষাঁড়গুলো লালন পালনে খামারিদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন প্রাণীসম্পদ বিভাগ কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, ২০১৭ সালের শেষের দিকে তিনটি গাভি দিয়ে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার মিরিকপুর গ্রামের কলেজছাত্র ও তরুণ উদ্যোক্তা জোবায়ের ইসলাম জিসান শুরু করেন গরুর খামার। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ২৫টি ষাঁড় আর গাভি। খামার শুরু পর গত দুই বছর সাত মাস আগে তার খামারে জন্মায় ফ্রিজিয়াম জাতের দুটি ষাঁড় গরু। যার একটি নাম রাখা হয় শাকিব খান আর অন্যটির নাম ডিপজল। শান্ত প্রকৃতি ও সাদা রঙের ষাঁড়টি নাম দেয়া হয় শাকিব খান আর কালো রঙয়ের ষাঁড়টির নাম ডিপজল। শাকিব খান ও ডিপজল দুটি ষাঁড়ই লম্বায় সাত ফিট। শাকিবের বর্তমান ওজন প্রায় ৩০ মণ আর ডিপজলের ওজন ৩১ মণ এবারের কোরবানি ঈদে ষাঁড় দুটি বিক্রি জন্য দামও হাঁকান খামারী। যার মধ্যে শাকিবের দাম ১৩ আর ডিপজলের দাম ১২ লাখ টাকা।

অপরদিকে জেলার দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের ভেঙ্গুলিয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হামিদ আলীর অনার্স পড়ুয়া কন্যা হামিদা আক্তার। দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করে বড় করে তোলা বিশালাকৃতির গরু দুটি বর্তমান ওজন ৩৬ ও ৩৫ মণ। যাদের নাম দিয়েছেন মানিক-রতন। চার বছর বয়সী ষাঁড় দুটির মধ্যে ১৫১০ কেজি বা ৩৮ মণ ওজনের মানিকের দাম হাঁকানো হয় ১৪ লাখ টাকা আর ১৪৮০ কেজি ৩৫ মণ ওজনের রতনের দাম হাঁকানো হয় ১৩ লাখ টাকা। গেল কোরবানীর গাবতলী হাটে ষাঁড় দুটির মধ্যে মাত্র ৩ লাখ ৭০ হাজার বিক্রি করা হয়েছে রতনকে।

এ নিয়ে বাসাইলের ষাঁড় শাকিব খান আর ডিপজলের মালিক তরুণ খামারী জোবায়ের ইসলাম জিসান বলেন, ষাঁড় দুটি বিক্রির জন্য কোন হাটের নেননি তিনি। তবে ঈদের আগে ষাঁড় দুটি দেখতে ও কিনতে বিভিন্ন ধরণের ক্রেতা এসেছেন তার বাড়িতে। এদের কয়েকজন ওজনে ৩০ মণ হলেও রঙের কারণে শাকিব খানের দাম বলেছিলেন ৮ লাখ আর ৩১মণ ওজনের ডিপজলের দাম বলেছেন ৭ লাখ। তবে এ সময় ক্রেতার যাতায়াত আর ষাঁড় দুটি বেশি দামে বিক্রির আসায় বিক্রি করেননি তিনি। এরপর আর আসেনি কোন ক্রেতা। এবছর করোনা মহামারির কারণে বড় গরুর ক্রেতা ছিল কম। এছাড়াও লকডাউন শেষে হাটে নেয়া কষ্টকর হওয়ায় বিক্রি করা যায়নি বেশির ভাগ খামারেরই গরু। এ কারণে এবছর গরুর ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তিনি বলেন, আমার ষাঁড় দুটির বয়স কম আর সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে লালন পালন করায় কমপক্ষে আরো একবছর রাখা সম্ভব হবে বলেই কম দামে বিক্রি করেনি। আগামী ঈদে ষাঁড় দুটি বিক্রির কথা ভাবছেন তিনি।

অপর খামারি উদ্যোক্তা ও অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী হামিদা আক্তার বলেন, ঈদে বেশি দামে বিক্রির আসায় আমি আমার অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় মানিক ও রতনকে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতি ব্যবহারে লালন পালন করেছি। দাম কম পাবো বলে গত বছরের ঈদেও আমি ষাঁড় দুটি বিক্রি করিনি। এ বছর আমি আমার চার বছর বয়সী ষাঁড় দুটির মধ্যে ১৫১০ কেজি বা ৩৮ মণ ওজনের মানিকের দাম চেয়েছি ১৪ লাখ টাকা আর ১৪৮০ কেজি ৩৫ মণ ওজনের রতনের দাম চেয়েছি ১৩ লাখ টাকা। তবে এত বড় গরু বাড়ি থেকে বিক্রি সম্ভব না হওয়ায় ষাঁড় দুটি নিয়ে রাজধানীর গাবতলী হাটে যাই আমি। তবে এ হাটে বড় গরুর ক্রেতা ছিল কম। তিনদিন হাটে অপেক্ষা করে সবচেয়ে বেশি দাম ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকায় আমি আমার ষাঁড় রতনকে বিক্রি করতে পারি। তবে এই দামে ষাঁড়টি বিক্রি করার ইচ্ছা আমার ছিলনা। শুধু আমার ব্যবসা টিকিয়ে রাখাসহ পরিবারের খরচ যোগান দিতে ওই দামে ষাঁড়টি বিক্রি করা হয়েছে। ক্ষতি হলেও কিছুই করার ছিলনা। আগামী ঈদে আমার অবিক্রিত ষাঁড় মানিককে আরো ভালো দামে বিক্রি করবো।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি জানান, গাবতলী হাটে ২৫ হাজার টাকায় গরুর বিক্রির ভিটি ভাড়া দেয়া হলেও গরু বাধার খুটি ছাড়া কিছুই দেয়া হয়না। এমনকি গরুকে পানিও কিনে খাওয়াতে হয়। তিনি বলেন, গাবতলী হাটের ভিটি ভাড়া ২৫ হাজার, ফ্যান ভাড়া ২ হাজার, যাতায়াতের গাড়ী ভাড়া ২০ হাজার, গরু খাওয়াসহ আনুসাঙ্গিক খরচ দিয়ে তার প্রায় খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। এ সময় তিনি আরো জানান, গরু বিক্রেতাদের স্বার্থে ভিটি ভাড়া কমানোসহ আনুসাঙ্গিক যোগান দিতে হাট বরাদ্দ কমিটির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

এ ব্যাপারে দেলদুয়ার প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা.এনায়েত করিমের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও বাসাইল উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রৌশনী আকতার বলেন, জিসানের খামারে ষাঁড় দুটির বয়স কম ও ষাঁড় দুটি লালন পালন হয়েছে দেশীয় খাবারে। এ কারণে ওই ষাঁড়টি পালনে তেমন একটা সমস্যার সম্মুখিন হবেন না ওই খামারি। এরপরও জিসানের ষাঁড় দুটি পালনে পরামর্শ দেয়াসহ নিয়মিত ভ্যাকসিন ও ওষুধ সেবার সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

হাসান সিকদার/বার্তাবাজার/পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর