৭৪ বছর বয়সেও বয়স হয়নি গাঠু রামের

৪৭ শের দেশ ভাগের সময় জম্ম গাঠু রাম রায়ের। সেই হিসাবে পার করেছেন ৬ যুগের বেশি সময়। বয়সের ভারে শরীরে চামড়াও লুতিয়ে গেছে তার। ঠিকমতো হাটতে ও কথা বলতেও পারেন না। কথা বলতে গেলে গলার মধ্যে আটকিয়ে যায়।

গাঠু রাম রায়ের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৫ জুলাই। সেই হিসাবে বর্তমান বয়স ৭৪ বছর। এ বয়সেও কপালে জুটেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড। জনপ্রতিনিধিরা তাঁকে বলছে বয়স হয়নি এখনো তার।

গাঠু রামের বাসা দিনাজপুরের সদর উপজেলার ১ নং চেহেলগাজী ইউনিয়নের বড়াইল গ্রামের বনকালি (হটাৎ পাড়া) এলাকায়। গাঠু রামের দুই ছেলে। বড় ছেলে কেতু রায় আটো রাইস মিলে দিনমুজুরের কাজ করেন। আর ছোট ছেলে শষিম রায় ভ্যান চালক। গাঠু রাম রায় বলেন, মোর বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়নি। মোর নাকি এখনো বয়স হয়নি মেম্বারলা কহচে।

সরজমিনে গাঠু রামের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির সকালে ছোট ছেলের বাসার সামনে বসে চেয়ে আছেন রাস্তার শেষ দিকে। রাস্তার সাথে জীবনের শেষ সীমানায় যে তিনিও। আমরা আসছি শুনে মিটিমিটি পায়ে ফিরলেন এক মিনিটের রাস্তায় ৪ মিনিটি সময় নিয়ে। আমাদের দেখেই এক মিষ্টি হাসি। বড় বউমাকে ডেকে আমাদের বসার চেয়ার দিতে বললেন। টিনের বেড়া দেওয়া গোয়াল ঘরের পাশের ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন গাঠু রাম। চলাচল করতে এক মাত্র ভরসা সাথে থাকা একখানা বাসের লাঠি। কেমন আছেন বললে, গাঠু রামের সহজ উত্তর ভগবান যেমন রাখছে।

গাঠু রাম রায়ের ছোট ছেলে শষিম রায় বলেন, আব্বার কত বয়স হলে কার্ড পাবে। যা বয়স হয়েছে কত দিন বাঁচবে আর। ঠিক মতো হাটিবাউ পারচেনা। আম্মা নাকি কাবাক টাকাও দিছে দুই হাজার, তাহতো কার্ড হচেনি। এই করোনায় সময়ও কোন কিছু পায়নি। চেয়ারম্যান মেম্বারলা যদি না করে দেয়ে তাহলে হামরা কার কাছে যামো।

বয়স্ক ভাতার কার্ড পাবেন না কোন ব্যক্তি এমন নিয়মের দিকে এক পলক চোক বুলালে বুঝা যাবে গাঠু রাম রায় কার্ড পাওয়ার যোগ্য কিনা। সমাজসেবার ওয়েব সাইডের তথ্য মতে, সরকারি কর্মসচারী পেনশনভোগী হলে, দুঃস্থ মহিলা হিসেবে ভিজিডি কার্ডধারী হলে;অন্য কোনোভাবে নিয়মিত সরকারী অনুদান/ভাতা প্রাপ্ত হলে; কোনো বেসরকারি সংস্থা/সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান হতে নিয়মিতভাবে আর্থিক অনুদান/ভাতা প্রাপ্ত হলে। এসব নিয়মের ভিতরে না পড়রে কোন ব্যক্তি বয়স্ক ভাতার কার্ড পাবেন।

এ বিষয়ে ১ নং চেহেলগাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান বাদশা বলেন, আমার জানা ছিল না তার সম্পর্কে। করোনার শুরু থেকে আমি মাঠে আছি। মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করতেছি। আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি দুইদিন পড়ে এলাকায় যাবো। এলাকায় গেলে আমি নিজে গিয়ে তার বাসায় বসে তার ভাতার কার্ডের কাজ করে দিবো।

১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে যেখানে জন প্রতি ১০০ টাকা মাসে ভাতা দেওয়া হতো সেখান বর্তমান সরকারের সময়ে২০২০-২১ অর্থবছরে জন প্রতি ৫০০ টাকায় উন্নতি করা হয়েছে।১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে বার্ষিক বাজেটে বরাদ্য ছির ১২.৫০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ আর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।

দিনাজপুর সদর উপজেলার নিবার্হী অফিসার মর্তুজা আল- মুঈদ বলেন, আমার চেষ্টা করছি সদর উপজেলার একশ শতাংশ বয়স্ক ভাতা কার্ড বাস্তবায়ন করতে। সদর উপজেলাতে ৬৫ বছরের উপরে কোন ব্যক্তি থাকলে তার আইডি কার্ড নিয়ে আমার কাছে আসলে আমি তার নাম তালিকায় যুক্ত করার চেষ্টা করবো।

বার্তাবাজার/পি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর