যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে গৃহবধূর মামলা

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন যাবত শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা ও পরবর্তীতে প্রতারণা, এবং নির্যাতনের অভিযোগ এনে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম ভুঁইয়া টিপুর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন রেহানা আক্তার সুমী নামের এক গৃহবধূ।

যুবলীগ নেতা দিদারুল আলম টিপু, তার স্ত্রী লাভলী সহ মোট সাত জনকে আসামি করে গত ১৮ জুলাই ফেনী মডেল থানায় অভিযোগটি দায়ের করেন রেহানা আক্তার সুমী নামের ওই গৃহবধূ।

মামলার এজাহারে সুমী উল্লেখ্য করেন, ৩ জুন দিদারুল আলম টিপু তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পৌরসভার পুর্ব উকিল পাড়া পেট্টোল বাংলা কবির আহাম্মদের ভাড়া বাসায় নিয়ে এসে দীর্ঘ দুই মাস যাবত তালাবদ্ধ করে আটক করে রাখে। পরবর্তীতে তাকে সেই বাসা থেকে ফেনী শহরের পুরাতন পুলিশ কোয়ার্টার টিপুর গাড়ীর চালক ইমনের বাসায় নিয়ে গিয়ে ৬ মাস রাখা হয়।

পরবর্তীতে আবারও পেট্টোল বাংলার বৃত্তিকা ভবন নামের একটি বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তাকে নিয়ে উঠে টিপু। সেখানে চার মাস তার সাথে নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক করে বলে অভিযোগ করেন সুমী। এর ফলে সুমী দুই দফায় গর্ভধারণ করলে দুইবারই তাকে জোরপূর্বক ওষুধ খাইয়ে গর্ভপাত করানো হয়,

এরপর তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে গত ১১ জুলাই দিদারুল আলম টিপু , তার স্ত্রী লাভলী, মোঃ হানিফ বাবুল, সবুজ প্রকাশ লাল সবুজ, সেলিম, মোঃ সমির ও মাসুদ রানা টিপুর পরিবারের সহযোগিতায় সুমীকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ তার।

এদিকে একই অভিযোগ এনে গতবছর ঘোপাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল হক মানিকের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা দায়ের ও সাংবাদিক সম্মেলন করেন এই গৃহবধূ সুমী।

সেখানে তিনি দাবী করেন দাম্পত্য কলহ ও পারিবারিক কলহের কারণে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মানিকের শরণাপন্ন হয়েছিলেন তিনি,এর পর থেকেই মানিক তাকে বিয়ের প্রলোভনে দেখিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাসাভাড়িতে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে বলে তখন অভিযোগ করেছিলেন সুমী। একপর্যায়ে তাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মানিক চট্টগ্রামে পুলিশের যোগসাজশে ইয়াবা দিয়ে সুমীকে ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করানো হয় বলেও অভিযোগ তুলেন সুমী। সেদিন সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সাংসদ সহ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি মামলাটির তদন্ত দায়িত্বভার সি আই ডি তে হস্তান্তর করারও দাবী জানান।

তবে গত গত ১৮ জুলাই টিপুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে তিনি মানিকের বিরুদ্ধে করা মামলাটি টিপু ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন ভাবে প্রলুব্ধ করে তাকে দিয়ে করাতে বাধ্য করায় বলে জানায় সে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা টিপু বিষয়টিকে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট দাবি করে বলেন, ওই মেয়েটি এর আগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মানিকের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনে মামলা ও সাংবাদিক সম্মেলন করেন। চেয়ারম্যান মানিকের সাথে আমাদের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থাকায় সে মানিকের প্রতিপক্ষ হিসেবে আমাদের খুঁজে বের করে আমাদের শরণাপন্ন হয় আশ্রয় চায়।

পরবর্তীতে আশ্রয় দিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম সহযোগীতা দেওয়ার পর তার গতিবিধি ও চালচলন সন্দেহজনক মনে হলে আমরা তার থেকে আস্তে আস্তে সরে যাই। আমি আসন্ন ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মানিকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করবো শুনে সে পুনরায় মানিকের সাথে যোগাযোগ করে তার সাথে হাত মিলিয়ে আমার কাছে টাকা দাবী করে। বিভিন্ন সময় মোবাইল করে টাকা দাবী করে বিরক্ত করতে থাকে। একপর্যায়ে আমার স্ত্রী এতে বিরক্ত হয়ে তাকে আমরা যে ভাড়া বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলাম সেখান থেকে বের করে দেয়। এর পর থেকেই সে বিভিন্ন ভাবে আমার নামে কুৎসা রটাতে শুরু করে। বর্তমানে সে চেয়ারম্যান মানিকের আশ্রয়ে চট্টগ্রাম আছে।

নিজের বিরুদ্ধে এমন মানহানিকর কুৎসা প্রচারের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান টিপু।

এদিকে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী মডেল থানার ওসি নিজাম উদ্দিন জানান, অভিযোগ অনেকের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে। যাচাই-বাচাই করে অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর